You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.23 | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮ মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৬ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮ মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ১৯৭১

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে দৃঢ়তার সাথে পুনরায় বলেন যে, বাংলাদেশের জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা একটিই-আর তা হল পূর্ণ স্বাধীনতা। তিনি বলেন, এক বিশ্বশক্তির সমর সম্ভার দিয়েও জনগণের মুক্তি সংগ্রাম দমন করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার একমাত্র পথ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে হানাদার সৈন্যদের নিষ্ক্রমণের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়া। আমরা তাই করতে যাচ্ছি। জলে-স্থলে অন্তরীক্ষে শত্ৰুকে আমরা চরম আঘাত হানব আর তখনই জেনারেল ইয়াহিয়া খান ত্রূর সত্যের মুখোমুখী হবেন। সকলে প্ৰস্তুত থাকুনঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে চরম মুহূর্তে যেন সর্বশক্তি দিয়ে শক্রকে একযোগে চরম আঘাত করতে পারেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে যারা সাফল্যের বর্তমান স্তরে নিয়ে এসেছেন, সেই বীর শহীদ, অকুতোভয় যোদ্ধা ও সংগ্রামী জনগণকে আমি সালাম জানাই, জয় বাংলা।”

এদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-এর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ মুজিবনগর থেকে এক আনুষ্ঠানিক পত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবী জানান। এই পত্রে উল্লেখ করা হয়ঃ“It is our considered assessment that the granting of recognition by the Government of India to the People’s Republic of Bangladesh is a most necessary and important step not only to stabilize the situation on the sub-continent but also to ensure peace, progress and stability of south-East Asia. May we, therefore, reiterate the request which we made in our letter of 15th October that you accord immediate recognition to the sovereign People’s Republic of Bangladesh?” (BD-2, p. 586) এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের প্রিন্সিপ্যাল এইড ব্যারিষ্টার আমীর-উল-ইসলাম এমপিএ. (যুদ্ধকালে ছদ্মনাম রহমত আলী) লিখছেন, ‘১৫ অক্টোবর আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে স্বীকৃতির জন্য পুনরায় অনুরোধ করেন। সেই চিঠিতে এটাও দাবী করা হয় যে বাংলাদেশের অর্ধেক ভুখন্ড মুক্তিবাহিনীর দখলে ও বাংলাদেশ সরকারের শাসন ব্যবস্থা সেখানে চালু আছে। এই চিঠির সূত্র ধরে ১৫ নভেম্বর অন্য একটি চিঠি লেখা হয়। সেই চিঠিতে বাংলাদেশ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, স্বীকৃতির অনুরোধ, তৎকালীন অবস্থা ইত্যাদি ছিল। এই চিঠি লেখা হয় ইন্দিরার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রাক্কালে। ২৩ নভেম্বর অপর একটি চিঠি লেখা হয় তার সফরশেষে। এই চিঠিতে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ও বিশ্বজনমতে প্রতি ইয়াহিয়ার চরম উপেক্ষার কথা বলা হয়। এই চিঠিতে আরো ছিল শরনার্থীদের স্বদেশে ফেরার ব্যবস্থা করার কথা। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা শীতের আগে দেশে ফিরে যেতে না পারলে বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন হবে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এক চিঠিতে জানান, বাংলাদেশের দু’তৃতীয়াংশ মুক্তিবাহিনীর দখলে থাকলেও পাক হানাদাররা ক্যান্টনমেন্ট থেকে হামলা করে সম্পদ ধ্বংস করছে। জবাবে ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সহযোগিতার প্রস্তাব করে। বাংলাদেশ সরকার ভারতের বন্ধুসুলভ সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও বেসামরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়।” (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, পৃঃ ১০২)

অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে। যশোর, সিলেট, কুমিল্লা, হিলি এলাকায় ব্যাপক গেরিলাযুদ্ধ চলেছে এদিন।

চীনা সাহায্যে নির্মিত ভারী যন্ত্রপাতি কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ইয়াহিয়া খান বলেন, দশ দিনের মধ্যে ‘যুদ্ধের ময়দানে তাঁর অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (পাকিস্তান টাইমস ২৪ নভেঃ ৭১) ‘হয়তো দিন দশেকের মধ্যে আমাকে আর এখানে না-ও পাওয়া যেতে পারে—কারণ, আমাকে সম্ভবতঃ যুদ্ধে যেতে হবে। চৈনিক সরকার ও জনগণ পাকিস্তানে সাহায্যে এগিয়ে আসবে উল্লেখ উক্ত সভায় সৈনিক মন্ত্ৰী মিঃ লি শু চিং পাকিস্তান-চীনের বন্ধুত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করলেন কিন্তু সতর্কতা সঙ্গে ভারতে সঙ্গে উত্তেজনা বা চীনের ঐ বিষয়ে সহায়তার প্রশ্ন এড়িয়ে যান। (টাইম, ডিসেঃ ৬)“Li Shui-Ching Spoke glowingly of Chinese-Pakistan friendship but he carefully avoided any mention of the tension with India or of Specific aid from Peking.”

পাকিস্তানের হজ্জ জাহাজ ‘সফিনা-ই-হজ্জ’-বাঙালী ১২ জন নাবিককে পাকসরকার গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, গতমাসে করাচী বন্দরে নোঙ্গর করা থাকাকালীন জাহাজটিতে আগুন লেগেছিল। বাঙালী নাবিকরা এ কাজে দাযিত্ব রয়েছে কিনা জানা যায়নি। পাকিস্তানে এদিন ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়।

State of Emergency declared in Pakistan.

President Yahya Khan proclaimed state of emergency on Nov. 23.Declaring that “a most critical situation has been created because Pakistan is faced with external aggression”; the practical implications of this proclamation were not clear, however, as the country had been under martial law since 1969, The Navy assumed control of the sailing and routing of all Pakistani merchant ships on the same day. Army reservists were called up on Nov. 24, and Air Force reservists on Nov. 29. (KCA. p. 24995)

শাহবাজপুর ব্রিজে পাকবাহিনীর সাথে ‘এস’ফোর্সের প্রচণ্ড লড়াই হয়। এ যুদ্ধে বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সেক্টর কমান্ডার মেজর সফিউল্লাহ এ লড়াইয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। শাহবাজপুর হাতাহাতি যুদ্ধে একটা গুলী মেজর শফিউল্লাহের উরুতে পিস্তলের গুলীর আঘাত হানে।

এই সময়ে ঢাকা শহরে গেরিলা দলের অপারেশন তৎপরতা সম্বন্ধে“ Keeping’s contemporary Archives (পৃঃ ২৪৯৮৯) লিখেছে, “Guerrilla groups operating inside Dacca, which were reported to consist largely of students, bombed the Intercontinental Hotel early in September and became increasingly active in October, when they made an unsuccessful attempt to shell the airport. Guerrillas disguised as Pakistani soldiers entered the city’s main power station on Nov. 3 and destroyed three of the four main generators, bringing industry to a standstill within a 30-mile radius, whilst other guerrilla activities in Dacca during this period included the bombing of educational institutions, which were under the Army’s control, and a series of armed bank robberies. A curfew was imposed on the city on Nov. 17 while the Army carried out a house-to-house search for arms; Pakistan Radio subsequently reported that 138 people had been arrested and four killed while resisting arrest. Two West German diplomats had previously been killed 15 miles from Dacca on Nov. 14 when their vehicle drove over a land mine.”

পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের ট্যাংক ও গোলন্দাজ বাহিনীর ব্যাপক হামলা সম্পর্কে পাকিস্তানের অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জনৈক মুখপাত্র বলেন, যশোর সেক্টরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী উস্কানীমূলক গুলী ছুঁড়লে উভয় বাহিনীর মধ্যে আজ গোলাগুলি বিনিময় হয়। তবে, এই যুদ্ধ ৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী ছিল না। অবশ্য আজ পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে উভয় বিমানবাহিনীর মধ্যে আকাশ যুদ্ধ হয়।

কেন্দ্রীয় জামাত নেতা মওলানা আব্দুর রহীম, অধ্যাপক গোলাম আজম, মওলানা এ কে এম ইউসুফ ও আব্দুল খালেক পূর্বাঞ্চলের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য এদিন ঢাকা থেকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। উল্লেখ্য, এদিন ‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ এক প্রতিবেদনে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ভারতের প্রতি ‘বন্ধুত্বের হাত’ প্রসারিত করার আহ্বান (নভেম্বর ১৯) সম্বন্ধে মন্তব্য প্রসঙ্গে শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্দী বলেন, পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতার প্রমাণ হিসাবে শেখ মুজিবকে প্রথমে মুক্তি দেওয়া উচিত।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী