১৬ পৌষ ১৩৭৮ শনিবার, ১ জানুয়ারী ১৯৭২
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি.ভি. গিরি, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডিয়ামের প্রেসিডেন্ট মিঃ নিকোলাই পদগর্নি ও ভূটানের রাজা সিগাম ওয়াংচুকে নবর্ষের অভিনন্দন বাণী জ্ঞাপন করে। বলগেরিয়ার ডেপুটি কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মিঃ ভালর্চি পেট্রভ (গমফডদম যর্ণরমশ) এদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে বঙ্গবভনে সাক্ষাৎ করেন। পরে মিঃ পেট্রভ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আব্দুস সামাদ আজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বুলগেরিয়ার জনগণ ও সরকারের বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম সমর্থন দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।
-The Bangladesh govt. Removed (on Jan 1), the ban on the sale of raw jute and jute goods to India imposed by the former martial law authorities of Pakistan. The government of Bangladesh have decided to fix the value of Bangladesh currency at one pound sterling equivalent to TK. 18.9677 with immediate effect.
আলহাজ্ব জহুর আহমেদ, স্বাস্থ্য, শ্রম কল্যান ও পরিবার পরিকল্পয়া মন্ত্রী এদিন পিজি হাসপাতাল উদ্বোধন করেন।
শিক্ষামন্ত্রীব্যবস্থাকে আমাদের জাতীয় জীবনের আদর্শ ও সময়োপযোগী হতে হবে।
স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণমন্ত্রী জনাব এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মিঃ ভিক্টোরী উন্সপিয়ার (Vittorio winspeare Gaicciardiu) বা শরণার্থী ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকারীদের সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ত্রাণ মন্ত্রী পরে ঢাকাস্থ বিদেশী ত্রাণ সংস্থার প্রধান মিঃ টনী হ্যাগন’র সঙ্গে ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধিদলের নেতা মিঃ লরেন্ট মটির (Lauretmorti) এর সঙ্গেও আলোচনা করেন।
মেঘালয়ে মূখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন উইলিয়াম শাংমা এদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান কর্নেল এম.এ. জি ওসমানী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী’র মেজর জেনারেল বি. এন সরকার এর সাতেহ সাক্ষাৎ করে। তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রাণালয় চলচ্চিত্র উৎপাদন ও পরিবেশ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের জন্য সংবাদ সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীতা গত সপ্তাহে।
মোহসীন আলী চৌধুরী (পি ডি পি, মুন্সীগঞ্জ), আব্দুর রহমান (কাঃ মুঃ লীঃ সাভার ঢাকা), আব্দুল রহমান (কাঃ মুঃ লীঃ মানিকগঞ্জ) মহীউদ্দিন আহম্মদ (মুঃ লিঃ মানিকগঞ্জ), মোয়াজ্জেম হোসেন, (প্রাক্তন মন্ত্রী মোশারেরফ হোসেনের ভাই, ময়মনসিংহ), মোহাম্মদ জনাব আলী (ফরিদপুর কালেকট- রেট), মোহাম্মদ আলী চৌধুরী (আলবদর, নোয়াখালী), সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন (তেজগাঁ ঢাকা), সৈয়দ আহম্মদ (এস, আই, পুলিশ ফরিদপুর), আনওয়ারুল হক (রাজাকার, ঢাকা), আব্দুস সাত্তার (রাজাকার, নওয়াবগঞ্জ,রাজশাহী) গিয়াসউদ্দিন ভুঁইয়া (আলবদর, রাজশাহী)। এছাড়া আরো ২৫ জন রাজাকার আলবদরকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যেঃ অধ্যাপক মাহতাবউদ্দিন (গুরু দয়াল কলেজ), কবিরাজ হোসেন (নাসাত ইসলাম, মহকুমা শান্তি কমিটি ময়মনসিংহ), মহসিন চৌধুরী (মুন্সিগঞ্জ,ঢাকা)।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে স্বাগত জানাবার জন্য ২রা জানুয়ারী (১৯৭২) লন্ডনের হাইড পার্কে বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটির উদ্যোগে এক বিরাট জনসভার আয়োজন করা হয়। পাঁচ হাজারেও বেশি লোক সভায় অংশগ্রহন করে। শেখ আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তৃতাদানকারীদের মধ্যে ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও বৃটিশ শ্রমিকদলীয় পার্লামেন্ট সদস্য জন ষ্টোনহাউস, মহিলা সমিতির বেগম শামসুন্নাহার, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু ও বাংলাদেশ ডাক্তার সমিতির একজন প্রতিনিধি। (সাপ্তাহিক “জনমত”, ৯ই জানুয়ারী, ১৯৭২)। বিচারপতি চৌধুরী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী বাঙগালী ও সমর্থনদানকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।গত নয় মাস যাবৎ আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য ব্রিটেনকেও তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশ সরকার জাতীয় মিলিশিয়ার’ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্যবৃন্দের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেনঃ সর্বজনাব প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ (সভাপতি), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মনোরঞ্জনধর, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, ম সিংহ, তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, রফিকউদ্দিন ভুঁইয়া, গাজী গোলাম মস্তফা এবং ক্যাপ্টেন সুজাত আলী। (সংবাদপত্র)
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আন্দুস সামাদ আজাদ এদিন হেলিকপ্টারে যুদ্ধ বিধ্বস্ত কিশোরগঞ্জ, হবিগ এবং সুনামগঞ্জের ক্ষয়ক্ষতির এরিয়া সার্ভে করেন। পরে তিনি সিলেট ষ্টাডিয়ামে এক জনসভায় ভাষণ দেন।
ভারতীয় নৌ-বাহিনীর সহায়্যতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্মোপযোগী করে তোলা এবং নিমজ্জিত নৌযান ও ভাসমান মাইন পরিষ্কার করে বঙ্গোপসাগরে অবরুদ্ধ নৌপথগুলি উম্মুক্ত করার কাজ পাকিস্তানের পরাজয়বরণের পর থেকেই জরুরীভিক্তিতে চলছিল। ফলে ১ জানুয়ারী নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাল ওঠানো-নামানোর ক্ষমতা শতকরা ৮০ ভাগ পুনঃস্থাপিত হয় এবং কুড়ি ফুট গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ চলাচলের উপযোগী নৌপথ উন্মুক্ত হয়। (ইংলিশ বসে)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী