পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রথম ভারতীয় বিমান ছিনতাই
জম্মুর আকাশ থেকে জোর করে লাহাের বিমান বন্দরে অবতরণ করানাে হয়েছে
নয়াদিল্লী, ৩০ জানুয়ারি-ভারত-পাকিস্তান উপ-মহাদেশের আকাশে সর্বপ্রথম একটি ভারতীয় বিমান ছিনতাই হল। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইনস্-এর একটি ফোকার ফ্রেণ্ডশিপ বিমানকে পিস্তলের মুখে জোর করে পাকিস্তানের লাহাের বিমান বন্দরে নামাতে বাধ্য করা হয়েছে।
দিল্লীস্থ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে পাঠিয়ে বিমানটি ফেরৎ দেওয়ার কথা ভারত সরকার বলেছে।
বিমানটি শ্রীনগর থেকে জম্মু অভিমুখে যাচ্ছিল। কাশ্মীর সরকার সম্প্রতি এক কুখ্যাত ভারত-বিরােধী দলকে গ্রেপ্তার করার এক সপ্তাহের মধ্যেই বিমান ছিনতাই-এর ঘটনা বিভিন্ন মহলে বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের অসামরিক বিমান চলাচল দপ্তরের ডাইরেক্টর জেনারেল দিল্লীকে জানিয়েছেন যে, ছিনতাইকারীরা বিমানটি থেকে নেমে এলেই লাহাের থেকে এটি যাত্রা করবে।
ইউ এন আই খরব দিচ্ছে, ভি-টি-ডি-এম-এ ফোকার বিমানটি আজ তার নিয়মমাফিক যাত্রা করার জন্য শ্রীনগর ত্যাগ করে। বিমানে তখন ৩২জন যাত্রী ছিলেন। জম্মু বিমান বন্দরে নামবার কয়েক মিনিট আগে পাইলট ক্যাপ্টেন কে, কে, কাচরু রেডিও বার্তায় জানান যে, বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে। পরক্ষণেই বিমানটি লাহােরের দিকে উড়ে যেতে দেখা যায়।
“ছিনতাই”-এর খবরটি শােনার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত সরকার পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যােগাযােগ করে বিমান, যাত্রী অন্যান্য মালপত্র অবিলম্বে প্রত্যার্পণ করার দাবি করেন।
ছিনতাইকারীদের এখনও সনাক্ত করা যায় নি। কিভাবে ঘটল ফোকার বিমানটি যথাসময়ে শ্রীনগর ত্যাগ করে জম্মুর দিকে উড়ে যায়। জম্মু বিমানবন্দরে নামবার ঠিক মুখে হঠাৎ যাত্রীদের মধ্য থেকে দু’জন পিস্তল দেখিয়ে বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন কে, কে, কাচরুকে লাহােরের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। পাইলটের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পরই জম্মু বিমানবন্দর থেকে লাহাের বিমানবন্দরের সঙ্গে যােগাযােগ করা হয়। “ফোকারটি” ভারতীয় সময় ১টা ২৪ মিনিটে লাহাের বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
দুই জন ছিনতাইকারী ছাড়া অন্যান্যরা বিমান থেকে নামলে লাহাের বিমান বন্দরে তাঁদের ভােজে আপ্যায়িত করা হয়। এরা বিমান থেকে নামতে অস্বীকার করেছেন।
পাক রাষ্ট্রদূতকে তলব দিল্লীতে ছিনতাই-এর খবর পৌছবার সংগে সংগে সরকারী মহলে বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সাজ্জাদ হায়দারকে ডেকে পাঠান হয়। পররাষ্ট্র সচিব শ্রী এস কে ব্যাজাজ তাঁকে বলেন যে, অবিলম্বে ভারতীয় বিমান, তার যাত্রীও অন্যান্য মালপত্র ভারতকে ফেরৎ দেওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে তিনি যেন জানান। শ্রী হায়দর ভারতের এই বক্তব্য তার সরকারকে জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দেন।
এদিকে, পাকিস্তানের অ-সামরিক বিমান চলাচল দপ্তরের ডাইরেক্টর জেনারেল ভারতের ডাইরেক্টর জেনারেলকে এক বার্তায় জানায় যে, আটক বিমানটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসারটি আরও জানিয়েছেন যে, ছিনতাইকারীরা যাতে বিমানটি ত্যাগ করে তার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা ছেড়ে দিলেই বিমানটি নির্বিঘ্নে ভারত অভিমুখে যাত্রা করতে পারবে।
ভারত সরকারের অ-সামরিক বিমান চলাচল, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী ড. করণ সিংহে সব সময়েই ওয়াকিবহাল রাখা হচ্ছে।
আজ রাত্রে আসতে পারে অ-সামরিক বিমান চলাচল দপ্তরের ডাইরেক্টর জেনারেল ক্যাপ্টেন সি. সি. আর্য জানিয়েছেন, আজ রাত্রে লাহাের থেকে বিমানটি যাত্রা করলে দিল্লী অথবা অমৃতসরে অবতরণ করবে। বিমানটিতে ২৮ জন যাত্রী ও ৪জন চালক ছিলেন। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে সম্প্রতি নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযােগে দিল্লীর পাকিস্তানী হাইকমিশনের প্রথম সচিবকে ভারত সরকার অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বলে ঘােষণা করেন। তিনি ভারত ত্যাগও করেছেন। তারপরেই এ ঘটনা ঘটল।
সূত্র: কালান্তর, ৩১.১.১৯৭১