১৯ অগ্রহায়ণ ১৩৭৮ সোমবার ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
[এদিনে রণাঙ্গনের অবস্থা আরো উত্তপ্ত। সন্মিলিত মিত্রবাহিনীর আক্রমণে পাকবাহিনী দিশেহারা হয়ে পালাতে থাকে। সর্বত্র পাকবাহিনীকে পশ্চাদধাবন করতে থাকে সম্মিলিত বাহিনী। আকাশে মিত্র বাহিনী অবাধ গতিতে উপর থেকে বিমান আক্রমণ চালায়। বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌবাহিনী সৃষ্টি করে নৌঅবরোধ| পাকবাহিনী নাজেহাল হয় সর্বত্র। পাকসেনারা দিশেহারা এবং একপেশে হয়ে পড়ে। প্ৰতিঘন্টায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী অগ্রগতি হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য। যশোরে প্রায় চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ পাক সেনাবাহিনীকে সোমবার রাতে ভারতীয় বাহিনী আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে যায়। যশোর তখন ঢাকা ও খুলনা থেকে বিচ্ছিন্ন, মাঝ রাতে সম্মিলিত বাহিনী আঘাত হানে ঝিনাইদহের উত্তরে-পশ্চিমে পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর। ঝিকরগাছাতেও আক্রমণ চলে। ততক্ষণে পাকবাহিনী পালাতে শুরু করেছে। মুক্তিবাহিনী-মিত্রবাহিনী তাড়িয়ে নিয়ে যায় পাকবাহিনীকে। পাকবাহিনী যশোর থেকে খুলনায় সরে যেতে থাকে।]-লেখক।
৬ ডিসেম্বর সূর্য ওঠার আগেই কতকগুলো সীমান্ত ঘাঁটি থেকে পাক-বাহিনী পিছু হটা শুরু করে। লেঃ জেঃ নিয়াজীর পুশ-ব্যাক নির্দের্শের পর গোটা বাংলাদেশে পাক বাহিনীতে একটা সত্যিকারের অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হল। (১০ম খণ্ডঃ ৭৮৩ পৃঃ) উপমহাদেশের ইতিহাসে তথা বাঙ্গালীর জীবনে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিন। লোকসভায় ভারতের প্রধান মন্ত্ৰী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের নীতি নির্ধারণী সরকারী বিবৃতি লাভের পর আগের দিনের গভীর রাত পর্যন্ত স্থায়ী ভারতীয় মন্ত্রীসভার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, অবৰ্ণনীয় বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। শুধুমাত্র ভাবাবেগে পরিচালিত হয়ে আমরা স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিচার করেই স্বীকৃতি দিচ্ছি। ….. নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রামরত বাংলাদেশের জনগণ এবং পশ্চিম পাকিস্তানী হামলা প্রতিহত করার জন্য জীবনপণ সংগ্রামরত ভারতের জনগণ আজ একই লক্ষ্যের ও একই পথের পথিক।”
এতে ভারত বিস্মিত হয়নি, কেননা সে জানত, বাংলাদেশের স্বীকৃতিদানের পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে এই সম্পর্কচ্ছেদ হবে এবং বাস্তবে তারা তাই করেছেন।
পাক সামরিকচক্র নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ – ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পৃঃ পাক উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছেন। (দৈঃ পাঃ)
সিলেট অবরুদ্ধ। দু’দিকে থেকে সম্মিলিত বাহিনী সিলেটের দিকে আগুয়ান। গোলন্দাজ বাহিনী করছে গোলাবর্ষণ। পাক-বাহিনী পিছে যেতে চায় কিন্তু পারে না। সেখানেও মুক্তিসেনা। যুদ্ধ চলে তুমুল সিলেটে।
শাণিত দৃষ্টি রেখেছে সম্মিলিত বাহিনী। কোন মতেই যেন পাকবাহিনী একত্র হতে না পারে। আকাশ মিত্র বাহিনীর পুরো দখলে। নৌপথ অবরুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর বীর তরুণেরা সার্বক্ষণিক ভাবে পাকবাহিনীকে ব্যস্ত রেখেছে ইতিপূর্বে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে গেরিলা বাহিনী।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে বলেছেনঃ বাংলাদেশের দিগন্ত স্বাধীনতার পুণ্য আলোকে উদ্ভাসিত। ….. আমাদের বন্ধু প্রতিবেশী, গণতন্ত্রের মহান পাদপীঠ, ভারত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ….. অচিরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তারবার্তায় ইন্দিরা গান্ধীকে জানান ও আমাদের দুই দেশের অনাবিল বন্ধুত্ব শান্তি ও সহযোগিতার নবযুগ সূচনার প্রয়াসী। তারা আরো বলেন, আমাদের দুই বন্ধুদেশের একই শত্ৰুকে পরাজিত করার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বিবৃতি প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানান। এই বৈঠকে ভারত সরকার ও জনগণকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান হয়। রাশিয়া ও পোল্যাণ্ডকেও তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান হয়।
ভারত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যগণের মন্তব্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এইচ.এম.কামরুজ্জামান বলেনঃ এ স্বীকৃতি মানবতা ও গণতন্ত্রের। অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী বলেনঃ ভারত বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় রচনা হতে চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহম্মেদ বলেনঃএই গৌরব মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধাদের আর ভারতের অসম সাহসী সেনাদের, যারা শুধু সেনাদের অক্ষরে নয়, নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে এই ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। মুক্তিবাহিনী প্রধান সেনাপতি কৰ্ণেল এম.এ.জি.ওসমানী বলেনঃ এই স্বীকৃতি বাংলাদেশকে শত্ৰু কবল থেকে মুক্ত করতে সহায়ক হবে। (আঃবাঃ পঃ)
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করে ১১ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠনের কথা হয়েছে। ফণি মজুমদারের মন্ত্রিসভায় যোগদানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে আনন্দবাজার পত্রিকায় এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
‘তাজউদ্দিনের আহ্বানে ভারত সাড়া দিল’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছেঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ সপ্তাহান্তে ভারত সরকারের কছে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তাতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান বার্তায় জনাব তাজউদ্দীন বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে পাকিস্তানের জঙ্গীচক্রের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ ভূমিকা আরো জোরদার হবে। শ্রীমতী গান্ধী আজ সকালে সংসদে ঐ বার্তা পেশ করেন। উল্লেখ্য, মুজিব নগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার অস্প কয়েকদিন পরেই গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে প্রথম অনুরোধ জানানো হয়েছিল! গত ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর বার্তায় বলেনঃ আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে জানতে পারলাম পাকিস্তানের অঙ্গীচক্র ৩ ডিসেম্বর অপরাহ্নে আপনাদের দেশের (ভারতের) উপর কাপুরুষোচিত আক্রমণ শুরু করেছে। তিনি বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খাঁর বেপরোয়া ভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লংঘনের এটা সর্বশেষ নিদর্শন| ইয়াহিয়া যে এই উপমহাদেশে উত্তেজনা, ধ্বংস ও সামাজিক অর্থনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি করতে বদ্ধপরিকর এটাই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। পাকিস্তান সরকারের এই মতলব সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণ সচেতন হয়ে প্রায় ৯ মাস আগে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেন। (আঃ বাঃ পঃ) ৭।১২।৭১
আনন্দবাজার পত্রিকার একমাত্র সম্পাদকীয়ঃ ‘স্বীকৃতির তিলক বাংলাদেশের ললাটে’ মন্তব্য করা হয়, ‘বাংলাদেশের আজ বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। সূর্যোদয়কে যাহারা অস্বীকার করে, তাহারা অন্ধ মাত্র, অস্বীকৃতির দৃষ্টিহীনতা সকালের রশ্মিজালকে মিথ্যা করিয়া দিতে পারে না। ‘জয় বাংলার’ যাত্রা শুরু হইয়াছে আগে, সেই পথ আজ নুতন একটি মোড় লইল, এবং এই পথও কুসুমাস্তীর্ণ নয়, রুধিরাক্ত। …. দুয়েক দিনে যে জাতি এক হইতে পারিয়াছে, জয়ের পরেও সে যেন সেই ঐক্যকে রাঁধিয়া রাখিতে পারে।’
