জমি দাবির সংবাদ ভিত্তিহীন
শেখ মুজিবুর রহমান একদিনের জন্য কলকাতা এসেছিলেন এবং সেখানে আওয়ামী লীগ ও বাঙলাদেশ সংগ্রাম সমিতির এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় যােগ দিয়েছিলেন বলে গত ১৬ এপ্রিলের সপ্তাহে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল নয়া দিল্লির সর্বোচ্চ মহলে সংবাদ নিয়ে জেনেছি তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাঙলাদেশের বাইরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনও কোন সভা করেননি। সপ্তাহর মতাে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রত্রিকায় এই ধরনের গুজবকে প্রাধান্য পেতে দেখে বিস্মিত হয়েছি। ইয়াহিয়া খানের প্রচারযন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে বিদেশি শক্তির চর বলে যে প্রচার করছে এই ধরনের গুজব তাতেই ইন্ধন যােগায়।
২৩ এপ্রিল সংখ্যায় বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যেই নাকি ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং শরণার্থীর পুনর্বাসনের জন্য ভারতের সীমান্তবর্তী পূর্ব বাঙলার কয়েকটি জেলা পাকিস্তানের কাছে দাবি করবে।
আমি সর্বোচ্চ মহলে খবর নিয়ে জেনেছি, স্বীকৃতী এবং তার তাৎপর্য এখনও সরকারের বিবেচনাধীন, কবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে তার কোন নিদৃষ্ট তারিখ এখনও ধার্য হয়নি। পূর্ব বাঙলার কাছ থেকে জমি দাবির সংবাদটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ঐ সংবাদে বলা হয়েছে ভারত সরকার বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। তা যদি হয় তাহলে পূর্ববঙ্গের উপর পাকিস্তান সরকারের সার্বভৌমত্বের অধিকার অবসান ঘটবে। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কাছে পূর্ববঙ্গের জমি দাবির প্রশ্ন কি করে উঠতে পারে? এখানে বলা যেতে পারে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদী নেতাদের সঙ্গে ভারত সরকারের দায়িত্বশীল মহলের যখনই সাক্ষাৎ ঘটেছে তখনই তাঁরা তাদের এই আশ্বাস দিয়েছেন যে বাঙলাদেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ভারত সর্বতােভাবে মেনে চলবে। তাই জোরের সঙ্গে বলা যেতে পারে বাংলাদেশকে যখন স্বীকৃতি দেওয়া হবে তখন ব্যর্থহীনভাবে এই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হবে যে বাঙলাদেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ভারত শ্রদ্ধা করে চলবে।
এটা খুবই দুঃখের যে সপ্তাহের মতাে দায়িত্বশীল বামপন্থী পত্রিকা বাজার গুজবে কর্ণপাত করবে, বিশেষ করে যার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে হিন্দু সাম্প্রদয়িক প্রতিক্রিয়াশীলদের দাবি। কয়েক বছর আগে তারা শরণার্থী পুনর্বাসনের জন্য এই দাবিই তুলেছিলেন।
বাঙলাদেশের সংগ্রামের প্রতি ভারতে যে আন্তরিক সৌভ্রাতৃতুবােধ রয়েছে তাকে যারা কালিমালিপ্ত করতে চায় সেই ইয়াহিয়া প্রচারযন্ত্রই এই সংবাদ পূলকিত হবে।
আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক দূরে থাকি এবং আগ্রহের সঙ্গে সপ্তাহ পাঠ করি তাদের সবিনয় নিবেদন এই যে পত্রিকাটি যেন চাঞ্চল্যকর সংবাদ পরিবেশনের মােছে ভুলে না যান তথ্যই সুষ্ঠু সাংবাদিকতার মূল কথা ভিত্তিহীন বাজার গুজব নয়।
নিখিল চক্রবর্তী
নয়া দিল্লি
সূত্র: সপ্তাহ, ৩০ এপ্রিল ১৯৭১