১৮ কার্তিক, ১৩৭৮ শুক্রবার, ৫ নভেম্বর ১৯৭১
মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) এলাকায় সুবেদার মেজর রেফাজ উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ৪ টি কোম্পানী ডাঃ বাবর আলী, জাবেদ আলী ও মনির উদ্দিন এবং মুজিব বাহিনীর আব্দুর রাজ্জাক মুক্তগাছার ভিটিবাড়িতে রাজাকার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। এদিন বারুইখালিতে ডাঃ বাবর আলীর বাহিনী ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে মুক্তাগাছা জামালপুর রাস্তায় এ্যাম্বুশ পেতে থাকে। পাকসেনা ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ চালায়। কয়েকজন পাকসেনা খতম হয়। উল্লেখ্য, মুক্তাগাছায় বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধে যারা শহীদ হন, তাঁরা হলেন, সবর্জনাব শহীদ হাতেম আলী (তন্তর যুদ্ধে), দ্বিজেন্দ্র, কার্তিক, নূরুজ্জামান, ইয়ার মাহমুদ, ভবতোষ (নাজিরপুর যুদ্ধে) শামসুল হক (ভালুকা যুদ্ধে) আজিজুর রহমান (ভিটিবাড়ি যুদ্ধে), বাবর আলী (তন্তর যুদ্ধে) বছির উদ্দিন (নালিতাবাড়ি যুদ্ধে) ওয়াহিদ (কামালপুর যুদ্ধে), আব্দুস ছাত্তার ও আব্দুল খালেক (নালিতাবাড়ি যুদ্ধে মোহর আলী (বুড়ের চক যুদ্ধে) আবুল কালাম (সরিষাবাড়ি যুদ্ধে) হোসেন আলী (চন্দনবাড়ি যুদ্ধে) হযরত আলী (উছাখিলার যুদ্ধে), মেহের আলী, ওমেদ আলী, আজগর আলী (মলিতাবাড়ি যুদ্ধে), নুরুল ইসলাম ও মনিরুদ্দিন (তন্তর যুদ্ধে), সাহার উদ্দিন (ভালুকা যুদ্ধে মকবুল হােসেন (বিড়ালী যুদ্ধে) ও তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। (সংগ্রহ)
ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মধ্যে দ্বিতীয় দিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১২৫ মিনিট স্থায়ী আলোচনাকালে মিঃ নিক্সন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ববঙ্গ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষপাতী। তিনি যুদ্ধের সম্ভাবনা এড়ানোর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। (ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন, নভেঃ ৫) সংবাদে উল্লেখ করা হয়, কূটনৈতিক মহল মনে করেন হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত আলোচনার ফলে মিঃ নিক্সন ও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর মতের পার্থক্য সংকুচিত হয়নি। উল্লেখ্য, প্রায় একদশক পরে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ হেনরী কিসিঞ্জার তাঁর ‘হোয়াইট হাউসের বছরগুলো’ গ্রন্থে ১৯৭১ সালের ৪ এবং ৫ নভেম্বর হোয়াইট হাউজে ভারতের প্রধানন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী আর প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মধ্যে যে বৈঠক হয় সেই বৈঠকের উল্লেখ করে Time (oct 15, 1979) লিখেছেঃ নেহেরু তনয়া ইন্দিরা গান্ধী এবং নিক্সন দুর্ভাগ্যজনকভাবে একে অন্যের প্রতি গ্রহণযোগ্য ছিলেন না।
নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের উত্তরাধিকারী বলে ইন্দিরার ধারণা এবং তাঁর রহস্যময় নীরবতা নিক্সনের ভেতর নিরাপত্তাহীনতা জাগিয়ে তোলে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর পুঁজিবাদকে ঘৃণা করার ফ্যাশন এবং তাঁর বুদ্ধিজীবী বন্ধুদের কাছ থেকে শোনা নিক্সনের গল্প পুরোটাই মিথ্যা নয় এমন একটি ভাব তাঁর আচরণে ফুটে উঠছিল। নিক্সন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের উপর যে মন্তব্য করেন তা ছাপার অক্ষরে লেখা যায় না।“Were not always printable”নিক্সন ওভাল অফিসে বিদেশীদের সঙ্গে যে দুটো ব্যর্থ সাক্ষাৎ দিয়েছেন তা হলো ৪ ও ৫ নভেম্বর ইন্দিরার সঙ্গে। ইন্দিরা ভিয়েতনাম এবং চীনের ব্যাপারে নিক্সনকে এমনভাবে প্রশংসা করলেন যেন একজন অধ্যাপক একজন পিছিয়ে পড়া ছাত্রকে পিঠ চাপড়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। তাঁর প্রশংসার সমস্ত ঔজ্জ্বল্য নিষ্প্রভ হলো যখন তিনি বললেন যে নিক্সন চীনের সঙ্গে যা করেছেন তা গত দশকেই তা’করার জন্য ভারত সুপারিশ করেছিল। ইন্দিরার জ্যাঠামো দেখার পর্যাপ্ত সময় নিক্সনের ছিল না।
তিনি চিন্তা করছিলেন ইন্দিরা নিশ্চয়ই তাঁর উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তার চেয়ে বেশ নীতি মেনে চলেন না। তিনি ইন্দিরাকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য স্থির বুদ্ধির রাজনীতিক বলে ধরে নিলেন। ১১ আগষ্ট নিক্সন সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের সভায় অবশ্য বলেছিলেন ইন্দিরার বদলে তিনি হলেও হয়তো একই ব্যবহার করতেন। তিনি এবং আমি মুখোমুখি হতে চাইনি। একটি যুদ্ধ আমাদের ভৌগোলিক-রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে দিতে পারতো। আমরা ধরে নিয়েছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ছিল অবশ্যম্ভাবী-এতে হয়তো সময় কিছু বেশি লাগতে পারে। মিসেস গান্ধী ঠিকই বুঝেছিলেন নিক্সন কি করতে চান। তিনি নিজেও সংকট সৃষ্টিতে যথেষ্ট কাজ করেছেন। এখন তা ঠিকঠাক মত গুছিয়ে তুলতে না পারলে তার নিজেরই ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নিক্সনের প্রতি তাঁর যে তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছিল তার কারণ হয়তো এই ছিল যে লোকটির আন্তর্জাতিক বিষয়ে ধারণা তাঁর (গান্ধীর ধারণার সঙ্গে অস্বস্তিকর সাদৃশাজনক ছিল। নিক্সন যে জন্য সময় চাইছিলেন ইন্দিরা সে কারণেই বিষয়টি শিগগীর শেষ করতে চাইছিলেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ভারতের দিগন্তকে জোরদার করতো।
এটা ভারত বিভক্ত করে আরও মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতো। তাই নয়া দিল্লী চাইছিল বাংলাদেশের জন্ম এমনভাবে হোক যাতে উপহাদেশে ভারতের প্রাধান্য বজায় থাকে। ইয়াহিয়া পূর্বাঞ্চলে ১৯৭১ সালের মধ্যেই বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কথা মেনে নিয়েছিল। এতে অবশ্য পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন দেয়া হতো। উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য তিনি ভারত সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে আনার কথাও মেনে নিয়েছিলেন। তবু নয়াদিল্লী পাকিস্তানের ব্যবস্থায় খুশি হয়নি। ইন্দিরার ওয়াশিংটন ত্যাগের ঠিক ১৭ দিন পর পাকিস্তানী বেতারে বলা হয় যে, ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে। আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম যে আমাদের পাক-ভারত যুদ্ধ দেখতে হবে এবং ভারত তা শুরু করেছে। এবং আইনের আবরণের কোন তোয়াক্কাই সে করেনি।
আমি মনে করতাম নিক্সন আরও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন-সমাধানের পথ বন্ধ করার জন্য ভারত ধীরে ধীরে তার দাবীনামা বাড়িয়েছে। পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানীদের অত্যাচার পাশবিক ছিল ঠিকই এবং শরণার্থীরা ভারতের অর্থনীতির উপর এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের অন্যতম কারণ উপমহাদেশে ভারতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা।” (বিচিত্রা ১৬.১১.৭৯) ভয়েজ অব আমেরিকা (VOA) গত ১২/১০/৭৯ তারিখে বাংলা সংবাদ পর্যালোচনায় (২২১০ ঘঃ) ১৯৭১ সালের ৪ ও ৫ নভেম্বর হোয়াইট হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী বৈঠকের উল্লেখ করে বলেছে যে, “ডঃ কিসিঞ্জার নিঃসন্দেহে বলেছেন যে, প্রেসিডেন্টের সাথে বিদেশী নেতাদের যত বৈঠক হয়েছে তার মধ্যে ঐ দু’টা দিনের বৈঠকই ছিল সবচাইতে দুর্ভাগ্যজনক।” (লেখক)
মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্ব পাকসামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এ.কে.নিয়াজী বিভিন্ন সীমান্ত ফাঁড়ি পরিদর্শন করেন। (সংবাদপত্র)
ভুরুঙ্গামারীস্থ দখলদার পাকবাহিনীর অবস্থানগুলো ধ্বংস করে ভুরুঙ্গামারী উদ্ধার করার জন্য সেক্টর কমান্ডার এম. কে. বাশার, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জসি সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সাহেবগঞ্জে মিলিত হন। ভারতীয় ষষ্ঠ মাউন্টেন ডিভিশনের একটি ব্রিগেড এবং বিএসএফ-এর কয়েকটি কোম্পানী সার্বিক সমর সজ্জায় সজ্জিত হয়।
নটরডেম কলেজের সম্মুখে বিস্ফোরণের সাহায্যে টেলিফোন ক্যাবলের ক্ষতি করা হয়। (দৈঃ পঃ)
নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদের হাতে শান্তি কমিটির দুজন সদস্য নিহত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে এক ভাষণে শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেন যে, পূর্ববাংলার জনগণ সামরিক সরকারের অধীনে থেকেও আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনার অজুহাতে সামরিকজান্তা বাংলাদেশে সৈন্য সমাবেশ শুরু করে। যেদিন আওয়ামী লীগ একটা আপোসের আশা করেছিল, সেদিনই সেনাবাহিনী পূর্ববাংলার জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পূর্ববাংলায় আজ প্রকৃত অর্থে গৃহযুদ্ধ চলছে।
সেখানে সেনাবাহিনী বেসামরিক লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করছে। লক্ষ লক্ষ লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। আর ভারতকে বলা হচ্ছে যে, দু’দেশের সৈন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ। কিন্তু যেখানে একটা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে, সেটা কি শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ নয়? ভারত সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছে যে, পূর্ববাংলা সংকটের সমাধানের একমাত্র উপায় হলো—শেখ মুজিব যদি বেঁচে থাকেন, তাহলে তাকে মুক্তি দেয়া এবং গণপ্রতিনিধিদের সাথে গ্রহণযোগ্য একটা রাজনৈতিক সমাধানে উপনীত হওয়া। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “The suppression of democracy is the original cause of all the trouble in Pakistan. The nations of the world should make up their minds who is more important to them, one man and his machine or a whole nation.’ (বিডি-২ পৃঃ ২৬৫-৬৭)
পিপিপি চেয়ারম্যান জেড এ. ভুট্টোর নেতৃত্বে ৮ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাক-প্রতিনিধিদল পিন্ডি থেকে পিকিং যাচ্ছেন। কূটনীতিক মহলের সূত্রে জানা যায়, ভুট্টো উপপ্রধানমন্ত্রী ও পিডিপি নেতা নুরুল আমিন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। ইসলামাবাদে পাকিস্তান সরকারের জনৈক মুখপাত্র ঘোষণা করেন, পাকিস্তান তার পূর্বাংশে বিরাজিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহৎ শক্তিবর্গের সাহায্য কামনা করেছেন। গণচীন ও রুমানিয়া পাকিস্তানকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র দিতে সম্মত হয়েছে। উল্লেখ্য, এ দিনেই রেডিও পাকিস্তান জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জরুরী বার্তার উত্তর দিয়েছেন। (সংবাদপত্র)
৪ নভেম্বর“দি ডেইলি টেলিগ্রাম”-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৪টির মধ্যে ৩টি জেনারেটর গতকাল মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে ঢাকার চতুর্দিকের শিল্পাঞ্চলগুলি অকেজো হয়ে পড়ে। কড়া পাহারা থাকা সত্ত্বেও গেরিলা যোদ্ধারা পাকিস্তানী সৈন্যের ছদ্মবেশে প্রধান প্রবেশদ্বার পার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভিতরে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।
ঢাকা থেকে ৪ নভেম্বর তারিখে প্রেরিত এক সংবাদে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রচারিত তথ্য বিবরণীতেঃ গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে গেরিলা যোদ্ধাদের তৎপরতার বিবরণ দেওয়া হয়ঃ (ক) চট্টগ্রাম বন্দরে “মাহতাব জাবেদ” নামক একটি তৈলবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া হয় এবং এর ফলে ৭ জন নাবিক নিখোঁজ হয়; (খ) ঢাকায় জনৈক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়; (গ) ঢাকায়। দু’টি ব্যাংক লুঠ করা হয়; (ঘ) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ৩টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বানচাল করা হয়। (“ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন” ৫ নভেম্বর)
Mr. Anthony Mascarenhas said in New Delhi that “Bangladesh is a reality, whether the world Governments recognize-it or not.” He further said, “the fact that there is total alienation of 70 to 75 million people who have united as one to resist president Yahya Khan’s Army. It is for the nations to decide on the recognition of their freedom. (Newspapers)-উল্লেখ্য, মিঃ এন্থনী মাসকারেনহাস এপ্রিল মাসে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তাঁর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা—জুন ১৩ লন্ডনের ‘সানডে টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়। পাকবাহিনীর গণহত্যা বীভৎসরূপ তিনি ঐ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। পরে তিনি তাঁর প্রতিবেদনের অনুসিদ্ধান্ত রূপ “দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ” গ্রন্থ প্রকাশ করেন। জানা মতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এটি প্রথম গ্রন্থ।
সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী মিঃ লি কোয়ান ইউ লন্ডনে বলেন, ভারত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চায় না। ভারত শরণার্থীদের দায়িত্বপালনে ব্যস্ত। পূর্ব বাংলাকে দখল করার ইচ্ছা ভারতের আছে বলে তিনি মনে করেন না। (সংবাদপত্ৰ)
ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যারিস সুমান (Maurice Schumann) প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সমাধান খুঁজে বের করুন।” উল্লেখ্য, ইতাোপূর্বে ফরাসী সরকার শরণার্থী ফিরে যাওয়া ও রাজনৈতিক সমাধানের প্রস্তাব ইয়াহিয়া খানকে জানিয়েছিলেন।
অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিঃ উইলিয়াম ম্যাকমোহন ওয়াশিংটনে এদিন পূর্ববঙ্গে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যত শীঘ্ৰ গণতান্ত্রিক সরকার পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ততটা সে দেশের মঙ্গল হবে। (স্টেটস্ম্যান)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী