আরব দুনিয়া পাক ফৌজের গণহত্যার নিন্দায় নারাজ
পিটিআই
কায়রাে, ৪ জুলাই- আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের বাংলাদেশের কথা বুঝিয়ে বলার উদ্দেশ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ভারতের খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী শ্রীফকরুদ্দিন আলি আমেদ পশ্চিম এশিয়া সফরে এসেছিলেন। তাঁর ওই সফর এখন প্রায় শেষ।
বেইরুট, দামাসকাস এবং কায়রােতে অবস্থানকালে শ্রী আমেদের প্রতি যথারীতি আরব আতিথেয়তা দেখানাে হয়েছে, ধৈর্যসহকারে তাঁর বক্তব্য শােনা হয়েছে এবং পূর্ব বাংলার অগণিত শরণার্থীদের জন্য যথেষ্ট সহানুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই সব ব্যাপারে কোন রকম কার্পণ্য দেখা যায় নি। কিন্তু বাংলাদেশে পাকবাহিনীর পাইকারী গণহত্যা সম্পর্কে আরব রাষ্ট্রগুলির নীরবতা ভঙ্গ করা যদি শ্রী আমেদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে তা ব্যর্থ এবং নিষ্ফল হয়েছে বলা চলে।
কিন্তু শ্রী আমেদ বেইরুট, দামাসকাস এবং কায়রাে সফরকালে ওই উদ্দেশ্য (আরব রাষ্ট্রগুলির নীরবতা ভঙ্গ করা) তাঁর প্রধান কর্তব্য বলে ধরে নেননি বলেই মনে হয়। এর পরিবর্তে বাংলাদেশে দমনপীড়ন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের উপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি এবং শরণার্থীরা যাতে সম্মানে বিনা বাধায় দেশে ফিরতে পারেন, সেজন্য রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালাতে আরব নেতাদের কাছে আবেদন জানানােই শ্রী আমেদ শ্রেয় বলে মনে করেছেন।
এই আবেদনে শ্রী আমেদ যথেষ্টই সাড়া পেয়েছেন। গতকাল সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট আনােয়ার সাদাত এবং তার আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট জেনারেল আসাদের সঙ্গে শ্রী আমেদ আলােচনা চালান। শ্ৰী আমেদ আশা করছেন যে, ওই আলাপ আলােচনার ফলে ওই দুই নেতা পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে বার্তা পাঠাতে পারেন।
আরব রাষ্ট্রপ্রধানরা ওই ব্যবস্থা নিলে পাকিস্তানে তার কি প্রতিক্রিয়া হবে, তা এখনই বলা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সত্য বিকৃত করে অপপ্রচার চালানাের জন্য পাকিস্তান আরও কি ব্যবস্থা নেয়, সে সম্পর্কে ভারতকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ইতিমধ্যেই এ রকম খবর পাওয়া গিয়েছে যে, নিজেদের বক্তব্য প্রচারের জন্য পাক জঙ্গী কর্তৃপক্ষ শ্রী জেড এ ভুট্টোকে বিভিন্ন দেশ সফরে পাঠাবেন। পাকিস্তানী ঢাক পেটাতে শ্রী ভুট্টোর আরব দেশগুলিতে যাওয়ার যথেষ্টই সম্ভাবনা আছে।
শরণার্থীদের দেশে ফিরে আসার জন্য ‘অভ্যর্থনা শিবির’ খােলা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে মাস চারেকের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কে ইয়াহিয়ার প্রতিশ্রুতি- ইতিমধ্যেই পাকিস্তান এই সব ধাপ্পাবাজি চালাচ্ছে। আলােচনাকালে শ্রীআমেদ ওই সব সম্পর্কে ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আনন্দ বাজার : ৫.৭.১৯৭১
Reference:
গণমাধ্যমে-বাংলাদেশের-মুক্তিযুদ্ধ – মুনতাসীর মামুন