১৯ কার্তিক, ১৩৭৮ শনিবার, ৬ নভেম্বর ১৯৭১
গোপালগঞ্জ মুক্ত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন ইসমাত কাদির গামা (মুজিব বাহিনী) ও ক্যাপ্টেন হেমায়েতের যৌথ নেতৃত্বে সমবেত হয়। এদিন তারা কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস কেন্দ্রের দখল নিয়ে পাকসেনাদের সঙ্গে প্রবল লড়াই করে। একটানা ১৫ ঘন্টা যুদ্ধ চলে, পাক জঙ্গী বিমান থেকে গুলীবর্ষণ করা হয়। মুক্তিসেনাদের আক্রমণে পাকসেনারা পিছু হটে যায়। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুসহ এই দিন সাধুহাটির জয়নাল, রামদিয়া কলেজের ছাত্র ইয়াসির শহীদ হন। উল্লেখ্য, এই এলাকায় পরবর্তীতে (৯ ডিসেম্বর) মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের নতুবদিয়া (বোয়ালমারী) ঘাঁটি দখলের যুদ্ধ হয়। নেতৃত্ব দেন হেমায়েত তালুকদার ও কাজী সালাউদ্দিন। ধোপাডাঙ্গার দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর মেজর মজিফসহ ৪৯ জন পাকসেনা খতম হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শহীন হন, কাজী সালাউদ্দিন, নওফেল, ওহাব, মজিবর, আউয়াল, সোহরাব ও আদেল।
জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে আট সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ইসলামাবাদ থেকে একটি বিশেষ বিমানযোগে চীন রওয়ানা হয়ে গেছেন। জনাব ভুট্টো ইয়াহিয়া খানের প্রতিনিধি হিসেবে এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলের অন্যান্য সদস্য হলেন, বিমান বাহিনীর প্রধান রহিম খান, পররাষ্ট্র সচিব সুলতান খান, জিওসি গুলহাসান, এডমিরাল রশীদ পররাষ্ট্র দফতরের আফতাব আহমদ খান, জনাব তারেক হোসেন এবং আহমদ কামাল। এই প্রতিনিধি দলের চীন যাত্রা একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। (দৈঃ পাঃ)
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘কোন কোন দেশ একজন সামরিক একনায়ককে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একজন লোকের সম্মানকে বাঁচাতে গিয়ে তারা সারা উপমহাদেশের শান্তি বিঘ্নিত করছে। যে ব্যক্তিকে জনগণ নির্বাচিত করেনি, তাকে বাঁচাতে গিয়ে তারা পাকিস্তানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। সীমান্ত এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এ কথা যারা ভাবছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সমস্যার মূল কারণগুলোকে দূরীভূত করতে হবে।’ (বিডি-২ পৃঃ ২৭৩-৭৬)
সুইডেনের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৮০ জন সংসদ সদস্য (পাঁচটি দলের দলনেতা সহ) এক বিবৃতিতে বলেন যে, মার্কিন সরকারের উচিত অবিলম্বে তাদের প্রভাব দিয়ে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কয়েমসহ পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ঘটান। সে সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভারতে নিযুক্ত অষ্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার মিঃ প্যাট্রিক শ (Patrick Shaw) কৃষ্ণনগরে (পশ্চিম বাংলা) বলেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। পূর্ববাংলার সমস্যার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারাই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এটা রাজনৈতিক সমাধান হওয়া উচিত। ভারত শরণার্থীদের ফিরে যেতে বাধা দিচ্ছে না তা তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। (সংবাদপত্র)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী