বাংলাদেশের কাছে ইয়াহিয়া বলতে বুঝায় ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বাসঘাতক -কামরুজ্জামান
বাঙলাদেশের কোন স্থান, ৩০ মে (ইউ এন আই) – বাঙলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামরুজ্জামান আজ বলেছেন, যেহেতু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমাদের সঙ্গে আলােচনার সময় আমাদের দাবিগুলি মেনে নেওয়ার পর বাঙলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছেন, সে-কারণে তাঁর কোন কথা আর কেউ বিশ্বাস করবেন না।
তিনি জানান, জেনারেল ইয়াহিয়া এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়ে ছিলেন যে ২৫ মার্চ তারিখে তিনি তাঁর সঙ্গে শেখ মুজিবর রহমানের চুক্তির বিষয়টি রেডিও মারফৎ ঘােষণা করবেন, কিন্তু পক্ষান্তরে তিনি বাঙালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাঁর সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন।
জনাব কামরুজ্জামান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সেই বিবৃতির উপর বক্তব্য রাখছিলেন যে বিবৃতিতে ইয়াহিয়া বলেছেন তিনি এখনও অ-সামরিক শাসকবর্গের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান।
“বাঙলাদেশে আমাদের কাছে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নাম কোন স্বাভাবিক ব্যক্তি বােঝায় না, বােঝায় রক্তপিপাসু স্থির মস্তিষ্ক খুনীকে, বিশ্ব ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বাসঘাতককে, পাকিস্তানের বিভাজককে।”
“কাজেই তার কথাগুলি, যতই মধুর বা যুক্তিসঙ্গত শশানাক না কেন, কখনই বাঙলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবেন না, তাঁদের প্রতিক্রিয়া হবে সঠিক ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।”
জনাব কামরুজ্জামানের মতে, “যা করা হয়েছে-নিস্পাপ শিশু ও নাগরিক হত্যা, আমাদের নারী সমাজের উপর ধর্ষণ এবং আমাদের জাতীয় চেতনাবােধের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানাে -তার পর বাঙলাদেশের জনগণের পক্ষে এক ছাদের নীচে পাকিস্তানীদের সঙ্গে বসবাস করা অসম্ভব। সেটা কি ভাবে করব যখন জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার লেজুড়বৃন্দের উদ্দেশ্য, বাঙালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা?
“কেবল ভ্রাতৃত্ববোেধ ও পারস্পরিক সদিচ্ছাই একসঙ্গে বাস করার ভিত্তি হতে পারে না তার সঙ্গে পরস্পরের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ শ্রদ্ধাও থাকা চাই। কিন্তু সেটা আর নেই।”
জেনারেল ইয়াহিয়া তাঁর বিবৃতিতে বলেছিলেন, কিছু কিছু আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্যগণ তাঁদের নীতি ও কার্যাবলীর দরুণ তাঁদের সদস্যপদ খারিজ করে ফেলেছেন। এ প্রসঙ্গে জনাব কামরুজ্জামানের বক্তব্য, “আওয়ামী লীগ সদস্যগণ জনগণের শতকরা ১৮ ভাগের সমর্থন পেয়েছেন, তাঁদের সদস্যপদ সম্পর্কে পাকিস্তানী শাসকদের কোন কিছু প্রশ্ন করার অধিকার নেই।” তিনি পাকিস্তানী শাসকদের “গণতান্ত্রিক মূল্যবােধের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ক্ষমতালােলুপ প্রতারক” রূপে বর্ণনা করেন।
“এখন যখন যুদ্ধ আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের পবিত্র ভূমি থেকে পাকিস্তানীরা বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।
“যে সকল রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবােধ প্রচার করেন ও মেনে চলেন তাদের উচিত বাঙলাদেশে দখলদার সেনাবাহিনীর হাতে যে গণতান্ত্রিক শক্তি আজ ধ্বংসেম্মুখ সেই শক্তির প্রতিরক্ষায় সচেষ্ট হওয়া। যারা অত্যাচারিত ও নির্যাতনভােগীদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন তারাই বস্তত: মহান।”
সূত্র: কালান্তর, ১.৬.১৯৭১