You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলার বাণী ১৩ মে ১৯৭২ তারিখের মূল পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী ১৩ মে ১৯৭২ তারিখের মূল পত্রিকা

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/01/1972.05.13-bani.pdf” title=”1972.05.13 bani”]

বাংলার বাণী

ঢাকাঃ সোমবার, ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৯

 

এশিয়ায় খেল বন্ধ কর

 

বৃহৎ শক্তিবর্গ তাদের রাজনৈতিক ও ঔপনিবেশিক স্বার্থে এতদিন এশিয়াকে ব্যবহার করে এসেছে। অনুন্নত অথচ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ  এশিয়া বরাবরই ছিল বিদেশীদের কাছে আকর্ষণীয়। বিভিন্ন সময়ে তাই তারা ঔপনিবেশিক শোষণের শৃখলে আবদ্ধ করতে চেয়েছে মহাদেশের রাষ্ট্রসমূহকে এবং সবক্ষেত্রেই প্রায় তারা সফলতাও অর্জন করেছে। বস্ততঃ সমগ্র এশিয়ার ভূখন্ডই এক সময় ছিল বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তির শাসনাধীন। প্রাচ্যের সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে পাশ্চাত্য। আর শোষণের তীব্র যাতনায় পলে পলে নিঃশেষিত হয়েছে এশিয়ার জীবনীশক্তি। অতঃপর রুশ ফরাসী বিপ্লবে অনুপ্রাণিত এশিয়ার জাতিসমূহের মধ্যেও সঞ্চারিত হয় স্বাজাত্ববোধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালীন পরিবেশে একে একে ঔপনিবেশিকতার নিগড় ভেঙ্গে নিজেদের স্বাতন্ত্র ও স্বার্বভৌমত্ব  নিয়ে আত্নপ্রকাশ করে এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহ।

কিন্ত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব, অদূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রক্ষণশীলতা এশিয়ার জাতিসমূহকে ঠেলে দেয় নয়া ঔপনিবেশিকতার কবলে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন। সম্পদ শোষণের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৃহৎ শক্তিবর্গ তাদের পুরোণ ‘তালুকানা’ অক্ষুণ্ণ রাখার অসৎ খেয়ালে মেতে উঠে। বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে এশিয়ার এক রাষ্ট্রকে অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে, অন্তর্ঘাতি ক্রিয়াকলাপ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নানা দেশের প্রগতিশীল সরকারসমূহকে উচ্ছেদ করে তারা প্রচেষ্টা চালায় পুরোন নিয়মে এশিয়ার উপর তাদের খবরদারি বজায় রাখতে। স্বাধীন বিশ্ব ও গণতন্ত্রের নামে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের উচ্ছেদ সাধন ও সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ট স্বৈরাচারী মিলিটারী শাসন কায়েমের নজীর এশিয়াতে খুব কম নেই। এই দূর্ভাগ্যের দোসর হিসেবে এশিয়া পেয়ে ছিল আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে। সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তিসমূহের চাল সেই সঙ্ঘতির মূল্যেও চীর ধরিয়েছে।

অধুনা বৃহৎ শক্তিবর্গের ষড়যন্তের কেন্দ্রভূমি হয়ে দাড়িয়েছে এশিয়া। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস ও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্তুর দশকে বাংলাদেশ এই ষোড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়। সচেতনতা ও সংগ্রামের জন্য বলিষ্ঠ প্রকাশ অবশ্য বাংলাদেশের জনগণের জন্য নতুন জীবনের চেতনা উজ্জীবিত করেছে সাধারণ মানুষকে। পশ্চিম এশিয়ার সংগ্রাম কিন্ত গণভিত্তিক হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি তাই জনগণের অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের সংগ্রাম যখন সফলতার সূর্য তরণে প্রবেশ করেছে, ভিয়েতনামের জনগণ যখন চরম বিজয়ের মুহূর্ত গুনছে তখন সু-সমন্বয়ের অভাবে তারা বিভ্রান্তীর মধ্যে কালাতিপাত করছে। সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্র চলছে সারা এশিয়াব্যাপী। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও। তাই আমাদের প্রধান মন্ত্রী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দৃহতার সংগে বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে এশিয়ায় তাদের খেল বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সতর্ক থাকতে বলেছেন বাংলার জনমানুষকে। এশিয়ায় অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তের অবসান হবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা ও জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তব প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

দুষ্কৃতিকারীরা  —  সাবধান

সম্প্রতিকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটতরাজ, খুন জখম, ডাকাতি প্রভৃতি আনাচার ঢাকা শহরেও বেড়ে চলেছে। প্রতি ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতিকারীরা মারাত্নক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। কিছুদিন আগে ঢাকার কাওরান নাজারের মতো একটি ব্যস্ত এলাকার একটি ব্যাংকে দিন দুপুরে ডাকাতি সংঘটিত হয়ে গেল – আবার তারপরই গত পরশু দুপুরে মতিঝিলের মতো সদা কর্মব্যস্ত এলাকায় গাড়ীতে চড়ে একদল সশস্ত্র ডাকাতি করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। দুষ্কৃতিকারীরা একজন ট্রাফিক পুলিশ হাবিলদারকে আহত করে সেগুনবাগিচা এলাকায় একটা রিকশার সাথে ধাক্কা লাগিয়ে এলোপাথাড়ি গুলীবর্শণ করতে থাকলে কয়েকজন হতাহত হয়। পরে জনতা তাদের ঘিরে ফেলে ঘটনাস্থলেই একজন দুষ্কৃতিকারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলে, বাকীদের একজন পালাতে সক্ষম হয় এবং অন্যজন আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়। সংবাদে জানা গেছে, দুষ্কৃতিকারীদের তিনজনই কলেজ ছাত্র। এবং গাড়ীটিও হাইজ্যাক করা।

দেশবাসীর স্বাভাবিক নাগরিক জীবন এই সমস্ত দুষ্কৃতিকারীদের দিয়ে দিনের পর দিন চরমভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় বেশ অংশ জুড়ে লুটতরাজ, খুন জখম, রাহাজানির সংবাদে ভরে থাকে। স্বাধীনতা উপ্পর বাংলাদেশ সরকারের সবদিক গুছিয়ে এবং আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার এই ক্রান্তি সময়ে কর্তৃপক্ষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই দুষ্কৃতিকারী আসরে নেমেছে এবং বিভিন্নভাবে জনগণের মনে ত্রাস সঞ্চার করে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে। একথা একরকম নিঃসন্দেহে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, এইসব দুষ্কৃতিকারীরা প্রায় ক্ষেত্রেই পেশাদার নয়। সুযোগ ও মানসিক বিকার তাদের এই ঘৃণ্য কাজে টেনে নামাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশও এদের সাথে পেরে উঠছেন না। ফলে এই জাতীয় দুষ্কৃর্ক বাড়ছে বৈ কমছে না।

তবে সুখের বিষয়, দেশের কতিপয় স্থানের মতো ঢাকারও জনতা সম্মিলিতভাবে দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার ফলে কয়েকটি ঘটনার মতো এই ঘটনার সাথে জড়িত দুষ্কৃতিকারীরা চরম শিক্ষা লাভ করেছে। জনগণ বুঝতে শিখেছে আর যাই হোক না কেন, দুষ্কৃতিকারীরা কোন দিনই তাদের সহানুভূতি পাবার আশা রাখে না। তারা দুষ্কৃতিকারীদের শিক্ষা দিয়েছে – জনগণ এদের বরদাস্ত করবে না।

গত পরশুর ঘটনাটিতে দুষ্কৃতিকারী গুণ্ডা বদমায়েশদের শিক্ষার অনেক কিছু আছে। জনতা সজাগ হয়েছে। দুষ্কৃর্মের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা জনগণের হাতে চরম শাস্তি লাভ করবে – অতএব, সাবধান।