পূর্ব-পাকিস্তানের অস্ত্র কারখানায় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত
ইস্ট-পাকিস্তান রাইফেলসে বিদ্রোহ?
নয়াদিল্লী, ১৪ মার্চ (ইউ এন আই) পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মিরা পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সামরিক কর্তৃপক্ষ প্রতিরক্ষা কর্মিদের প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ গ্রহণের উদ্দেশে যে নতুন সামরিক আইন জারি করেছেন তার মােকাবিলা করার উদ্দেশ্যেই প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মিরা অনুরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিলং থেকে প্রেরিত এক সংবাদে প্রকাশ পূর্ব পাকিস্তানের আধা সামরিক সংস্থা ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসএ সশস্ত্র অভ্যুত্থানের আশংকা দেখা দিয়েছে।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীদের উপর নতুন করে যে সামরিক আইন জারী করা হয়েছে সে সম্পর্কে শেখ মুজিবর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে সামরিক কর্তৃপক্ষ আবার এক সংঘর্ষের উস্কানী দিচ্ছে। তাদের জেনে রাখা প্রয়ােজন যে তাদের হুমকী ও ভীতি প্রদর্শনের প্রতি পূর্ব বাংলার ঐক্যবদ্ধ মানুষ কোনরূপ নতি স্বীকার করবে না।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীদেরকে আগামী কাল কাজে যােগ দিতে হবে নতুবা মার্শাল কোর্টে বিচার ও জেলের সম্মুখীন হতে হবে এই মর্মে যে সামরিক আদেশ জারি করা হয়েছে সেই আদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত মর্মে এক বিবৃতি দেন।
উপরােক্ত সামরিক আদেশের জবাবে প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র অস্ত্র কারখানায় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান আজ দৃপ্ত কণ্ঠে ঘােষণা করেন, যে পর্যন্ত বাংলা দেশের মানুষ একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের মত বসবাস করতে পারবে না এবং তাদের অধিকার স্বীকৃত হবে না সে পর্যন্ত পূর্ব পাকস্তিানের অসহযােগ আন্দোলন চলবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সংগ্রামী কর্মসূচী সমর্থন করে পূর্ব-পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলির পক্ষ থেকে এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ২৩ বছর পর জনতা যে রায় দিয়েছে তা শাশ্বত সত্য ও প্রশ্নাতীত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কোন প্রয়ােজন নেই। দেশরক্ষার কাজই তাদের পবিত্র দায়িত্ব।
ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এ বিদ্রোহ
শিলং থেকে প্রেরিত ইউ এন আই-এর সংবাদে জানা যায় যে পূর্ব-পাকিস্তানের আধা সামরিক সংস্থা ইস্টপাকিস্তান রাইফেলস (ই পি-আর) এ সশস্ত্র অভ্যুথানের আশঙ্কার সামরিক কর্তৃপক্ষ এই রাইফেল বাহিনীকে নিরস্ত্র করেছে। তাদের অনেককে কারারুদ্ধ করা হয়েছে আর অবশিষ্ট কমীদের হাতে রাইফেলের বদলে লাঠি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান রাইফেলসে বিদ্রোহ
পূর্ব পাকিস্তান আর্মড পুলিস বিভাগেও অনুরূপ ব্যবস্থা লওয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ ও আর্মড পুলিস দলের সঙ্গে সৈন্য বাহিনীর যে সংঘর্ষ হয় তাতে ৪ জন নিহত হয়। সংবাদে আরও জানা যায় যে উপরােক্ত ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এর অনেক কর্মীকে সীমান্ত এলাকা থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে আনা হয়। এই সৈনিক বন্দীরা আওয়াজ তুলে -“জয় বাংলা- ভাই সাহেব আমাদের অস্ত্র কাইড়া নিয়ে আমরা বন্দী-তােমরা দেখাে।”
শেখ মুজিবর-ওয়ালি খান সাক্ষাৎকার
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি খান আবদুল ওয়ালি খানের সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর শেখ মুজিবরের এক আলােচনা হয়। ওয়ালী খান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে এসেছেন। এই আলােচনার পর শেখ মুজিবর সাংবাদিকদের কাছে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে পূর্ব পাকিস্তান-বাসীদের অধিকার ও লক্ষ্য সম্পর্কে এক ব্যাখ্যা দেন।
শেখ মুজিবর আরও জানান যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান যদি ঢাকায় আসেন তবে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সূত্র: কালান্তর, ১৫.৩.১৯৭১