সংসদে ঐতিহাসিক ঘোষণাঃ বাংলাদেশ সরকারকে ভারত স্বীকৃতি দিল।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার আটকলাম ব্যাপী বাংলাদের স্বীকৃতির প্রথম সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী আজ সংসদে বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ঘোষণা করেন, ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই সরকারের প্রতি শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। (আঃ বাঃ পঃ ৭।১২।৭১)
(উল্লেখ্য, প্রিন্সেপ স্ট্রীটের অফিসে স্বীকৃতি সংবাদ ৯টায় আমার কাছেই প্রথম পৌঁছে। আমি জনাব শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক মুহম্মদ ইউসুফ আলীকে জানাই। তারা উল্লসিত হয়ে পড়েন ও আমাদের মিষ্টিমুখ করান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন থিয়েটার রোডস্থ সেক্রেটারিয়েটে ছিলেন। জীবনে এই বিরাট মুহুর্তটির জন্য বহু প্রতিক্ষা করে ছিলাম আমরা তথা গোট বাঙ্গালী জাতি।) – লেখক
আকাশবাণী ১০-৩০ টায় বিশেষ সংবাদ হিসেবে স্বীকৃতির কথা প্রচার করে। বাংলাদেশ মিশনে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ান মিশন প্রধান এম.ডি.হোসেন আলী দুপুর ১-৪৬ মিনিটে।
কলকাতা উল্লাসে আনন্দে উত্তাল। আমরাও বিহ্বল হয়ে পড়ি।
যশোর ক্যান্টনমেন্টের দুই মাইলের মধ্যে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিবাহিনী আগেই অবস্থান নিয়েছিল। ভারতের নৌবহর বিক্রম থেকে হক বিমান মংলা, খুলনা, চালনা ও পশুর নদীর মোহনা পথে আক্রমণ করে। মংলায় পাকবাহিনী তুমুল গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হয়। পাকবাহিনীর বাণিজ্যিক জাহাজ ‘অন্ধরা’ থেকে অ্যান্টি এ্যায়ার ক্রাফটের মাধ্যমে প্রচণ্ড গোলা বর্ষণ করে।
অপরাহ্নে ভারতীয় নৌবাহিনী ডকইয়ার্ড, ওয়ার্কশপ, আর্মি ব্যারাকগুলোতে বোমাবর্ষণ করে। সারাদিন টাইগারগুলো চট্টগ্রামে বিভিন্ন নৌস্থলে বোমাবর্ষণ করে। রাতে কোবরাগুলো বিমানবন্দরের রানওয়েতে বোমাবর্ষণ করে। উল্লেখ্য, পূর্বাঞ্চলের স্থল, বিমান ও নৌবাহিনীর সমন্বিত হামলায় প্রচুর ফলোদয় হয়। মেঘনা নদীতে দুটি গানবোট ও সামরিক সরঞ্জামসহ একটি মালবাহী জাহাজ নিমজ্জিত হয়। পাকবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশে ২২ শ্যাফ ট্যাঙ্ক এবং একটি বিমান হারায়। সাতলরী বোঝাই পাকসৈন্য বন্দী হয়।
জাতিসংঘে উত্থাপিত মার্কিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব যদি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হতো তা হলে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্ভব হতো না। প্রাভদার রাজনৈতিক ভাষ্যকার ইউরি ঝুকোভ বলেন, এই প্রস্তাব যদি কার্যকরী হতো তাহলে হিংস্র পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশকে ছিড়ে টুকরো করে ফেলতো।
প্যারিসের দৈনিক হুমানি পরিতাপের সঙ্গে বলেছে, যুদ্ধের প্রকৃত কারণ দূরীকরণের কোন কথা মার্কিন প্রস্তাবে করা হয়নি।
সাংবাদিক এণ্ডারসন সখেদ তাই বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা বারংবার ভারতকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র আখ্যা দেওয়া সত্বেও ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে তারা গণতন্ত্রকে সমর্থন করেনি, সমর্থন করেছে ইয়াহিয়া খানের একনায়ক শাসনকে যার দূর্নীতি ও নৃশংসতা পুরোপুরি অনাবৃত।
সোভিয়েত রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদে দ্বিতীয় দিনের মতো ভেটোক্ষমতা প্রয়োগ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর প্রচেষ্টায় আট জাতির একটি প্রস্তাব আনয়ন করা হয়। প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি, সৈন্য প্রত্যাহার এবং শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের দাবী ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ঐ প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাবে, বাংলদেশে গোলযোগের মূল কারণ নির্ণয় করাতে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি দেয়া হোক-সোভিয়েতের এই প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে বাতিল হয়ে যায়। তখন আট জাতির যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে সসাভিয়েত ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
সাপ্তাহিক টাইমস পত্রিকায় উল্লেখ করা হয় যে, বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান দূতাবাসের ১৩০ জন বাঙ্গালী কূটনীতিবিদ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। এই সমস্ত বাঙালী কূটনীতিবিদরা পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চলিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা যুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলা, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনাবলী ঐ সমস্ত দেশের সরকার ও জন সাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, লণ্ডন, সুইডেন, হংকং, দিল্লী এবং কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম হাউস অব কমনসে এক ভাষণে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তাঁর সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা জানান। এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, যুদ্ধ বিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের যে কোন প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রয়োগ করবে। ব্রিটেন এই সমস্ত অসুবিধা মোকাবিলা করার এবং যুদ্ধের অন্তর্নিহিত কারণের সমাধান খুঁজে দেখার চেষ্টা চালাচ্ছে। ( দি টাইমস লণ্ডন)
নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েট ইউনিয়ন আরেকটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করে। উক্ত প্রস্তাবে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি ও লড়াই বন্ধ করার আহ্বান জানান হয়। একই সাথে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমাধান এবং সেখানকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।
পাকিস্তানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জেনারেল আগা মোহাম্মদ রাজা প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ বুশ এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ভারতকে সম্পূর্ণ ভাবে আক্রমণকারী বলেন।
মার্কিন সরকারের মুখপাত্রের যে বিবৃতিতে সামরিক তৎপরতার জন্য ভারতকে দোষী করা হয়েছে, সেই বিবৃতির উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস-এ এ্যান্টনি লিউইস লিখেছেন, ভারতের উদ্বেগের পরিমাণ ও তার ওপর চাপানো অসহনীয় বোঝার কথা মনে রাখলে বলতে হবে দেশটি বিরাট সংযম দেখিয়েছে।
মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা যশোর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। ক্যান্টনমেন্টের পেছনে রয়েছ অন্য একদল মুক্তিবাহিনী।
লণ্ডনের বহুল প্রচারিত ডেলি মিরর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিকামী মহিলা বলে অভিহিত করে। বিবিসি বলেছে, ভারত উপমহাদেশের লড়াইয়ে বৃহৎ শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্রে জল্পনা কল্পনা চলছে।
লণ্ডনের ফিনানসিয়াল টাইমস পত্রিকায় বলা হয়েছে, ভারতীয় বাহিনী একেবারে অপদাৰ্থ না হলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার দেশের পরাজয় ডেকে আনবেন, এটা নিশ্চিত।
লণ্ডনের স্কট পত্রিকা বলেছে, পাকিস্তান আন্তরিকভাবে চাইছে চীন ভারত আক্রমণ করুক, কিন্তু পিকিং সোভিয়েত ইউনিয়নকে না চটানোর ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
বর্তমান লড়াই শুরু করেছে পাকিস্তান – এ কথা স্বীকার করেও ডেলি টেলিগ্রাফের। অভিমত প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার মনে হয়, এ ছাড়া কোন পথ ছিল না।(ইউ এন আই)
সোমবার নয়াদিল্লীতে অভূতপূর্ব কুটনৈতিক তৎপরতা। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণার অব্যবহতি পরেই নানাদেশের কুটনৈতিক প্রতিনিধিগণকে একে একে ভারতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। যারা ভারতের মিত্র এবং যারা ভারতের ততটা মিত্র নয় এমন সব কূটনৈতিক প্রতিনিধিই একে একে পররাষ্ট্র দফতরে এলেন এবং ভারত কেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল, তা শুনে গেলেন। এদের মধ্যে ছিলেনঃ ব্রিটেন, বেলজিয়াম, আর্জেনটিনা, সিরিয়া, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালী, জাপান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, ভারত জাতিসংঘের সদস্য এবং বিশেষ করে যারা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য তাদের সকলকেই বলে দিয়েছে, অস্ত্র সংবরণের কোন আবেদন বা আপোষ রফার কোন প্রস্তাব ভারতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না। ভারতের ন্যুনতম দাবি মেটাতে হবে এবং সেটি হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশ থেকে দখলদার পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নিতে হবে। (আঃ বাঃ পঃ)
আনন্দবাজার পত্রিকায়, ‘বাংলাদেশের মসজিদে মোনাজাত’ শিরোনামে সুদেব রায় চৌধুরীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সীমানা ছেড়ে যশোরে মহেশ্বর পাঁচ মাইল ভিতরে ঢুকেছে তখন সেখানে মসজিদে নামাজ চলছিল। মসজিদে ভিড় তখন রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছেছে। ওরা জানালেন, শুধু এখানে নয় সমস্ত মুক্তাঞ্চলেই আজ স্বীকৃতির আনন্দে বাংলাদেশের মানুষ উদ্বেল। খোদার কাছে সবাই নতুন রাষ্ট্রের জয়যাত্রার জন্য দোয়া চাইছেন। মসজিদের ইমাম শেখ একবার আলি মণ্ডল জানালেনঃ ‘আল্লাহর কাছে মুজিব ভাই ও ইন্দিরাজীর জয় এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করে আমরা মোনাজাত করছি।’ (আঃ বাঃ পঃ ৭।১২।৭১)
বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের লক্ষ্য ঢাকা। আজ (ডিসেম্বর ৫) কলকাতার ইষ্টাৰ্ণ কমাণ্ডের জনৈক মুখপাত্র ভারতীয় সৈন্য বাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও সীমান্ত নিরাপত্তাবাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশের রণাঙ্গনে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে।
বাংলাদেশে আমাদের অভিযানের সাফল্যের একটা বড় সুবিধা হল যে মুক্তিবাহিনী আগেই বহু এলাকা মুক্ত করে রেখেছেন। (যুগান্তর ৬।১২।৭১)
৬নং সেক্টরের অধিনায়ক উইং কমাণ্ডার এস.কে.বাশারের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী ধরলা নদী অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম দখল করে। পাকসেনারা কুড়িগ্রাম থেকে লালমনিরহাট চলে যায়।(১০ম খণ্ডঃ ৭৬০ পঃ২)
সকালে ভারতের ইষ্টাৰ্ণ কমাণ্ডের চীফ অব ষ্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের পালিয়ে যাবার কোন পথ নেই। তাদের সরবরাহেরও কোন ব্যবস্থা নেই।… সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ থেকে পাক-বাহিনী খুলনা রোড ধরে পিছিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর বৈমানিকেরা আজ প্রথম বিমান নিয়ে শ্রীহট্ট জেলার পাকিস্তানী ঘঁটিগুলোতে বোমাবর্ষণ করে নির্বিঘ্নে নিজেদের ঘাটিতে ফিরে এসেছে। ভারতীয় সৈন্য বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহযোগিতায় সমস্ত খণ্ডেই পাক-সৈন্যদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। (যুগান্তর ৭৷১২।৭১)
বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল আখাউড়াতে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে মুক্তি পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ জহুর আহম্মদ চৌধুরী পতাকা উত্তোলন করে বলেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত কার দিন আর দূরে নেই। (যুগান্তর ৭।১২।৭১)আনুষ্ঠানিকভাবে আখাউড়ায় পতাকা তোলেন আলী আজম ভূঁইয়া এম এন এ।
কলকাতার ইষ্টাৰ্ণ কম্যাণ্ডের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, লাকসাম সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাবেক ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের লোকেরা সাহায্য করেছে এবং ফেনী দখলে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে।
যুগান্তরে ঢাকায় বিমান হামলা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানগুলি পশ্চিম দিক থেকে আঘাত হেনে আজ ঢাকা শহরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ-২১ ওয়াই এবং সহই -৭ এস গত শনিবার ভোরে শহরের ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং আধ ঘন্টা পর পর বিকেল পর্যন্ত বোমা বৰ্ষণ চলে। পরে রাতের অন্ধকারে আবার শুরু হয়। ভারতের দুটি বিমান খোয়া গেছে। একজন বিমান চালক উইং কমাণ্ডার বন্দী হয়।
জাতিসংঘ, বেসামরিক সংস্থা বিভিন্ন দূতাবাসের পরিবারবর্গ ইন্টার কন্টিনেন্টালে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা দেশ ত্যাগের অপেক্ষায় ছিল।
Further attempts on Dec. 6 to reach agreement on a resolution were all unsuccessful, as the Soviet Union was not prepared to accept a resolution which did not refer to the political situation in East Pakistan, and the United State and China would not accept one which did. A French resolution calling for an immediate ceasc-fire, reciprocal disengagement and the speedy creation of conditions for the voluntary return of the refugees was withdrawn after China,the United State and the Soviet Union had all raised objections. A second Soviet Union resolution calling for a cease-fire and effective action by the Pakistan Government towards a political settlement in East Pakistan giving immediate recognition to the will of the East Pakistan population as expressed in the elections of December 1970” was not pressed to a vote.
A feature of the Security Council’s debates was the bitter exchanges which took place between the Chinese and Soviet representatives. Mr. Huang Hua for example, asserted on Dec.6 that “the Soviet social imperialists are carrying out aggression subversion and expansion everywhere, to which Mr.
Malik retorted “The Chinese representative, with his vicious pathological slander against the Soviet Union, is aspiring to the role of the imperialist’s court gesture.” The Security Council finally decided on Dec.6 to refer the question to the General Assembly, under the “uniting for peace”procedure, which previously had been used only for times since its introduction in 1950. The resolution was approved by 11 voters 10 none, with France, Poland, the Soviet Union and the United Kingdom abstaining. (KCA, PP. 25070)
চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচনার মুখ্য
বিষয়গুলো ছিল এরূপঃ
পূর্ব এশিয়ার দু’দেশের লক্ষ্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। কমিউনিজম প্রতিরোধের ডালেস নীতি যে চরম ব্যর্থ হয়েছে, ভিয়েতনামকে পদানত করায় প্রয়াসে আমেরিকার সেনা বাহিনীর মর্যাদাও যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত চীনের সঙ্গে আমেরিকার ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার মরিয়া প্রয়াস তারই ইঙ্গিত দেয়। তবু আন্তর্জাতিক সমস্যাদির ব্যাপারে মিলে মিশে ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে দুটি দেশের পার্থক্যগুলি খুবই প্রখর।
পঞ্চাশের দশকের ওয়াশিংটন এবং পিকিং উভয়েই ভারতকে বন্ধুরূপে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কারণ, ভারতের অবস্থান সামরিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ; তা ছাড়া অর্থনীতিক দিক থেকেও ভারত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। শ্রী ডালেস তাঁর কমিউনিজম বিরোধী শৃংখলে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়কেই গ্রথিত করতে চেয়েছিলেন। ভারতকে পারেন নি, পাকিস্তানকে পেরেছিলেন।
পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে আমেরিকা শুধু যে পাকিস্তানের সামরিক শক্তিই। গড়ে দিয়েছে তাই নয়। তার আর্থিক বুনিয়াদ গড়ার দায়িত্বও নিয়েছে। পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে মস্কো– পিকিং বিবাদ বেশ পাকিয়ে উঠতে শুরু করে। ১৯৬২-এর যুদ্ধের পর পাকিস্তান চীনের দিকে আরো ঝুঁকে পড়ে। এই ঝোকের শিকার হন সেনটো এবং সিয়াটো। ঐ দুই সামরিক জোট ভেঙে দেওয়া না হলেও আমেরিকা এবং পাকিস্তান সমেত সকলেই বুঝতে পারেঃ জোট দু’টোতে প্রাণের চিহ্ন আর অবশিষ্ট নেই।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এঁদের ভূমিকার দৃষ্টিকোণ নির্ণয় মতামতঃ
এই নিরিখেই ওয়াশিংটন এবং পিকিং এর আচরণ বিচাৰ্য। নিরাপত্তা পরিষদে ওরা দু’জনেই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে, নেবে। সপ্তম নৌবহরের বঙ্গোপসাগরমুখী অভিযান কিংবা তিব্বতে চীনা সৈন্য সমাবেশ মানেই এই সময়ে এ দুই দেশ পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উন্মুখ। তারা জানে যে, তারা তা করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এসে পড়বে। শেষ পর্যন্ত পৃথিবী এক দীর্ঘায়ত যুদ্ধের সম্মুখীন হবে।
আমেরিকা এবং চীনের সশস্ত্র বাহিনীর সমাবেশের সাংবাদকে ভারত সরকার সামরিক দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেন না। সোমবার রাত্রে ভারত সরকারের একজন মুখপাত্র এই কথাই বিশেষ করে বোঝাতে চেয়েছেন।(আঃবাঃ পঃ১৬।১২।৭১)
মিত্রবাহিনীর বিমান বহরের বোমা বর্ষণে ঢাকা বিমান বন্দরের রানওয়ে বিধ্বস্ত। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ঢাকায় বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনী বর্তমান পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তান ধরে রাখতে পারবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, তার বাহিনী প্রতিরক্ষা মূলক যুদ্ধ করছে। এ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ১৬ টি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ময়মনসিংহের উত্তরে কৌশলগত যুদ্ধ চলছে। ভারত ঠাকুরগাঁয়ে প্রধান অভিযান চালিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী সহজে ঢাকা প্রবেশ করতে পারবে না। পাকিস্তান বাহিনী এলাকা পুনর্দখলের জন্য সিলেট অঞ্চলে।
সম্মিলিত বাহিনী যশোর আখাউড়া লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, হিলিতে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। পাকিস্তান বাহিনী এসব স্থানে যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে না পেরে পিছু হঠতে বিকল্প অবস্থান স্থাপন করে।
নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবের ওপর সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় দফা ভেটো। সোভিয়েত সরকারের একজন মুখপাত্র মস্কোতে বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন উদাসীন থাকতে পারে না। কারণ এখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা-স্বার্থ জড়িত রয়েছে।
রাতে আখাউড়া ও সিলেটের শমসেরনগর যৌথ বাহিনীর করায়ত্ত হয়।
কর্নেল শফিউল্লাহ, মেজর নাসিম, মেজর ভূঁইয়া, মেজর মঈন, লেঃ কবির মুক্তিবাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েক শ সৈনিককে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখে যাত্রা করে এবং শাহাবাজপুরে কুমিল্লা-সিলেট সড়কে অবস্থান নেয়।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী