২৬ কার্তিক, ১৩৭৮ শনিবার, ১৩ নভেম্বর ১৯৭১
মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে রাজশাহীর জনাব মোহাম্মদ ইয়াসিন নিহত হয়। তিনি স্থানীয় পিডিপি নেতা ও বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মুজিবনগরে এদিন খবর পৌঁছে যে, পাক সরকার চালনা ও খুলনা বন্দরের কাজকর্ম সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছে। উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর নৌসেনারা অস্ট্রেলিয়ান জাহাজ মেহব্রন ও সারকারা এবং সোমালিয়ার জাহাজ সারলিয়ন-এর মারাত্মকভাবে ক্ষতিসাধন করে।
ভারতীয় মিত্রবাহিনী কামান, মর্টার, এইচ এম জি ও আর ইত্যাদি ভারি অস্ত্র সহযোগে মুক্তিবাহিনী ভুরুঙ্গামারী দখলের জন্য ব্যাপক গুলীবর্ষণ করে পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর। ভারতীয় বিমান বাহিনী বিগত ১১ নভেম্বর থেকে শত্রুদের অবস্থানের ওপর আঘাত হেনে চলে। মধ্যরাতে শক্র বাহিনীর গুলীর আওয়াজ স্তিমিত হয়। পরে পাকবাহিনী সৈন্যদের বিধ্বস্ত ব্যাংকারে নির্যাতিতা বাঙালী মহিলার সঙ্গে আলিঙ্গনাবদ্ধ নিহতের সন্ধান পাওয়া যায়। হাইস্কুল ও সিও বাসভবনের দোতলা থেকে ক’জন নির্যাতিতা কলেজ ছাত্রী উদ্ধার করা হয়। ক’জন ছিল অন্তসত্ত্বা। ভারতীয় মেডিকেল কোর তাদের শুশ্রুষার দায়িত্ব নেয়। মুক্তিবাহিনী জয়মনি ও রায়গঞ্জের দিকে এগিয়ে যায়। এ দিনের অন্যান্য ঘটনা, কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, মুক্তিবাহিনী কর্তৃক বিপুল এলাকা মুক্ত, ও স্বাধীন বাংলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা। ভারতের কাছে পাকিস্তানের প্রতিবাদ।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের আশঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগীরই যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ চায় না। তবে যুদ্ধ বাধলে সে তাতে জড়িয়ে পড়বে না।
-নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গেরিলাদের বিক্ষিপ্ত হামলায় শান্তিবাহিনীর সদস্য ও রাজাকারসহ ৩ জন নিহত, ৬ জন আহত । ধানমণ্ডির আল বদর ক্যাম্পে গেরিলাদের অতর্কিত হামলা। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে শান্তি বাহিনীর সভা চলাকালে গেরিলাদের হামলায় ৫ জন হতাহত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২৪ অক্টোবর থেকে বেলজিয়াম, অষ্ট্ৰিয়া, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানীতে তিন সপ্তাহের সরকারী সফর শেষে এদিন নয়াদিল্লী পৌঁছেন। উল্লেখ্য, প্যারিসে শ্রীমতী গান্ধী টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। মুজিবনগরে তাঁর এই উক্তিতে বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে বলে সকলেই আশান্বিত হয়ে উঠে। শরণার্থী মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিবাহিনী সকলের মধ্যে চরম উন্মাদনা ও আশার আলো ছড়িয়ে পড়ে। (লেখক)
ইয়াহিয়া খানের এক পত্রের জবাবে চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ট উপমহাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি মধ্যস্থতা করতে রাজি নন বলে জার্মানীর সরকারী মুখপাত্র প্রকাশ করেন। শ্রীমতী গান্ধী মধ্যস্থতার প্রস্তাব সম্পর্কে উৎসাহী নন। বিশ্ব জনমত ইয়াহিয়া খানকে রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করতে বাধ্য করবে বলে তিনি আশা করেন।
পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করলে ভারত পাল্টা আক্রমণ করবে এবং দখলীকৃত এলাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ ভারতকে বাধ্য করতে পারবে না বলে সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম যে মন্তব্য করেন, সে সম্পর্কে মিসেস গান্ধী ঐকমত্য রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। (“দি গার্ডিয়ান” ১৩ নভেম্বর)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী