You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজনৈতিক সমাধানের জন্য
বাঙলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের চারদফা পূর্বশর্ত
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৬ জুন-আজ স্বাধীন বাঙলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম চার দফা ন্যূনতম পূর্বশর্ত উপস্থাপিত করে জানিয়েছেন, ইয়াহিয়া সরকার ঐ শর্তাবলী মেনে নিলেই বাঙলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব।
এই শর্তগুলি হলঃ
(১) বাঙলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমান এবং কারান্তরালে নির্বাসিত অপরাপর গণ-প্রতিনিধিদের বিনাশর্তে মুক্তিদান;
(২) অবিলম্বে পাক হানাদারবাহিনীর বাঙলাদেশ ত্যাগ;
(৩) বাঙলাদেশের স্বাধীন, গণ-প্রজাতন্ত্রী সরকারের স্বীকৃতি;
(৪) বাঙলাদেশে সামরিক তাণ্ডবের ফলে লুণ্ঠিত সম্পদ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক নিরূপণ করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান।
আজ স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র কর্তৃক প্রচারিত সৈয়দ নজরুল ইসলামের দেশবাসীর উদ্দেশ্য এক বেতার ভাষণে ঐ শর্তগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
সৈয়দ ইসলাম পুনরায় ঘােষণা করেন, যদি কেউ রাজনৈতিক সমাধান বলতে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পুর্নজীবনের কথা মনে করেন তাহলে তিনি মুখের স্বর্গে বাস করছেন। লাখাে শহীদের রক্তে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান মরে গেছে, তাকে আর বাঁচানাে যাবে না। সাড়ে সাত কোটি বাঙালী কোন গোঁজামিলের সমস্যা সমাধান মেনে নেবে না।”
সাম্প্রদায়িকতা আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না
তিনি বাঙলাদেশের জনগণকে সর্তক করে দিয়ে বলেন, “যে অস্ত্রকে সম্বল করে পশ্চিমী শাসকরা আপনাদের ২৩ বছর ধরে শশাষণ করেছে, সেই সাম্প্রদায়িকতার অস্ত্র তারা আবার শাণাচ্ছে।”
তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘােষণা করেন, বাঙলাদেশে সম্প্রদায়িকতা আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।”
তিনি জানান, ২৩ বছর ধরে আমরা, বাঙলাদেশের হিন্দু মুসলমান খৃস্টান-বৌদ্ধ, একসঙ্গে শােষিত হয়েছি। আবার এখন একসঙ্গে লড়াই করছি। “জঙ্গীশাহী মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগােডা ধ্বংস করেছে, খুন করেছে। ড. গােবিন্দ চন্দ্র দেবকে, ডা. ফজলুর রহমানকে, ক্যাথলিক ফাদার তিনজনকে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের।” ‘একশ্রেণীর ভাড়াটিয়া দালাল’ বাঙলাদেশে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে তার উল্লেখ করে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, “কোন দুষ্কৃতকারী যদি মানুষে মানুষে বিভেদ ও শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রাণ বিপন্ন করে তাহলে তখনই খবর দেবেন-আমাদের মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা যথােপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন, ঐ সকল দুষ্কৃতকারীদের দেখামাত্র কঠোর সাজা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ভারত ও ব্রহ্মদেশ সরকারকে অভিনন্দন
বাঙলাদেশের ৪০ লক্ষ শরণার্থীকে ভারতে এবং ৫০,০০০ শরণার্থীকে ব্রহ্মদেশে আশ্রয়দানের জন্য তিনি ভারতের “জনগণ, রাজনৈতিক জনগণ ও সরকারকে” এবং ব্রহ্মদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বাস্তচ্যুত শরণার্থীদের প্রতি ঐকান্তিক সমবেদনা জানিয়ে বলেন, হানাদারদের হঠিয়ে দিয়ে বাঙলাদেশ সরকার সসম্মানে দেশত্যাগী বাস্তহারাদের ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। “আপনারা বাঙলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আপনাদের বাড়ি-ঘর-সম্পত্তি ফিরে পাবেন।”

সূত্র: কালান্তর, ৭.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!