ভাসানী ও বাজপেয়ী
সদ্য নির্বাচিত পাকিস্তান এসেমীর প্রথম অধিবেশন ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকারীভাবে ঘােষণা করা হয়েছে। পূর্ববাংলা এই ঘটনাকে একটি জয় বলে বিবেচনা করবে। কারণ এর আগে পূর্ববাংলায় কখনাে কোন কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন বসে নি। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের সঙ্গে সঙ্গে পারস্পরিক বিবাদও দূর করা রাষ্ট্রীয় ঐক্য রক্ষার পথ। পরস্পরকে নিকট করার যেকোন ইতিবাচক প্রয়াস সে কারণে খুবই মূল্যবান। ভারতের প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রী মানুষের পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক বিকাশের প্রতিক্রিয়ায় পাক-ভারত স্বাভাবিক সম্পর্কে ও সৌহার্দের বিকাশেরও স্বপ্ন দেখেন অন্যদিকে ভারতের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলির দৃষ্টি হল সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে। জনসংঘের নেতা তাে বলেই বসেছেন যে, পাকিস্তানের নির্বাচনের পর ভারতবর্ষকে নাকি এখন দুটো পাকিস্তান’ ধরে নিয়ে কূটনৈতিক কার্যধারা স্থির করতে হবে। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ঝগড়া বাধলে এদেশের জনসংঘ খুশি, আর ওদেশে ঐ একই বিভেদীয় রাজনীতির নেতা হলেন শ্রী ভাসানী। শ্রী ভাসানী বাণী দিচ্ছেন, পূর্ব বাংলায় এখন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের পণ্য বয়কট করতে হবে। পূর্ব বাংলায় শ্রী ভাসানী চীনের নিকট বিভেদের রাজনীতি শিখেছেন। এদেশে জনসংঘ কাদের উদ্দেশ্য পূরণ করে ? চীন জনসংঘের চোখের বালি। কিন্তু মার্কিনী বিভেদনীতি জনসংঘের খুবই পেয়ারের। লেনিন বলেছিলেন, অতিবাম ও অতি দক্ষিণ রাজনীতির ফারাক মাত্র একটি পা। পাকিস্তানে শ্রী ভাসানী এবং ভারতে শ্রী বাজপেয়ীর রাজনীতি টাকার এ পিঠ ওপিঠের মত পরস্পর সংলগ্ন।
সূত্র: কালান্তর, ২.১.১৯৭১