স্ব-শাসিত পূর্ব পাকিস্তান
শেখ মুজিবর রহমানের বাঙলাদেশের সর্বময় প্রশাসন ক্ষমতা দখল
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ঢাকায় উপস্থিতি
নয়াদিল্লী, ১৫ মার্চ (ইউ এন আই) – সাত কোটি বাঙালীর আবাসভূমি পূর্ব পাকিস্তান আজ কার্যত ও স্বাধীনআওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান সামরিক শাসনের শৃখলকে চূর্ণ করে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বময় প্রশাসনিক কর্তৃত্ব দখল করেছেন।
এদিকে বেসামাল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে আলােচনার জন্য আজ বিমানযােগে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন এবং তার উপস্থিতির পূর্ব মুহূর্তেই শেখ মুজিবর রাজ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ঘােষণা করেছেনঃ ফৌজী শাসনের এই ধ্বংসস্তুপের উপর প্রদেশের প্রশাসন ক্ষমতা দখলই হচ্ছে সাত কোটি বাঙালীর মুক্তির সনদ।
তিনি বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের সগ্রামী জনগণের বিরুদ্ধে যে, কোন আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য সমস্ত প্রতিরােধ ব্যবস্থাই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য শেখ মুজিবর ৩৫ দফাবিশিষ্ট এক নির্দেশনামাও জারি করেছেন।
রাজ্যের আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ নিযুক্ত রয়েছে- তাদের কাজে সাহায্যের জন্য মােতায়েন থাকবে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
শেখ মুজিবরের নির্দেশনামায় আরও বলা হয়েছে।
কর বন্ধ আন্দোলন চলতে থাকবে-সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, সরকারী ও বেসরকারী অফিস বন্ধ থাকবে।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মীরা আজ ১০ টায় কাজে যােগ না দিলে তাদের কোর্ট মার্শালে বিচারও কারারুদ্ধ করা হবে বলে যে চরমপত্র দেওয়া হয়েছিল তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ব মুহুর্তেই শেখ মুজিবর উপরােক্ত মর্মে ঘােষণা করেন।
শেখ মুজিবরের বর্তমান নির্দেশনামায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে কাস্টম শুল্ক আদায় করতে হবে এবং এই আদায় কত টাকা “বাংলাদেশ” এই নামে একটি ব্যাঙ্ক একাউন্টে জমা রাখতে হবে।
উল্লেখ্য যে এই নির্দেশনামায় বৈদেশিক সম্পর্ক বা মুদ্রা সংক্রান্ত কোন বিষয়ের উল্লেখ নেই।
প্রকৃতপক্ষে, এই নির্দেশাবলী অনুসারে পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ বলেই গণ্য করা হয়েছে।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান আজ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। জানা গেছে যে, তিনি শেখ মুজিবরের সঙ্গে আলােচনা করবেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান আগামী ২৩ মার্চ জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণ দেবেন। তিনি ক’দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন তা জানা যায় নি।
ঢাকায় রিক্সাওয়ালা গুলিবদ্ধ
এ পি-র সংবাদ, ঢাকা বিমান বন্দর থেকে প্রায় আধ কিলােমিটার দূরে এক অবাঙ্গালী উদ্বাস্ত জনৈক রিক্সাওয়ালাকে গুলি করা হয় এবং এই গুলি আওয়ামী লীগের শান্তি বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকদের উপর এসে লাগে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিমান বন্দরে পৌছানাের কিছু আগেই উপরােক্ত দুর্ঘটনা ঘটে। সংবাদে জানা যায় যে, যে সমস্ত ট্যাক্সি ইত্যাদি বিমান বন্দরে যাচ্ছিল আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকগণ উক্ত ট্যাক্সিতে গুলি তল্লাসী করে এবং তার ফলেই নাকি উপরােক্ত গােলযােগ বাধে। বিমানযােগে পশ্চিম পাকিস্তান-গামী যাত্রীরা যাতে কোন টাকাকড়ি পাচার করতে না পারে। সেই উদ্দেশ্যেই ট্যাক্সি, গাড়ি ইত্যাদি তল্লাসী চালান হচ্ছিল।
বিদেশী নাগরিকদের ঢাকা ত্যাগের হিড়িক
এ পি-র এক সংবাদে জানা যায় যে, রাজকীয় বিমান ব্রিটানিয়া এয়ার ক্রাফট আজ ১১৯ জন ব্রিটিশ, আমেরিকান, ফিলিপাইন ও স্কেন্ডনেভিয়ান নাগরিকদের নিয়ে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যাত্রা করে। ১৩১ জন জাপানী নাগরিকও পূর্ব পাকিস্তান থেকে ব্যাঙকক হয়ে সিঙ্গাপুরে এসে পৌঁছেছে।
সূত্র: কালান্তর, ১৬.৩.১৯৭১