পাক নির্বাচন
পরবর্তীকালে পাক-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করবে
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ৩ জানুয়ারি- “সম্প্রতি পাকিস্তানের নির্বাচনে যে ঘটনা ঘটেছে তাকে আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানানাে উচিত। পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব-পাকিস্তানকে ক্রমাগত শােষণের বিরুদ্ধে এক বাক্যে নির্বাচনের রায় ঘােষিত হয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গ শান্তি সংসদ আয়ােজিত পাকিস্তান নির্বাচন ও পাক ভারত সম্পর্কে তাদের দপ্তরে এক আলােচনা সভায় কমিউনিস্ট নেতা অধ্যাপক হীরেন মুখার্জী গতকাল এই কথা বলেন।
পাক-ভারত সম্পর্কের উন্নীত কামনা করে শ্রী মুখার্জী বলেন যে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চাপে প. পাকিস্তানের ভূট্টোকে পর্যন্ত ইসলামী সমাজবাদের কথা বলতে হয়েছে। এবারকার এই নির্বাচনের ফলে পরবর্তীকালে পাক-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করবে। একটি ভাষা নিয়ে পাকিস্তানের জনজাগরণ সত্যিই উল্লেখযােগ্য। বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের দেশে আন্দোলনের ক্ষেত্রে লেখকরাই প্রধান প্রতিবন্ধক বলে শ্রী মুখার্জী জানান।
অধ্যাপক বাসব সরকার তাঁর ভাষণে বলেন যে, পাকিস্তানের নির্বাচনে দুই দিকে দু’ ধরনের সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। একদিকে পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের উপনিবেশবাদ থেকে মুক্ত হওয়া এবং তাঁদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সগ্রাম সফলের পরিণতি। অপরদিকে পশ্চিম অংশে সামরিক-শিল্প সমাহারের সঙ্গে ভূট্টোর আঁতাত। কাশ্মীর ও ফারাক্কা এই দুটো সমস্যার সমাধান না হলে পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারীগােষ্ঠী সন্তুষ্ট হবে না বলে অধ্যাপক সরকার জানান।
সভার সভাপতি শ্রী বিবেকানন্দ মুখােপাধ্যায় বলেন- যে, পাকিস্তানের নির্বাচনে গত ২২/২৩ বছর পরে প্রথম জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা নির্ধারণ ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ভােটাধিকার দান গণতন্ত্রের সঠিক রূপায়ণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পাকিস্তানের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদের জয়লাভ ঘটেছে। জাতীয়তাবাদের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে। এবং পরবর্তীকালে এর মাধ্যমে একটা বিরাট জনজাগরণ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রবাহিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে আগামী দিনে সুন্দর সুস্থ কল্যাণরূপ দেখার আশা শ্রী মুখােপাধ্যায় তাঁর ভাষণে করেন। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে সর্বশ্রী কপিল ভট্টাচার্য ও প্রখ্যাত লেখক শ্রীমনােজ বসু ছিলেন।
সূত্র: কালান্তর, ৪.১.১৯৭১