You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.20 | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮ শনিবার, ২০ নভেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৩ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮ শনিবার, ২০ নভেম্বর ১৯৭১

এদিন মুক্তিবাহিনী নালিতাবাড়ি থানা আক্রমণ করে পশ্চিমা পুলিশ রাজাকারদের হাত থেকে দখল করে নেয়। পাকসেনারা এখানে ছিল না। এই অপারেশনে পশ্চিমা পুলিশ, রাজাকার এবং আলবদর নিহত হয়। অবশিষ্টরা আত্মসমর্পণ করে। এই বিজয়ের ফলে হালুয়াঘাট ছাড়া শেরপুর থেকে দূর্গাপুর পর্যন্ত সমগ্র সীমান্ত এলাকা-মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

আমেরিকান মেরিন ইস্যুরেন্স কোম্পানীগুলো পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরিতব্য মালের জন্য অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রিমিয়াম দাবী করে। ‘ডন’পত্রিকায় বলা হয় মার্কিনী কোম্পানীগুলো পূর্ব পাকিস্তানকে ‘যুদ্ধ বিপত্তি এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। বিশ্ব বাজারেও বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বিশেষভাবে জাগ্রত হয়েছে-এটা তারই প্ৰমাণ। মুক্তিবাহিনী নৌ-গেরিলা বাহিনীর কর্মতৎপরতা ও সাফল্য Keesing’s contemporary Archives (পৃঃ ২৪৯৮৯) লিখেছেনঃ“Pakistan Radio claimed on Sept. 28 that the Navy had killed’ 10 frogmen who had been trained to mine ships in Chittagong and Chalna harbors. A British cargo ship was shelled by two small ships several miles off the coast on Nov. 11 while on its way to pick up a cargo of jute at chalna, and although no one was injured was obliged to turn back to Calcutta. As a result of such attacks some foreign companies stopped their ships from Calling at Chittagong.”

আজ ঈদ-উল-ফিতর। অবরুদ্ধ বাংলাদেশের কোন আনন্দ নেই। পাক রেডিও ‘সব ঠিক হায়’ খবর ও ঈদের আনন্দের বর্ণনা দেয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ঈদ উপলক্ষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ঈদের শুভেচ্ছা বাণী প্রচার করে। মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে নামাজ পাঠ সম্ভব হলেও সেমাই খাওয়া কারো ভাগ্যে জুটেনি। অনেকে যুদ্ধকালে কোনো জামাত জায়েজ নয় বলে নামাজে যায় নি। (লেখক)

ভারত বাংলাদেশ যৌথ সামরিক কম্যান্ড গঠনের ঐকমত্য হয়। মিত্রবাহিনীর পরিকল্পনা বাংলাদেশ সরকার নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। এসময়ে মুজিববাহিনীর কর্মকর্তাদের সংঙ্গে ভারতীয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়কারীদের সংঙ্গে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, স্বাধীনতোত্তরকালে এক সাক্ষাৎকারে মুজিব বাহিনী প্রধান শেখ ফজলুল হক মনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনা হয় জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, মিঃ ডি পি ধর, জেনারেল সরকার, জেনারেল ওবান, ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত প্রমুখের সঙ্গে। সম্মিলিত বাহিনীর চূড়ান্ত বিল্ড আপ চলছিল-তখন আমরাও আমাদের অপারেশন প্লান তৈরি করে ফেললাম। এ ব্যাপারে সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় গেরিলা ইউনিটগুলোর সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় রক্ষা করা হবে তাও চুলচেরা ওয়ার্ক আউট করা হয়। বিজয় পরবর্তী পর্যায়ে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও বিবেচনা করা হয়। (দৈঃ বাঃ ৪/১২/৭২)

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধকালীন কমিশন প্রাপ্ত লেঃ সামাদ জয়পুরহাটের পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। উল্লেখ্য, বগুড়ার বিস্তৃর্ণ এলাকা বরাবর ছিল মুক্ত। রংপুরের ভুরঙ্গামারী পাটগ্রাম অধিকৃত বাংলার একমাত্র মুক্ত অঞ্চল। জয়পুর হাটের শান্তি কমিটি বহু নিরপরাধী লোককে পাকবাহিনীর সহায়তায় হত্যা করেছে। চিনি কলের অঞ্চলকে এরা বদ্ধভূমি হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়।

মুক্তিবাহিনী মেহেরপুরে (কুষ্টিয়া) পাক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার গুলী করে ধ্বংস করে।

মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের মুন্সিগঞ্জ থানা পুড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জ কুষ্টিয়া এলাকায় গত দু’মাস ধরেই গেরিলাযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছিল।

এদিন এস, ফোর্স আখাউড়া আক্রমণ করে। এ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন মেজর মইনুল ইসলাম চৌধুরী। দুইদিন যুদ্ধের পর আখাউড়া পাকবাহিনীর হাত থেকে মুক্তিবাহিনীর হাতে মুক্ত হয়।

পাকিস্তান রেডিও থেকে বলা হয়ঃ যশোর ও সিলেট সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী আজ সর্বাত্মক হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী হামলা প্রতিহত করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রকাশঃ শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিত তাহার চিঠিতে পূর্ববঙ্গ সংকট নিরসনের জন্যে ১৫ দিনের সময় দিয়েছে।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী