You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.08 | ৪টি শর্ত মানা না হলে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বর্জন | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

৪টি শর্ত মানা না হলে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বর্জন
ঢাকার সুবিশাল সভায় মুজিবর রহমানের চরম হুঁশিয়ারি

নয়াদিল্লী, ৭ মার্চ (ইউ এন আই) – অবিলম্বে সমগ্র দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হলেই আওয়ামী লীগ ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের সভায় যােগ দেবে। আজ ঢাকার এক সুবিশাল জনসভায় শেখ মুজিবর রহমান একথা ঘােষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার আরও তিনটি শর্তের কথা ঘােষণা করেন।
এই শর্তগুলি হচ্ছে ? – সৈন্যদের ব্যারাকে পাঠাতে হবে-নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে-পূর্ব পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে। আজ ঢাকায় রমনা রেসকোর্স মাঠে এক বিরাট সমাবেশে শেখ মুজিবর রহমান তার বহু প্রত্যাশিত ভাষণে উপরােক্ত ৪টি দাবির কথা ঘােষণা করেন।
শেখ মুজিবর দুঃখ প্রকাশ করেন যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাম্প্রতিক সংকটের দায়িত্ব তার উপর আরােপ করতে চেয়েছিল। শেখ মুজিবর অভিযােগ করেন যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামত অগ্রাহ্য করে সংখ্যালঘু দলের সঙ্গে সায় দিয়েছেন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে অনুরােধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই অনুরােধ গ্রহণ করা হয় নি। বরঞ্চ, সংখ্যালঘু দলের নেতা শ্রী জেড এ ভুট্টোর পরামর্শ ক্রমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ৩ মার্চ ধার্য করা হয়।
শেখ মুজিবর বলেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য লালায়িত নন-তিনি জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান।
উল্লেখ্য যে ইদানিং শ্রী ভুট্টোর এক প্রস্তাব অনুসারে প্রচার চালান হয়েছিল যে শেখ মুজিবর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রী জেড এ ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মনােনীত হবেন এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রপতি পদেই বহাল থাকবেন।
শেখ মুজিবর রহমান এই প্রচারকে লক্ষ্য করেই তার ভাষণে উপরােক্ত মন্তব্য করেন।
শেখ মুজিবর রহমান উল্লেখ করেন যে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের পর তিনি বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলােচনা শুরু করেন এবং একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য তাদের সহযােগিতার আহ্বান জানান। শেখ মুজিবর আরও বলেন যে তিনি সেই প্রসঙ্গে এও ঘােষণা করেন যে পরিষদের কোন সদস্যা যদি ন্যায় সঙ্গত অভিমত জানান তবে তা নিশ্চয়ই বিবেচিত হবে।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, এটা খুবই দুর্ভাগ্য যে, এত কিছু করা সত্ত্বেও জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার বিরুদ্ধে সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে এক অসহযােগিতার অভিযােগ আনেন।
তিনি অন্যান্য দলের সহযােগিতা গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং বলেন “আমরা ভাইয়ের মত বসবাস করতে পারি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও বন্ধুতৃভাবে আমাদের সমস্যা সমাধান করতে পারি।”
শেখ মুজিবর রহমান তাঁর ভাষণে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার রায়কে অবমাননা করার অভিযােগ উত্থাপন করে বলেন যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখার এবং ২৫ মার্চে পুনরায় অধিবেশনের দিন ধার্যের আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে শেখ মুজিবরের সঙ্গে কোন আলােচনাও করেননি।
শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তান বেতারে শেখ মুজিবর উল্লিখিত ৪টি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
‘বি বি সি’র খবরে বলা হয়ঃ শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য অপসারণের কথা বলেছেন এবং সামরিক আইন তুলে নেওয়ার জন্য শেখ মুজিবরের দাবি পূর্ব পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ঘােষণা অনুসারে নতুন জাতীয় পরিষদে সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত সামরিক শাসন অব্যাহত থাকবে এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন থেকে ১২০ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদ যদি সংবিধান রচনা ব্যর্থ হয় তবে এই পরিষদ বাতিল করা
হবে।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান আরও বলেছেন যে, যদি তিনি নয়া সংবিধানের স্বীকৃতি দেন তবেই বে-সামরিক প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

সূত্র: কালান্তর, ৮.৩.১৯৭১