You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: সোমবার ২২শে মাঘ, ১৩৭৯ ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

আজ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ

আজ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। সাতই মার্চ অনুষ্ঠিতবা বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সহস্রাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র পেশ করবেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তাদের মনোনীত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন। গত ১লা ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের তিনশ’টি আসন এর জন্য তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন। জাতির জনক, সংগ্রামী এই গণ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা সহ দেশের তিনটি জেলার চারটি আসনে দলীয় টিকিটের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মোজাফফর পন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এ পর্যন্ত দুশো ছাব্বিশটি আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন। আরো কিছু আসলে তারা তাদের দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে দলীয় সূত্রে প্রকাশ। এছাড়া মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ছ’পার্টি জোট দু’শো ত্রিশটি আসনে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তিনশ’টি আসনে এবং বাংলাদেশের কম্যূনিষ্ট পার্টি সর্ব সাকুলো চারটি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। ছ’পার্টি জোটে সমঝোতার অভাবে বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দলগুলো এই নির্বাচনী আসনগুলিতে একটা সমঝোতায় আসতে পারবে বলে আশা করছে।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ন’মাস স্থায়ী একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। সেই সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জল্লাদের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে এদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেছিলেন নজিরবিহীন স্বল্পসময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রণীত শাসনতন্ত্রের আওতায় অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর সেই স্বপ্নই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। রাষ্ট্রীয় মূলমন্ত্র হিসেবে আমরা যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ আগামী সাধারণ নির্বাচনে তারিখ অগ্নিপরীক্ষা হয়ে যাবে। জনগণের রায় নিয়ে জনগণের ইচ্ছা এবং আকাংখার প্রতিধ্বনিকারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান শাসন ক্ষমতার অধিকারী হবেন।
আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘকাল যাবত সেই গণশাসনের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নানা নির্যাতন এবং অত্যাচারের মধ্যেও সংগ্রামের পতাকা বহন করেছে। সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী এই সুমহান সংগঠন স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশের পূর্ণ গঠন এবং জাতীয় অগ্রগতিতে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে। জনগণের আস্থা যেমন রয়েছে এই সংগঠনের উপর অগাধ, তেমনি জনগণের উপর রয়েছে আওয়ামী লীগের দায়-দায়িত্ব। সেই দায়-দায়িত্ব কে সামনে রেখে নির্বাচনে সামনে একটা সুষ্ঠু বক্তব্য রেখে তারা অগ্রসর হচ্ছেন। লক্ষ্য গণশাসনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি তথা মুজিববাদী সমাজ ব্যবস্থা। জনগণ তাদের সে বক্তব্যকে গ্রহণ করবেন কিনা, সে বক্তব্যের অনুকূলে তাদের সমর্থন জানাবে কিনা তা নির্ধারিত হবে আগামী নির্বাচনে। এই নির্বাচনী রায়কে মাথা পেতে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আওয়ামী লীগ ছাড়া আরো বেশ ক’টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে নিয়ে তারা নিঃসন্দেহে সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী মনোনয়ন দান নেতাদের কোনো কোনো মহল এর চেয়ে সুস্থ বিকারগ্রস্থ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে তাতে আতঙ্কিত হবারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সম্পাদকীয় নিবন্ধে পরিসরের স্বল্পতাহেতু এই নিয়ে এ নিবন্ধে আমরা অধিক আলোচনা করব না। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার ইচ্ছে রইল।
সাতই মার্চ এর নির্বাচন আমাদের জাতীয় জীবনে শুধু নয় বরং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করবে। দিনের আলো থেকে মুখ ফেরানোর মহলবিশেষ আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের বাস্তবতাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। মনের কোণে তাদের উ’কিঝু’কি মারছে চক্রান্তের নানা গলিপথ। এবারের নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে এই চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বার্থহীন রায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা কে সুপ্রতিষ্ঠা করবে। বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে তাই নির্বাচন আসছে বাংলাদেশের জনগণের দুয়ারে। আজ থেকে তিন দিন পর সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা জনগণের হাতে আসবে। তারা বিচার করবেন এবং রায় দেবেন। সেরাতে মাথা পেতে নেবে দেশপ্রেমিক’ জনগোষ্ঠী এবং অবশ্যই সে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে দিতে সহায়ক হবে।

