You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী

ঢাকাঃ বৃহস্পতিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৩৭৯

বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্তি

কমনওয়েলথ সেক্রেটারী মিঃ আর্ণল্ড স্মিথ গত ১৮ই এপ্রিল কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের প্রধান দপ্তরে বাংলাদেশের কমনওয়েলথভুক্তির কথা ঘোষণা করেছেন। এই নিয়ে কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা দাঁড়ালো বত্রিশে।অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন ও নিউজিল্যান্ডসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কটি দেশ কমনওয়েলথ-এর
সদস্য।
মূখ্যতঃ যে সকল দেশ এক সময় বৃটিশ শাসনাধীন ছিল সেই সকল রাষ্ট্রের বৃটেনের স্বার্থ রক্ষার তাগিদেই কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সময় ও পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর চরিত্রেরও পরিবর্তন ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একের পর এক বৃটিশ শাসনাধীন দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং স্ব-সরকার গঠন করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাই কমনওয়েলথ-এর ভূমিকা সদস্যভুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নশীল দেশসমূহকে অর্থনৈতিক সাহায্যদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর এবং বিশেষ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে যখন গ্রেট বৃটেন সরকারীভাবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করে তখন থেকেই বাংলাদেশের কমনওয়েলথভুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। পাকিস্তানের বিরোধিতার ফলেই বাংলাদেশের কমনওয়েলথভুক্তি বিলম্বিত হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে গ্রেট বৃটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার ফলে পাকিস্তান কমনওয়েলথ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান আর কমনওয়েলথ-এর প্লাটফরমে ফিরে আসবে কিনা অথবা নিজ প্রয়োজনেই তাকে আবার কমনওয়েলথ-এর দ্বারস্থ হতে হবে কিনা শুধু ভবিষ্যতই তা বলতে পারে। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাকিস্তানের পশ্চাদপসরণ এবং সেইসঙ্গে উক্ত সংস্থায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবং বিশ্ব সমাজের সগৌরবে আসীন হওয়া থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং বহির্মুখী চরিত্রেরই প্রতিফলন ঘটে।

বাংলাদেশ কমনওয়েলথ-এর সদস্য হয়েছে— আশার কথা, সুখের কথা। এতে করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদাই যে বৃদ্ধি পাবে তাই নয়— যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের ব্যাপারে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির নৈতিক দায়িত্বও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামে কমনওয়েলথ ও তার সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নেতিবাচক। স্বাধীনতা-উত্তরকালেও কিছু কিছু সদস্য রাষ্ট্র তাদের অতীত কার্যধারাই অব্যাহত রেখেছে।
এখন বাংলাদেশকে এই সংস্থার, সদস্যরাষ্ট্ররূপে স্বীকার করে নেবার পর আমরা স্বভাবতই আশা করব তারা পুরোন ভ্রান্তিকে দূরে সরিয়ে নূতন ও বাস্তবতার আলোকে তাদের পথ নির্ধারণ করবে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যভুক্তির পর জাতিসংঘ সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের ব্যাপারে কি ভূমিকা গ্রহণ করে তা লক্ষ্য করবার বিষয়।

ছাত্রলীগ কর্মীর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন

তারুণ্যের আর এক নাম বিদ্রোহ। এমনি একটা বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটেছে মানিকগঞ্জ মহকুমার একটি ঘটনায়। রিলিফের দ্রব নিয়ে স্বজনপ্রীতি দেখানোর জন্যে পিতার বিরুদ্ধে পুত্র সোচ্চার হয়ে প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছে। জনগণ এ ব্যাপারে সরকারের কাছে বিচার চেয়েছে, কর্তৃপক্ষও আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক দেশাত্মবোধের পরিচয়ে আমরা গর্বিত, জাতিও গর্বিত। উল্লেখিত পুত্রটি মহকুমা ছাত্রলীগের একজন কর্মী।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাস ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান দেশের জনগণের জানা। দেশের সার্বিক পুনর্গঠনের কাজেও ছাত্রলীগের ভূমিকা নিরলস গতিতে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা সূর্য ছিনিয়ে আনতে তাদের রক্ত দান জীবন বৃথা যেতে পারে না, তেমনি এই দুর্মূল্য স্বাধীনতা রক্ষা করার সুমহান দায়িত্বও আজ এই তরুণ শক্তির উপর ন্যস্ত।
দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তাদের প্রত্যেক কর্মীর আজ মানসিকতার বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন। মানিকগঞ্জের উল্লেখিত ছাত্রলীগ কর্মীর দেশপ্রেমের কাছে পিতৃপ্রেমের পরাজয়ের মতোই সকল যুবশক্তিকে আজ সততার উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত করার শপথ নিতে হবে। স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতির কলুষ আত্নার মৃত্যু ঘটিয়ে দুর্বার মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রামে। আর সেখানেই হবে তারুণ্যের উষ্ণ রক্তের বিজয়।

দেশ আজ মহান নেতৃত্বের ছায়াতলে সমাজতন্ত্র অর্জনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর এই সমাজতন্ত্র অথবা তার আদর্শ বিশিষ্ট মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাস্তবায়নের অনেকাংশে নির্ভর করছে এই যুবশক্তির সংগ্রামী কর্মতৎপরতার উপর। আর এ কারণেই ছাত্রলীগের তথা দেশের নিপীড়িত জনগণের আশা-ভরসার স্থল ছাত্রশক্তিকে অবশ্যই চরিত্রবান হতে হবে, জ্ঞানের মহিমা ও সংগ্রামের নতুনতর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেশের জনগণের বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু ও যুবশক্তির উপর যেমনভাবে রয়েছে তেমনি নতুন নতুন সংগ্রামী পদক্ষেপ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নের সংগ্রামও তাদেরই করতে হবে।
এ জন্যে আজ প্রয়োজন অসীম মনোবল, নিরলস সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মহান চরিত্র।

তাই মানিকগঞ্জ মহকুমার ছাত্রলীগ কর্মীর বিদ্রোহ যেন সারা বাংলাদেশের নির্যাতিত মানবাত্নার বিদ্রোহ। পিতার বিরুদ্ধে পুত্রের এ অভিযোগ যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের আত্ন ঘোষণা।

সকল ছাত্রকর্মীই যে সৎ একথা হলফ করে বলা যাবেনা। আবার অসৎকে যে সৎ পথে আনা যাবেনা এটাও ঠিক নয়। প্রয়োজন সংগ্রামী সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি। এই সাংগঠনিক তৎপরতাই দেশের সকল কর্মীকে আদর্শ পথে পরিচালিত করতে পারে। ছাত্রলীগকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আর মানিকগঞ্জের তারুণ্যের বিদ্রোহই হবে তার ন্যায়ের আদর্শ।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!