You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.08 | পূর্ব বাংলা থেকে শিক্ষা নিন পশ্চিমবঙ্গকে বধ্যভূমিতে পরিণত হতে দেবেন না : ভূপেশ গুপ্ত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব বাংলা থেকে শিক্ষা নিন পশ্চিমবঙ্গকে বধ্যভূমিতে পরিণত হতে দেবেন না : ভূপেশ গুপ্ত
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা ৭ মার্চ বাংলা দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত হতে দেবেন না। সন্ত্রাসের রাজনীতি চালু করে সি-পি। এম বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করতে চায়। আসন্ন নির্বাচনে তাই সি-পি এমকে পরাস্ত করুন। কমিউনিস্ট নেতা শ্রী ভূপেশ গুপ্ত আজ এন্টালীতে এক জনসভায় এই আহ্বান জানান। শ্রী গুপ্ত বলেন ব্যক্তি সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি যে সংগ্রামী মানুষের রাস্তা নয় পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী মানুষ ও তার নেতা শেখ মুজিবর রহমান তা পুনরায় প্রমাণ করছেন। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কাছ থেকে এই শিক্ষা আমাদের নিতে হবে। এন্টালী কেন্দ্রে ইউ এল ডি এফ প্রার্থী ড. এ এম ও গনি এবং লােক সভায় শ্রী আশুতােষ ব্যানার্জীর সমর্থনে আয়ােজিত জনসভায় কমিউনিস্ট নেতা শ্রী ভূপেশ গুপ্ত সুদীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি তাঁর। ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গণ আন্দোলনের উল্লেখ করে বলেন এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে জনতার ঐক্যই হলাে মূলশক্তি এবং এই শক্তির সামনে যে কোন ধরনের শক্তিই পরাস্ত হতে বাধ্য। তিনি বলেন পূর্বপাকিস্তানের শ্রদ্ধেয় নেতা শেখ মুজিবর রহমান এর ওপর দুইবার আক্রমনের চেষ্টা হয় এবং তাঁকে দুইবার হত্যার চেষ্টা হয় কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কখনাে পাল্টা খুন কিংবা সন্ত্রাসের রাস্তা গ্রহণের জন্য বলেন নি। তিনি জনতার ঐক্যের শক্তির ওপরই আস্থা রাখার জন্য বলেছেন এবং এই শক্তির জোরেই তিনি জয়লাভ করেছেন। শ্রী ভূপেশ গুপ্ত তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন যে সি পি এম সি পি আইকে দালাল বলছে অথচ বােম্বাই এবং অন্ধ্রে নির্বাচনে অনেকগুলি আসনে সি পি এম সম্পাদক সুরাইয়া প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে সি পি আই প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন। শ্রী গুপ্ত প্রশ্ন করেন যে, হাওড়া স্টেশনে এলেই সি পি এমের কাছে সি পি আই দালাল হয় আর বেজওয়াদা স্টেশনে সি পি আই কেমন করে প্রগতিশীল হয়?
শ্রী গুপ্ত বলেন যে, সি পি এম মনে করে, তাদের কাছে হত্যা করার নীতিই হলাে তাদের মৌলিক অধিকার। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন যে, সি পি এম দলের হাতে ক্ষমতা থাকলে তারা প্রবীণ নেতা সুরেন ধর চৌধুরীর হত্যাকারীকে ভারতরত্ন উপহার দিত।
শ্রী গুপ্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, একজন ব্যক্তিকে পাইপগান দিয়ে হত্যা করা যায় কিন্তু তার নীতি ও আদর্শকে কি পাইপগান দিয়ে হত্যা করা যায়? নির্বাচনের পর সি পি এম তার বিরােধীদের নাম তালিকাভূক্ত করে জনগণের দরবারে বিচার করবেন- চাবুক মারবেন বলে সি পি এম নেতৃবৃন্দ যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শ্রী ভূপেশ গুপ্ত বলেন, নির্বাচনই তাে জনগণের দরবার। সি পি এম জনগণের এই বিরাট দরবার কে ভয় পায় আর বিরােধীদের উপর ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জয়লাভ করতে চায় তাদের উপরিউক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত তাঁর ভাষণে পশ্চিম বাংলার সমস্ত বিষয় উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান ও অগ্রগতির জন্য চাই সমস্ত বামপন্থী গণতান্ত্রিক মানুষের ঐক্য ও মিলিত কর্মপন্থা।
এই সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রী প্রমথ ভৌমিক। সভায় সর্বশ্রী আশুতােষ বন্দোপাধ্যায় ও দিলীপ ভট্টাচার্যও বক্তব্য রাখেন। কেন্দ্রের প্রার্থী শ্রী মণি সান্যালের উপর জঘন্যভাবে হামলা করা হয়েছে। এই সবই হল সি-পি-এমের সন্ত্রাসবাদী নীতির ফলস্বরূপ। এই ধরণের কলঙ্কময় কাজ দুনিয়ার কোন দেশের কমিউনিস্ট পার্টি করে না। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা যারা সমগ্র দেশকে পথ দেখিয়েছে তারা কখনও এই ধরনের সন্ত্রাসবাদকে সহ্য করবে না। সি পি এমের নীতির ফলেই এ রাজ্যে সি আর পি মিলিটারী এসেছে। তারা নিজেদের পথ ত্যাগ করলেই এখানে শান্তি বিরাজ করবে বলে শ্রী রাও জানান।
ইন্দরা গান্ধী প্রসঙ্গে শ্রী রাও বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ, রাজন্যভাতা বিলােপের বিল নিজ চেষ্টায় করেন নি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সহ অন্যান্য বামপন্থী দলের আন্দোলনের চাপে পড়ে তিনি উক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রী সুশীল চক্রবর্তী। সর্বশ্রী প্রকৃতি মিত্র, হরেন চট্টোপাধ্যায়, অজয় দাশগুপ্ত এবং আলিপুর লােকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শ্রী ইন্দ্রজিং গুপ্ত ভাষণ দেন।

সূত্র: কালান্তর, ৮.৩.১৯৭১