 

প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতা ও প্রশাসনিক দৃঢ়তার

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যা আন্তরিকতা ও দৃঢ়তা থাকলে মোকাবিলা করা কঠিন কোন কাজ নয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিক রিপোর্টে জানা যায় ঢাকা শহরে বিভিন্ন রেশন ডিলার কারচুপি করে কার্ডধারীদের ন্যায্য অধিকার থেকে দিনের-পর-দিন বঞ্চিত করে চলছে। সরকারি গুদাম থেকে মাল সরবরাহ করা সত্ত্বেও এই সকল অসৎ ডিলার জনগণকে ‘মাল পাওয়া যায়নি’ এই ধুরা তুলে প্রাপ্ত দ্রব্যাদি পেছনের দরজা দিয়ে খোলাবাজারে পাচার করে দিচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত মুনাফায় পরিতৃপ্ত না হই এই গণবিরোধী অসাধু ব্যবসায়ীরা শুধু যে ব্যক্তিগত মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলছে তাই নয় বরং জনগণের সরকারকেও ক্ষেত্র বিশেষে জনগণের চোখে হের প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এটা এমন এক সমস্যা যা প্রাশাসনিক কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং দৃঢ়তা থাকলে অতি সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। ক’মাস আগে এমন, একটা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। ওয়ারিশন কার্ড এবং পেছনের দরজা দিয়ে দ্রব্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বেশ জোরেসোরেই। কিন্তু কোন অজানা কারণে তা শিথিল হয়ে পড়লো, রেশন ডিলার দের অসাধুতার কাছে নতি স্বীকার করতে হলে। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে তা আজও আমাদের কাছে রহস্যই রয়ে গেছে। সাধারণতঃ স্বল্প আয়ের পরিবারই রেশন কার্ডের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে অধিক আগ্রহী থাকেন। তাদের পক্ষে অধিক মূল্যে খোলাবাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই দিন গুনতে থাকেন এই সকল স্বল্প আয়ের পরিবারবর্গ কবে সেই দিনক্ষণ আসবে একটা নির্দিষ্ট মূল্যে তারা তাদের প্রয়োজনীয় ভোগ্য দ্রব্য ক্রয় করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু রেশন দোকানে গিয়ে দাঁড়ালেই শুনতে হয় সেই কঠোর ‘কর্কশ বাণী’ মাল পাওয়া যায়নি’। শুধুমাত্র এই তিনটি শব্দ যে কার্ডধারীর সাংসারিক জীবনে কি বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে তা অনুভব করার মত মানসিকতা ও সেই কোন দুষমনদের আর নেই। জনগনকে ফাঁকি দিয়ে তাদের জন্য সরবরাহকৃত সরকারি মালামাল কালোবাজারে বিক্রি করে আর্থিক প্রাচুর্য লাভের চেয়ে উম্মাদনা তাদের পেয়ে বসেছে এ থেকে মুক্তির উপায় কি। যেমন ইচ্ছা চলুক গোছের প্রাশাসনিক তৎপরতা দেখিয়ে যে প্রাশাসনিক কর্তৃপক্ষ গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বিচরণ করেছেন তাদের দায়িত্ববোধ সম্বন্ধে কি নতুন করে তালিম দেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই আবলা কর্তাদের পড়ে রয়েছে সরকার এবং সেই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে জনগণ। সরকার যদি উপযুক্ত তালিম দিতে ব্যর্থ হয়ে থাকে তবে স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বটা এসে পরে জনগণের কাঁধে। জনগণকে কি সেই দায়দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে?

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!