You dont have javascript enabled! Please enable it!

১ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ১৯৭১

এদিন দি টাইমস-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা দর্শন শহর দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এখান থেকে পূর্বদিকে আক্রমণ চালিয়ে এই সেক্টরের প্রধান রাস্তাগুলি দখল করাই মুক্তিবাহিনীর উদ্দেশ্য বলে মনে হয়। ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কে, বি. এ্যান্ডারসন পূর্ববঙ্গ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, জনগণের রায় ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাভিত্তিক রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

পাক বাহিনী যশোরের বয়রা সীমান্তে এক স্কোয়াড্রন শাফী ট্যাংক নিয়ে মুক্তি বাহিনীর অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনী প্রত্যুত্তর দিতে থাকে। উল্লেখ্য, পাকসেনাদের এ আক্রমণ ক্ৰমান্বয়ে ভারত সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা চালায় পরিনতিতে চৌগাছায় ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় মুক্তি বাহিনীর সংগে পাকবাহিনী প্রথম প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হয় নভেম্বর ২১ তারিখে।

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল খুলনা ও চালনায় নোঙ্গর করা জাহাজ ‘লা সিরা’ এবং মার্কিন সাহায্য প্রাপ্ত মিনি-ব্যাংকার জাহাজ মিনি লেবর ডুবিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহের ঘোষগাঁ এবং হালুয়া ঘাটের অবস্থান থেকে পাক সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার ৫৯২ বঃ মাইল এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। রংপুরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর সাথে ২৪ ঘন্টা একটানা লড়াই করে ভুরঙ্গমারী দখল করেছে। মুক্তিবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যগণ জেনারেল নিয়াজীর নাকের ডগায় ঢাকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক স্থানে স্তব্ধ করে দিয়েছে। রাজাকার ও দালালদের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা বিরাট আতংক হয়ে ওঠেছে। ঢাকা থেকে এএফপি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযযাদ্ধারা বোমাবর্ষণে শিল্প এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষেত্রে আংশিক ক্ষতিসাধন করেছেন। শীতলক্ষ্যায় ডকইয়ার্ডে তিনটি বোমা মেরে মুক্তিযোদ্ধারা ৬টি পাম্পের ক্ষতিসাধন করেছে। (সংবাদপত্র)

এই সময়ের মুক্তিবাহিনীর কর্মতৎপরতার অগ্রগতি সম্বন্ধে সাংবাদিক— D.R Manekekar লিখেছেন, The Bahini forces overran ten Pakistani positions from khulna in the South to Rangpur and Sylhet in the north-Kalaroa in Khulna district, chougachha in Jessore district, Amarkhana, Raigong and Hatibanda and Barakhata in Rangpur district and Jakigong and Atgram in Sylhet district. In the Kasimpur area, the Bahini shot down one Pakistani jet fighter near Nabonnagar, South of Faridpur was in the Mukti Bahini’s hands long before November, while Madhupur in Mymensingh and Nowabgonj, South of Dacca, were also by now brought completely under their control” (PCS, P-42)

এদিন দি ডেইলি টেলিগ্রাফ এর সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবকে মুক্তিদানের মাধ্যমে পূর্ব বংগ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পাকিস্তানের মঙ্গলকামী বিদেশী নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনেকেই ইয়াহিয়া খানকে জানিয়েছেন, শেখ মুজিবের মুক্তির মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ান সম্ভব বলে তারা মনে করেন। অথচ ইয়াহিয়া খান এই পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজি নয়। শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে সে আশংকা করে।

১২ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের চীনা প্রতিনিধি দলের পাকিস্তান আগমন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে বৈঠক (সংবাদপত্র)

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ফিলিপাইনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কে, পন্নী, নয়াদিল্লীতে পাকিস্তানের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও কাঠমুণ্ডুতে সেকেন্ড সেক্রেটারী এ,এম, মুস্তাফিজুর রহমানকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। বঙালী কূটনীতিকবৃন্দ বিপ্লবী বাংলাদেশে সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণায় তাঁদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।

পশ্চিম বাংলায় শরণার্থীদের নিয়ে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে টাইমস পত্রিকার এ দিনের প্রতিবেদনঃ The reflux caused serious social tensions in the border areas of West Bengal. A Times correspondent reported on Nov. 18; “A registered refugee who gets food rations from Government stocks is better fed than most landless laborers in the neighborhood. Others living outside caps are being employed by landowners as far laborers on wages much lower than those that must be paid to laborers from the locality. Since the refugees are assured of free food rations they do not ind working on a daily wage of one rupee (6p) against the standard rate of three rupees. This is causing resentment among the local working force. “উল্লেখ্য, কৃষ্ণনগরে শরণার্থীদের সাথে স্থানীয় লােকদের সঙ্গে নভেম্বর মাসে বেশ কয়েকস্থানে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলীতে বেশ ক’জন শরণার্থীকে প্ৰাণ দিতে হয়। এ ধরনের ঘটনার বিবরণের উপর বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সাহায্য ও পুনর্সন কমিটি থেকে লেখককে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!