You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুজিবর-ইয়াহিয়া খান আলােচনা

নয়াদিল্লী, ১৬ মার্চ (ইউ এন আই) – আজ পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং উভয়ের মধ্যে আড়াই ঘন্টাব্যাপী আলােচনা চলে। আলােচনা অসমাপ্ত থাকে। আগামীকাল পুনরায় তারা এক বৈঠকে মিলিত হবেন।
এমন এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে এই বৈঠক শুরু হয়েছে যখন একদিকে চলেছেন বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান যিনি পূর্ব পাকিস্তানকে কার্যতঃ স্ব-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছেন। অন্যদিকে আছেন পাকিস্তানের পূর্ণ সংহতি রক্ষায় পরাজিত জঙ্গী প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
ভৌগলিক দিক দিয়ে হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের দুই অংশের ভবিষ্যত এই বৈঠকে নির্ধারিত হবে। দীর্ঘ আলােচনার শেষে বৈঠক থেকে আসার পর শেখ মুজিবর রহমান অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে আলােচনার ধারা সম্পর্কে কোন আভাস দেন নি। তিনি শুধু উল্লেখ করেন যে রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে তাদের আলােচনা চলছে।
এই গােপন বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবর বলেন যে, এই বৈঠক তাদের দু’জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি আরও বলেন, এরূপ জরুরী সমস্যা এক বা দু মিনিটের মধ্যে মীমাংসা হতে পারে না।
শেখ মুজিবরের অপেক্ষায় তার দলীয় সমর্থক ছাড়াও অনেক স্থানীয় ও বিদেশী সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ-পি’র এক সংবাদে বলা হয়েছে যে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা এই প্রশ্নের জবাব দিতে শেখ মুজিবর অস্বীকার করেন।
বৈঠকে যাওয়ার আগে শেখ মুজিবর তার দলের নেতাদের সঙ্গে আলােচনা করেন। অন্যপক্ষে জেনারেল ইয়াহিয়া খানও বৈঠকের আগে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসক লে. জে. টিক্কা খানের সঙ্গে কথা বলেন।
শেখ মুজিবর রহমান কালাে পতাকা যুক্ত একটি সাদা রং-এর গাড়িতে বিপুল প্রহরী বেষ্টিত প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে রওনা হয়।
ইতিমধ্যেই এক বিশাল জনতা শেখ মুজিবরের বাসভবনে জমায়েত হয় এবং অভ্যর্থনা জানায়।
এই সময় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে হাজার হাজার জনতার মিছিল পথ পরিক্রমা করে।
ঢাকা বেতার কেন্দ্রে ভুট্টোর বিবৃতির তীব্র সমালােচনা
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওকালতী করে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শ্রী ভুট্টো গতকাল যে বিবৃতি দেন অর্ধস্বাধীন ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে তার কঠোর সমালােচনা করা হয়।
ঢাকা বেতারে আরও বলা হয় যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীনে একটি পরিষদ কক্ষে দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থাকতে পারে না। সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত করা হলেই বর্তমান সংকটের অবসান হতে পারে।
ঢাকা বেতারে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে ভুট্টোর কথা বলার কোন অধিকার নেই। তার দল পশ্চিম পাঞ্জাব ও সিন্ধু মাত্র এই দুটি প্রদেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।

সূত্র: কালান্তর, ১৭.৩.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!