১লা পৌষ ১৩৭৮ শুক্রবার ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
[এদিন বাংলাদেশের সর্বত্র একই প্রশ্ন, একই বিষাদ মাখা জিজ্ঞাসা-বঙ্গবন্ধু কবে ঢাকা ফিরছেন? বিশ্ব জনমতের চাপে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে পাকিস্তান, মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী হাতে এক লক্ষ হানাদার সৈন্য এবং নিয়াজী-ফরমান আলী সহ বহু হানাদার অফিসার বন্দী।]
-এদিন ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর প্রধান লেঃজেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও শ্রীমতী অরোরা ধানমন্ডিস্থ ৩২ নং রোডস্থ বঙ্গবন্ধুর ভবনে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধুর জ্যোষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা, কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে ছিলেন। শেখ মুজিবের জীবনের সাফল্যের অন্তরালে বেগম মুজিবের অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়। বেগম ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন বাঙালী নারীর সর্বগুণে গুণান্বিতা। নম্র স্নেহশীলা এবং দয়াবতী। বঙ্গবন্ধু একবার বলেছিলেন, আমার জীবনের দু’টো বৃহৎ অবলম্বন আছে-একটি আমার আত্মবিশ্বাস, অপরটা আমার স্ত্রী-আমার আকৈশোর গৃহিণী। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি। শেখ মুজিবের সাফল্যের পশ্চাতে এই অনন্যা মহীয়ষী রমনীর অবদান ব্যাপক।
-এদিন (১৭ ডিসেম্বর) সকালে খুলনাস্থ সার্কিট হাউস ময়দানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে হাজার হাজার বর্বর পাকসেনা আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে খুলনা শহর শত্রুমুক্ত হয়। এদিন বগুড়া শত্রুমুক্ত হয়। সেদিনের বর্ণনাঃ বগুড়া শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ের মিত্রবাহিনীর সাথে যে কজন মুক্তিযোদ্ধা শহরে প্রবেশ করে তাদের মধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন মিন্টু একজন। তাঁর ভাষায়, গোটা শহর ছিল জনশূণ্য, যুদ্ধের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল শহরবাসীদের পোড়া বাড়ীঘর। এখানে-সেখানে পড়েছিল লাশ, শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পাকিস্তানী ৫ টাকা, ১০ টাকা, ৫০ ও ৫শ টাকার অর্ধেকটা ছেড়া অসংখ্য নোট পড়েছিল। থানা রোড, সার্কিট হাউজ রোড, নবাববাড়ী রোড ও ষ্টেশন রোডের বেশীরভাগ অংশেই পড়েছিল শত্রুপক্ষের প্রচুর গুলীসহ অন্যান্য অস্ত্র।’ (সং) – এদিন কিশোরগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিসেনারা দলে দলে চারদিক থেকে শহরে প্রবেশ করে। ক্যাপ্টেন চৌহানের নেতৃত্ব ভারতীয় মিত্রবাহিনীও সেদিন কিশোরগঞ্জে আসে। জয় বাংলা শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়। -এদিন দুপুরে ২-৩৭ মিনিটে বাগেরহাট শহর শত্রুমুক্ত হয়। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল শালতলা, পেট্রোলপাম্প, পচাদীঘির পাড়ে পাকসেনারা বাঙালী পুলিশ, আনসারসহ ৩২ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৮ জুন কান্দাপাড় বাজারে পাক সেনাদের দোসর রাজাকাররা ২৩ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে জবাই করে হত্যা করে। ১৪ এপ্রিল শহীদ হন বাগেরহাট মহকুমা দপ্তর স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী চিত্তরঞ্জন মজুমদার। আরো শহীদ হন অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন, আজিজুর রহমান (আঃ লি কর্মী) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য প্রচেষ্টা ও ন্যাপ কমিউনিট পার্টির নেতৃত্বে চি-রলমারী এলাকায় মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠেছিল।
ঢাকায় পাক-বাহিনী আত্রনসমর্পণের অব্যবহিত পর আইন ও শৃংখলার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বিপদ আশঙ্কা করা হয় পাকিস্তানের আধা-সামরিক বাহিনীসমূহের মধ্যে গোড়া ইউনিটিগুলোকে নিয়ে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক মিশ্র উপাদানে গঠিত রাজাকার, সশস্ত্র জামাতে ইসলামীদের দ্বারা গঠিত আল-বদর এবং সশস্ত্র বিহারীদের আল –শামস এই তিন আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৬০/৭০ হাজার। এ ছাড়া যুদ্ধের শেষদিকে পাকিস্তানীরা বিহারী ও জামাতে ইসলামী কর্মীদের মধ্যে অকাতরে অস্ত্রশস্ত্র বিতরণ করে। পাক্সতানের বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে এদের অধিকাংশই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আত্নগোপন অথবা মফস্বল ও ভারত অভিমুখে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলেও এদের ধর্মান্ধ ও প্রতিহিংসা পরায়ণ অংশের পক্ষে কোন বেপরোয়া কাজই অসাধ্য ছিল না।
পাকিস্তান-সমর্থক গোড়া অংশকে চিহ্নিত করে তাদের নিবৃত্ত না করা পর্যন্ত ঢাকা শহরকে বিপদমুক্ত হিসেবে গণ্য করা অসম্ভব হত। নিয়াজীর আত্নসমর্পণের কয়েক ঘন্টা পরেই ইয়াহিয়া খান ‘পূর্ণ বিজয় লাভ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সংকল্প’ ঘোষণা করায় এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পূর্ণ শক্তিতে উপস্থিত থাকায়, নবতর যুদ্ধের আশঙ্কা তখনও সুরবাংশে বিরাজ করে ছিল। এই পটভূমিতে ঢাকায় উপনীত ভারতীয় সামরিক কমান্ড শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না-আসা পর্যন্ত বাংলাদেশ মন্ত্রীসভার নিরাপত্তা বিধানে তাদের সাময়িক অক্ষমতা জ্ঞাপন করেন। এর ফলে এবং মূলতঃ ভারত সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত জরুরী বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনে তিন অথবা চার দিন পরে মন্ত্রীসভার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য দিন স্থির করা হয়। (মূলধারা ৭১ পৃঃ ২৪১) ঢাকায় আইন-শৃংখলার পরিস্থিতি যে কত জটিল তা ১৭ ডিসেম্বর থীকে ক্রমশঃই উন্মেচিত হতে শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর রাত্রি থেকে বিজয়েল্লাসে মত্ত যে সব ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ১৭ ডিসেম্বর দেখা যায় তাদের অনেকের হাতেই চীনা (ak47) রাইফেল ইষ্টেঙ্গান। এইসব অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করার কোন প্রশন ছিল না। বস্তু এইসব অস্ত্র দাহ্রীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কখনো মুক্তিযোদ্ধাই ছিল না। অন্ততঃ মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ইউনিট নেতাই এদের সনাক্ত করেতে পারেনি, জানা যায়, এতদিন যেসব তরুণ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান না করে-এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সচ্ছল বা প্রভাবশালী অভিভাবকদের নিরাপদ আশ্রয়ে-বসবাস করছিল তারাও পাকিস্তানের পরাজয়ের পর বিজয় উল্লাসে বিজয়ী পক্ষে যোগ দেয়। মুখ্যতঃ এদের হাতেই ছিল পাকিস্তানী সৈন্য এবং সমর্থকদের ফেলে দেওয়া অস্ত্র অথবা অরক্ষিত পাকিস্তানী অস্ত্রাগার থেকে লুট করা অস্ত্রশস্ত্র এবং অঢেল গোলাগুলী।
ষোলই ডিসেম্বর নিয়াজীর আত্নসমর্পণের পর এই বাহিনীর উথপত্তি ঘটে বলেই অচিরেই ঢাকাবাসীরা কাছে এরা Sixteenth Division নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কাল্কখেপণ না করে এদেরই একটি অংশ অন্নের গাড়ী, বাড়ী, দকান-পাট, স্থাবর ও অস্থাবর বিষয় সম্পত্তি বিনামুল্যে, নামমাত্র মুল্যে দখল করার কাজে ব্যাপৃত হয়ে পড়ে। এদের পিছনে তাদের সৌভাগ্যান্বেষী অভিভাবকদের বা পৃষ্ঠপোষকদের সমর্থন কতখানি ছিল তা বলা শক্ত, ‘তবে ৪৭+৪৮ সালে ভারত- বিভাগ ও দাঙ্গার পর এই পক্রিয়াতেই অনেক বিষয়-সম্পত্তির হাতবদল ঘটেছিল। সুযোগ সন্ধানী সিক্সটিনথ ডিবিশন’ সৃষ্ট এ ব্যাধি অচিরেই সংক্রমিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের মধ্যে। তারপর কে ‘সিক্সটিনথ ডিবিশনের’ লোক, কেবা মুক্তিযোদ্ধা আর কেবা দল পরিবর্তনকারী রাজাকার-সব একাকার হয়ে এক লুটপাটের রাজত্ব শুরু করে যে, ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সর্বাধিক জরুরী দায়িত্ব পালন ছাড়াও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পুলিশী ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। (মূলধারা ৭১ পৃঃ ২৪৩)
-এদিন থেকে দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় নতুন নামকরণ দৈনিক বাংলাদেশ’-(দৈনিক বাংলা) এ দিনে ৮ কলাম শিরোনাম ছিলঃ সোনার বাংলা আজ মুক্ত, সাধিনঃ জয় সংগ্রামী জনতার জয়ঃ
জয় বাংলার জয়
বাংলাদেশ রিপোর্টার)
‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে গোটা বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনী কমান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার কাছে হানাদার পাক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হল আমাদের রক্তস্নাত বিজয়ের এক নতুন অধ্যায়। মুক্ত বাংলাদেশের মুক্ত রাজধানীর পবিত মহিমা নিয়ে উদ্ভাসিত হ’ল আমার সোনার বাংলার রক্তে রাঙ্গা ঢাকা নগরী। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আমার মাতৃভূমি। উল্লেখ্য ১৭ ডিসেম্বর ’৭১ শুক্রবার বিকেলে ‘প্রথম ইস্যুটি টেলিগ্রাফ হিসেবেম বের হয়। এ দিনের ‘দৈনিক বাংলাদেশ’ সংখ্যাটি রাজধানী নগরীর বিভিন্ন স্থানে পোষ্টারের মতো দেয়াল দেয়ালে জনগণ সেঁটে দিয়েছিল। সুদীর্ঘ ৯ মাস অবরুদ্ধ বাংলাদেশের জনগণ জয়বাংলা ধ্বনি তোলেনি বা কোন পত্রিকায় তাও পড়েনি। এ বিজয়ধ্বনি সারা বাংলাদেশের প্রতিটি হৃদয়ে বিজয়ের উল্লাস এনে দেয়। ‘জয় বাংলা’ বাঙালীর, রক্তে লেখা ধ্বনি। বিঃদ্রঃ- অন্য একটি প্রতিবেদন শিরোনাম ছিলঃ ইয়াহিয়া ভারতের সাথে যুদ্ধ চালানোর খায়েশ ত্যাগ করেছেন’।
-জয় স্বাধীন বাংলা শিরোনামে দৈনিক বাংলাদেশ’- এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়ঃ বাংলাদেস স্বর্ণকমলের মত ফুটে উঠুক তার নিজস্ব আভায়, এই আমাদের আন্তরিক কামনা। বাঙালীর শৌর্য ও বীর্য বিশ্ববাসীকে চমকিত করেছে। বাঙালীরা একথা প্রমাণ করেছে যে, কোন অশুভ শক্তিই তাদের পরাজিত করতে পারে না। বাঙালী অজেয়। এক নতুন সভ্যতা গড়ার প্রেরণা ও উদ্যম নিয়ে বাঙালী জাতি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। একথা সুনিশ্চিত, হানাদার শত্রুদের ধ্বংসলীলাকে এদেশের সংগ্রামী মানুষ মুছে ফেলবে নতুন সৃষ্টির স্বাক্ষরে। উল্লেখ্য স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ বা পরোক্ষ যোগাযোগ রাখার জন্য মে ৭১ মাসে পাক-সামরিক চক্রের গোয়েন্দা বিভাবে দৈনিক বাংলার নয়জন সাংবাদিকদের উপর বিশেষ নজর রেখেছিল। তাঁরা হলে সর্বজনাব কবি হাসান হাফিজুর রহমান, আব্দুল তোয়াব খান, আহমেদ হুমাতুন, কবি শামসুর রহমান, নির্মলসেন, কবি ফজল
শাহাবুদ্দিন, আলী আশরাফ, সালেহউদ্দিন ও হেদায়েত হোসেইন, মোরশেদ প্রমুখ।
-আনুষ্ঠানিকভাবে হানাদার পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। মিত্রবাহিনী কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রাজেন্দ্রনাথ ও মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ (সাব সেক্টর কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন বাবুল এর যৌথ নেতৃত্বের কাছে সকাল ১১ টায় ফরিদপুর পুলিশ লাইনে হানাদার পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে। শাহ আবু জাফরের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর বীর-যোদ্ধারা ফরিদপুর আম্বিকা ময়দানে জনসভার মাধ্যমে বিজয় উল্লাস করে। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২২ এপ্রিল পাকসেনারা ফরিদপুর দখল করার পর এদিন ছিল মুক্তির সোনালী দিন। ৫ মার্চ ফরিদপুরের এই আম্বিকা ময়দানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। উল্লেখ্য এই ময়দানে ১ মে ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ,মহাত্মা গান্ধী শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানে দাঁড়িয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস ঘোষণা করেছিলেন, “আমাকে রক্ত দাও, আমি স্বাধীনতা দেবো। উল্লেখ্য, নিখিল ভারত কংগ্রেস সভাপতি রায় বাহাদুর আম্বিকা চরণ মজুমদারের নামনুসারে ১৯১৭ সালে ফরিদপুরবাসী এ ময়দানের নামকরণ করেন। বিপ্লবী ফণী মজুমদার তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র। বাংলাদেশের প্রথম খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী।
Disorders in Dacca
Dhaka was virtually in a state of anarchy. The administration and the police had disappeared, and the only force capable of maintaining order was 800 Indian troops. The Nucleus of the new administrations, which was established on Dec. 17, consisted of about 12 civil servants heads by Mr. Ruhul Quddus. There was no money in the treasury. The city was short of food and without petrol, and the telephone service had largely been destroyed in the fighting. (KCA, P-25109)
এ দিনের বিজয় উল্লাস সম্বন্ধে উল্লাস সম্বন্ধে লিখেছেঃ Bangladesh out of war a nation is born.
Jai Bangla! Jai Bangla!
From the banks of the great Ganges and the broad Brahmaputra from the emerald lields and mustard-coloured hills of the country side, from the countless Squares of countless village, came the cry: Jai Bangla’ “Victory To Bengal, Victory to Bengal.
“দি নিউইয়র্ক টাইমস”- এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিপর্যয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও কূটনৈতিক বিপর্যয় বলে গণ্য হওয়া উচিত। শেষ মুহূর্তে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীকে নিরস্ত্র করার উদ্দেশ্যে “হোয়াইট হাউস” (অর্থাৎ মার্কি প্রেসিডেন্ট) কর্তৃক মস্কোর প্রতি সাবধানবাণী উচ্চারণ এবং বঙ্গোপসাগরের দিকে মার্কিন নৌবহর পাঠিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের চোখে আমেরিকার মর্যাদা রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। এই নিবন্ধে আরও বলা হয়, উপমহাদেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আমেরিকাকে বহুলাংশে দায়ী করা চলে। পূর্ববঙ্গে সংঘঠিত পাশবিক অত্যাচার ও নির্যাতন সম্পর্কে মৌনভাব অবলম্বন করে এবং পাকিস্তানকে ২৫ মার্চের পরেও সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যদান অব্যাহত রেখে নিক্সন প্রশাসন ভারতেক রাশিয়ার দিকে ঠেলে দেয়। পূর্ববঙ্গ সমস্যার বাস্তব পরিস্থিতি ভিত্তিক রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে ভারতের উপর সোভিয়েত প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব ছিল।
মার্কিন প্রশাসন এ সম্বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে সোভিয়েত প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। ইসলামাবাদের সামরিক চক্র টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই। তা’ সত্ত্বেও পাকিস্তানের সামরিক একনায়কত্বের প্রতি একগুয়ের মত সমর্থনদান করে প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত প্রভাব বৃদ্ধির সহায়ক হন। (“দি নিউইয়র্ক টাইমস” ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১) “দি টাইমস” –এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, পাকিস্তান কর্তৃক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গে যুদ্ধের অবসান হওয়ায় সবাই কৃতজ্ঞতা বোধ করবে। পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কর্তৃক অপসারিত হয়। পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধিরা না চাইলে পূর্বাবস্থা ফিরে আসবে না। গত আট মাসের ঘটনাবলীর পর তা’ আর সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সরকারকে শীঘ্রই পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করে সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, মিসেস গান্ধী। এ সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায় তাঁর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত কখনও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর দেশ শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর সম্পর্ক বজায় রাখবে। মিসেস গান্ধীর আশ্বাস সম্পর্কে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তাদের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের সরকার যতদিন রাখার প্রয়োজন মনে করবে তাঁর চেয়ে বেশিদিন বাংলাদেশে রাখা হবে। (“দি টাইমস”, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী