You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: রোববার ২১শে মাঘ, ১৩৭৯ ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

দুর্নীতি দমন বিভাগে মামলা

সরকারি কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং অন্যান্য সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি লোকের বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যান্য দুর্নীতি জনিত মোট দশ হাজার দায়েরকৃত মামলায এ পর্যন্ত ঝুলছে। এ তথ্য জানানো হয়েছে সরকারি সূত্র থেকে।
প্রকাশ্য দ’হাজার একশ’টি বিভিন্ন মামলা বিভিন্ন আদালতের আওতাধীন রয়েছে। এক হাজার তিনশ’টি মামলার ব্যাপারে এখনও অনুসন্ধান চলছে এবং প্রায় ছ’হাজার ছয়শ’টি অভিযোগ দুর্নীতি দমন বিভাগ অনুসন্ধানের জন্য হাতে নিয়েছেন।
রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এবং তছরুপের ব্যাপারে এই বিভাগ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইতিমধ্যে এই বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ বিনষ্ট করার দায়ে কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
দুর্নীতি দমন বিভাগ দুর্নীতি দমনে আত্মনিয়োগ করেছেন জেনে সকলে খুশি হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। দুর্নীতির মূল উৎপাটিত হোক, দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসুক এটা সকলেরই কাম্য। দুর্নীতি দমন বিভাগ-এ পর্যন্ত দশ হাজার মামলা দায়ের করেছেন-এ সংবাদে একথাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, দুর্নীতি দমন করতে দুর্নীতি দমন বিভাগ বদ্ধপরিকর।
দুর্নীতি দমন বিভাগের মহৎ উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে আমরা অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটি কথা বলতে চাই। অতীতে আমরা দেখেছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মামলার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে। কাজের কাজ বিশেষ একটা হয়নি। অবস্থাটা যথা পূর্বং তথাই রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের এমনই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক এটা কারো কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতিবাজদের সমূলে উচ্ছেদ করার জন্য বহুবার উদ্যত কন্ঠে আহ্বান জানিয়েছেন। এতৎসত্ত্বেও কিন্তু দুর্নীতির অবসান এখনো হয়নি।
কথায় বলে ক্ষেতের বেড়া যদি খায় তাহলে আর কিছুই থাকে না। স্বাধীনতা লাভ করার পর কিন্তু ঠিক এমনই একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের একদল মানুষ রাতারাতি বড়লোক হবার জন্য যেনতেন প্রকারেন ভাবেই হোক না কেন অর্থ উপার্জনে মেতে উঠছে। আর তারই ফলশ্রুতিতে দুর্নীতির স্রোত বইছে সর্বত্র। একা সরকারের পক্ষে দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে প্রশাসন যন্ত্রের সংগে সংশ্লিষ্ট সকলকে। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মামলা দায়ের করা আর সেই মামলাকে সাক্ষী-সাবুদ সহ আদালতে হাজির করা খুবই কঠিন কাজ। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের গাফিলতি এবং জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতার অভাবে মামলা টিকানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া খোদ দুর্নীতি দমন বিভাগের বিরুদ্ধে অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে অতীতে। একদিকে এ অবস্থা অন্যদিকে মামলার ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় পদ্ধতি গত ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য অহেতুক কালক্ষেপণ। একই মামলা বছরের-পর-বছর আদালতে ঝুলতে থাকে ফলে পুলিশের পক্ষে ঠিকমতো সাক্ষীসাবুদ ও দলিলপত্র হাজির করা সম্ভব হয় না। এছাড়া পুলিশ বিভাগও অনেক সময় যেকোনো কারণেই হোক না কেন মামলার প্রতি আগ্রহ দেখান না। এমনই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মামলার পাহাড় জমে। পুরাতন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগ হিমশিম খেয়ে যায়, সুতরাং নতুন মামলা দায়ের করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা আর সম্ভব হয় না। এছাড়াও অমুকের ‘চাচা’ ‘ভাতিজা’ বা আত্মীয়তার সূত্র ধরে প্রশাসন যন্ত্রের ওপরতলায় যাঁরা বসে আছেন তাদের মধ্যে থেকেও তদবির চলে। আর সবকিছু মিলে পুরো ব্যাপারটাই খায় তালগোল পাকিয়ে।
এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই একদিকে যেমন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মামলার বিচার কে ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করতে হবে অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট দফতর, পুলিশ বিভাগ ও জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হবে দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা। আর তা যদি না হয় তাহলে অতীতে যা ছিল এবং যেমনটি ছিল ঠিক তেমনটিই থাকবে-অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।

গাধা পানি খায় তবে……

প্রখ্যাত মিসরীয় সাংবাদিক জনাব হাসানায়েন হাইকল দিল্লি থেকে রাজওয়ালপিন্ডি যাবার পথে লাহোর বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন যে আপনারা অতীতকে ভুলে যান এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিতে থাকার নীতি গ্রহণ করুন।
জনাব হাইকল কাররোর প্রভাবশালী দৈনিক আল-আহরাম এর প্রধান সম্পাদক এবং প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত। তিনি আরো বলেন, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছানুসারে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জনাব হাইকল লাহোর বিমানবন্দরে যা বলেছেন ঠিক এ কথাই হয়তো তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো কে বলবেন। কথায় বলে আক্কেল মন্দ কো লিয়ে ইসারা কাফি অর্থাৎ বুদ্ধিমানের জন্য ইঙ্গিতেই যথেষ্ট। বিমানবন্দরে এ বক্তব্য পেশ করে তিনি পরোক্ষভাবে জনগণকেই মনের কথাটি জানিয়ে দিলেন। কিন্তু মুশকিল হল লারকানার নবাবজাদা জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো কে নিয়ে। তিনি সহজ কথাটি সহজভাবে কোন সময় গ্রহণ করতে চান না। অতীতেও চাননি এবং ভবিষ্যতেও যেতে চাইবেন এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী তো সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে পাকিস্তানের মনোভাব এখনো বদলায়নি।
জনাব ভুট্টো সকালে যা বলেন দুপুরে তা বলেন না আবার দুপুরে যা বলেন রাতের বেলা তার সম্পূর্ণ বিপরীত কথাই বলেন। সুতরাং এমনতাবস্থায় তার মতি গতি পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে একথাও ঠিক যে পাকিস্থানে বর্তমানে যে হালচাল চলছে তাতে কাশ্মীর পথ ধূলায় অন্ধকারের মতোই অবস্থা। জনাব হাইকল একজন অভিজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি এ উপমহাদেশে স্থায়ী শাস্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি লক্ষ্য রেখে যা বলেছেন আজ হোক কাল হোক পাকিস্তানকে তা মেনে নিতেই হবে। জনাব ভুট্টো যদি বাস্তব অবস্থা চাপে পড়ে সময় পেরিয়ে যাবার পর সঠিক পথে আসেন তবে এ কথাই আবার প্রমাণিত হবে যে, গাধা পানি খায় তবে ঘুরিয়ে খায়।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!