মুক্তিবাহিনীর আঘাতে ঢাকা শহর বিপর্যস্ত
[বিশেষ প্রতিনিধি]
উপনিবেশবাদী, ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদলেহী জল্লাদ ইয়াহিয়া খা, নিয়াজী, ভুট্টো, টিক্কা ওমরের সকল কলা কৌশল, দন্ত, অহমিকা, হিংস্রতা ও বর্বরতা ও দলিত বিধ্বস্ত করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় রথ এগিয়ে চলেছে দূরন্ত ঝটিকা বেগে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে। অনিবার্য পরাজয়ের মুখােমুখি হয়ে আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টায় ভারত সীমান্তে হিংস্র ছােবল মারছে পাকিস্তান আর পালটা মার খেয়ে ত্রাহি ত্রাহি আর্তচিৎকার আহ্বান করেছে চীন, মার্কিন ও রাষ্ট্রসঙ্রে পর্যবেক্ষক দলকে। অসম্ভব অবাস্তব হাস্যকর জল্লাদী দুরাশায়
খাস ঢাকা শহর পাকবাহিনী গেরিলাদের আক্রমণে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিদেশিরা অবস্থা সঙ্গীন দেখে ঢাকা ত্যাগ করে সরে পড়েছেন। বাঙলাদেশ থেকে প্রকাশিত “দি পিপল” পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ঢাকার অবস্থা ক্রমশ কাহিল হচ্ছে দেখে গত ২৮ নশেম্বর ঢাকা থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ৩৫ জন কর্মী বিমানযােগে ব্যাংককে চলে গেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান এবং সুইডেন তাদের নাগরিকদের পাকিস্তান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা জেলার তিনটি থানা থেকে পাকিস্তানি জল্লাদবাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখানে উড়ছে স্বাধীন বাঙলাদেশের পতাকা। অসংখ্য তরুণ-তরুণী এসে সমবেত হচ্ছেন এই পতাকার চার পাশে।
ঢাকার কাছে মুন্সিগঞ্জ শহর আর কাছাকাছি এলাকা পাক সেনাদের হাত ছাড়া হয়েছে। ঢাকা কার্যত বাঙলাদেশের অন্যান্য পাক দখলীকৃত এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। মুক্তিফৌজ বাঙলাদেশের রাজধানীর দিকে যতই চার দিক থেকে এগিয়ে আসছে ততই শহরে জীবনযাত্রা অচল হচ্ছে। পাক কর্তৃপক্ষ সেখানে ঘন ঘন কাফুজারি করছে। গেরিলা আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ খবর, ঢাকায় একদিন হরতাল পালিত হয়েছে দখলদারি সৈন্যের অত্যাচারের প্রতিবাদে। ঢাকা শহরে দিনের বেলা থাকে সামরিক বাহিনীর হাতে, রাতে পরিণত হয় গেরিলা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে। ঢাকা শহরের পাঁচ মাইলের মধ্যে মুক্তিবাহিনী অবাধে বিচরণ করছেন। গত এক পক্ষকালে ঢাকা শহরে ২৭ জন পাক অফিসার মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছে ; ঢাকা।
শহরে প্রবেশের ১৬টি সড়ক ও রেল সেতু গেরিলারা ধ্বংস করে দিয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকাটাঙ্গাইল সড়কে একটি সেতুও আর অবশিষ্ট নেই। ফরিদপুর ও ঢাকার মধ্যে অবস্থিত গােয়ালন্দ ও আরিচাঘাটে পাকসৈন্য পিছু হটেছে। আরিচাঘাট ও ঢাকা দখলের পথ এখন পরিষ্কার।
সূত্র: সপ্তাহ, ০৩ ডিসেম্বর ১৯৭১