You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.15 | গেরিলার গুলিতে কুখ্যাত মােনায়েম খা নিহত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

গেরিলার গুলিতে কুখ্যাত মােনায়েম খা নিহত
দালাল গভর্ণর মালিক অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছে
পাক-সেনাদের প্রতিহিংসামূলক উন্মত্ত আচরণ

নয়াদিল্লী, ১৪ অক্টোবর (ইউ এন আই) – মুক্তিবাহিনীর গেরিলার গুলিতে পূর্ববঙ্গের কুখ্যাত প্রাক্তন গভর্ণর মােনায়েম খার আজ মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল রাত্রে জনৈক গেরিলা ছদ্মবেশে মােনায়েম খার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তার ঘরে বসেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলােচনার সূত্রপাত করেন। আলােচনা চলাকালে উক্ত ছদ্মবেশী গেরিলা মােনায়েম খাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে চকিতে উধাও হয়। গেরিলার গুলি মােনায়েম খার যকৃত ভেদ করে।
আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানাের পর আজ সকালে তার মৃত্যু হয়েছে।
পূর্ববঙ্গের বর্তমান গভর্নর এ এম মালেকও গতমাসে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন। আজ বিকেলে কঠোর প্রহরার মধ্যে মােনায়েম খাকে কবর দেওয়া হয়।
মুসলিম লীগের অন্যতম ঝানু নেতা কুখ্যাত মােনায়েম খাঁ পূর্ববঙ্গের গভর্ণর হিসাবে বর্বর দমননীতি চালিয়ে সাত বছর রাজত্ব করেছিল।
১৯৬২ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খাঁ মােনায়েমকে পূর্ববঙ্গের গভর্নর নিযুক্ত করে।
১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের সরকার বিরােধী এক উত্তাল গণ-বিক্ষোভের মুখে মােনায়েম খাকে অপসারণ করা হয়। পরে জেনারেল ইয়াহিয়া খান আয়ুব খানকেও সরিয়ে দেয়।
এই ১৯৬৯ সালেই মােনায়েম খাঁর রাজত্বকালে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে কারারুদ্ধ করা হয়। সাপ্তাহিক মুখপত্র নতুন বাঙলা’র সাম্প্রতিক সংখ্যায় বলা হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষে দিকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বাওরাখােলা গ্রামের উপর দিয়ে দালাল গভর্ণর মালিকের হেলিকপ্টারটি খুব নীচু দিয়ে যাওয়ার সময় একজন অসমসাহসী গ্রাম্য যুবক একটি সাধারণ বন্দুক দিয়ে কপারটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। অল্পের অন্য গুলিটি লক্ষ্যচ্যুত হয়।
“নতুন বাঙলায় আরও বলা হয়, ঘটনার একদিন পর পাকহানাদার বাহিনীর জঙ্গী বিমানসমূহ উক্ত গ্রামের উপর গুলিবর্ষণ করে। এই সময় গ্রামের মেয়েপুরুষ সকলেই জলে নেমে পড়েন। একজন বৃদ্ধা বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বিমান থেকে গুলিবর্ষণের পর পাক হানাদাররা বিমান থেকে নেমে ঐ গ্রামে ব্যাপক লুটতরাজ ও নারীধর্ষণ চালায়।
পত্রিকাটিতে আরও বলা হয় যে, ঢাকা থেকে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, দালাল মালিক ও তার দালাল মন্ত্রীরা প্রাণভয়ে ভীত। তাদেরকে যেভাবে কড়া প্রহরায় রাখা হয়েছে, তা অপেক্ষা বন্দী অনেক ভাল। বলা হয় যে, এখন অনেক দালাল নিজেদের অসহায় মনে করছে এবং সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাফ-সাফ চেয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতে চাইছে। এইসব দালালের মধ্যে বহু রাঘববােয়াল রয়েছে। তারা সুযােগ বুঝে দল ও মত পরিবর্তনে ইতিমধ্যেই রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
“নতুন বাঙলা” মন্তব্য করেছে, বীর মুক্তিযােদ্ধারা এদের ব্যাপারে একেবারে আপসহীন। দালালকে হালাল করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই দালাল নিধণ চলছে।

সূত্র: কালান্তর, ১৫.১০.১৯৭১