১২ শ্রাবণ ১৩৭৮, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ১৯৭১
-লন্ডন ফিনালসিয়াল টাইমস এর সংবাদ দাতাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইয়াহিয়া খান বলেন, ‘যদি ভারত পূর্ব পাকিস্তানের কোন অংশ দখলের পদক্ষেপ নেয়া সেটাকে পাকিস্তানের উপর আক্রমণ বলে গণ্য করা হবে। আমি যুদ্ধ ঘোষণা করবো, বিশ্ব জেনে রাখুক। পাকিস্তান তাতে একা থাকবে না। উল্লেখ্য, ইয়াহিয়া খান এধরনের দম্ভোক্তি ইতোপূর্বেও করেছেন।
-পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীর প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
-অধিকৃত বাংলাদেশের সামরিক প্রশাসক ও গভর্ণর জেনারেল টিক্কা খান মুক্তিবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্যে পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রতি মুজাহিদ বাহিনী গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
-ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নয়াদিল্লীতে বলেন নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশের সমস্যা উত্থাপন করার কোন ইচ্ছা বর্তমানে ভারতের নেই। তিনি জানান, বাংলাদেশ সংকট সম্পর্কে বিবেচনা করার কোন ইচ্ছা বর্তমানে ভারতের নেই। তিনি, জানান, বাংলাদেশ সংকট সম্পর্কে বিবেচনা করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব নিরপত্তা পরিষদের কোণ আনুষ্ঠানিক বা ঘরোয়া বৈঠক আহবানের পরামর্শ দেননি।
-জামাতে ইসলামীর প্রাদেশিক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ভবিষৎ বংশধরদের খাঁটি পাকিস্তানী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঠ্যপস্তুক থেকে অবঞ্ছিত অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের গভর্ণর লেঃ জেনারেল টিক্কা খানকে অভিনন্দন জানান। তিনি আশা করেন। জাতীয় আদর্শভিত্তিক নতুন সিলিবাস ভবিষৎ নাগরিকদের খাঁটি মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক হবে।
-এদিন “মর্নিং ষ্টার” পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, ‘মুক্তিফৌজের’ নাম পরিবর্তন করে মুক্তিবাহিনী রাখা হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর তরুণ যোদ্ধারা ইতিমধ্যে ঢাকায় দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে ৪ টির মধ্যে ৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্থ করতে সক্ষম হয়। তারা সামরিক গভর্ণর টিক্কা খানের বাসভবনেও আক্রমণ করে।
-বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ইউনিটরা ইয়াহিয়া খানের ৬ টি “আউটপোষ্ট” দখল করে। সারা দেশ জুড়ে সামরিক যানবাহনের উপর আক্রমণ চালিয়ে দু’টি বড় নৌকা ডুবিয়ে দেয় এবং একটি রেলওয়ে ট্রেন কয়েকটি পুল ধ্বংস করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি মুক্তঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে এই সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
-কানাডিয়ান পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ এক বিবৃতিতে পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের নিন্মোক্ত সুপারিশ করেনঃ
১। কানাডার সরকার ও জনগণের শরণার্থীদের জন্য আরও বেশি সাহায্য দেয়া উচিত।
২। কানাডার সরকারের অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় এই প্রশ্নকে জাতিসংঘ আশা উচিত।
৩। পাকিস্তান সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের মধ্যে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাজনৈতিক সমাধান করা উচিত।
-সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ জামালগঞ্জ উপজেলার নদীপথই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। সাচনাবাজার বিখ্যাত নদীবন্দর। পাকবাহিনী জামালগঞ্জে সুদৃঢ় ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান নেয়। জামালগঞ্জ মুক্ত না হলে এ অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল সম্ভব নয়। সেজন্য তিন দলে বিভক্ত হতে মুক্তিবাহিনী নৌকায় গেরিলা অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই তিন কোম্পানিমুক্তিযোদ্ধার প্রথম কোম্পানি কমান্ডার আবদুল হাই (ইপিআর) সহযোদ্ধা ২০ জন। তৃতীয় দলের কমান্ডার মুজাহিদ মিয়া। সহযোদ্ধা ২০ জন। এদিন সারারাত ভীষণ যুদ্ধ চলতে থাকে। প্রথম কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শহীদ হন। জগৎ জ্যোতির প্রবল আক্রমণে পাক বাহিনী জামালগঞ্জের ব্যাংকার থেকে পলায়ন করতে থাকে। সাচনা জামালগঞ্জ সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসে সাচনা জামালগঞ্জে যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহস ও বীর্্যের সাক্ষ্য বহন করে। (মুঃ খুঃ সুঃ পৃঃ ৮১) উল্লেখ্য, এ সময়ে অন্যতম সংগ্রামী জনাব হোসেন বখত মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন বর্মাসহ জামালগঞ্জ ভ্রমণ করেন। দিরাই শাল্লাই এলাকা মুক্তি যুদ্ধ সাংগঠনিক পরিচালনায় নিয়োজিত ছিলেন সাংবাদিক জনাব সালেহ চৌধুরী (দৈনিক বাংলা)।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী