You dont have javascript enabled! Please enable it!

মৌলানা ভাসানীকে কোন অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হবে না -ইয়াহিয়া

পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের মুক্তি যােদ্ধাদের ধ্বংস করার জন্য চীন ও থাইল্যাণ্ডের ভিতর দিয়ে সৈন্য পাঠাচ্ছে। চীনও এ ব্যাপারে ইয়াহিয়া খাকে সাহায্য করছে। চরম বিপ্লববাদ ও চরম প্রতিক্রিয়া বন্ধুর মত হাত ধরাধরি করে চলে। অন্ততঃ বিপ্লবের ইতিহাস তাই বলে।
ইয়াহিয়া খা ঘােষণা করেছেন যে চীনপন্থী মৌলানা ভাসানীকে কোন অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হবে না। অবশ্য মৌলানা সাহেব আত্মগােপন করেছেন। চরম বিপ্লববাদী মহঃ তােহার সাহায্য পাওয়ার জন্য ইয়াহিয়া খাঁ চেষ্টা করছেন। ইয়াহিয়া খাঁ হঠাৎ এত উদার হলেন কেন? কী করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করা যায় এবং তার জন্য উগ্র-বিপ্লববাদীকে কী ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, ইয়াহিয়া খা তাদের সাম্রাজ্যবাদী বন্ধুদের থেকে এই শিক্ষা আয়ত্ত করেছেন।
উগ্র-বিপ্লববাদীদের মধ্যে অনেকে বিপ্লবের ঝলক দেখতে পান। অনেকেই তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। লেনিন গণতন্ত্রীদের সতর্ক করে বলেছিলেন যে, উগ্র বিপ্লববাদ থেকে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়া মাত্র এক পা দূরে অবস্থান করছে।
ইয়াহিয়া খা মুক্তি যােদ্ধাদের ধ্বংস করার জন্য কেবল চীন ভূমি ব্যবহার করছেন না, চীনপন্থীদের কার্যকলাপকেও কাজে লাগাচ্ছেন। মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মৌলানা ভাসানীর তথ্যকথিত বিপ্লববাদকে ব্যবহার করছে। এই জন্যই ঘােষণা করা হয়েছে যে কোন অবস্থায় মৌলানাকে গ্রেপ্তার করা হবে না। মৌলানা সশরীরে উপস্থিত থেকে যাতে চীনের নীতি অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ ও ধ্বংসকার্য চালাতে পারেন তার জন্য তিনি মুক্ত। উগ্র বিপ্লববাদ এবং দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়া যে টাকার এপিঠ ওপিঠ তা উপরিউক্ত ঘটনার থেকেই প্রমাণ হয়।…তা পড়ে শােনান নয়। শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যাচারী পরদেশী দানবের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বীরদের উদ্দেশ্য প্রণাম নিবেদন করেন।
অধ্যাপক বাসব সরকার প্রস্তাব দেন সমস্ত বৈদেশিক দূতাবাসে গণবিক্ষোভ সংগঠিত করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হােক। একদিনের বেতন দানের প্রস্তাব ও তিনি রেখেছেন। শ্রী দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নত সামরিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা কামী বিপ্লবীর লড়াইকে সহায়তা করার জন্য যাবতীয় সাহায্যের প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে আমরা আর এক বিন্দু রক্তেরও অপচয় হতে দেব না। এপারে অনেক রক্ত দরকার। শ্ৰী তরুণ স্যান্যাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের লেখক জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। তিনি কলকাতা বেতার কেন্দ্রের কাছে অবিরাম দেশাত্মবােধক সঙ্গীত প্রচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। এ ছাড়া অধ্যাপক শান্তি সিংহ রায় ও অমিয় মুখােপাধ্যায় ও বক্তৃতা করেন।
শ্রীদেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ওপার বাংলার কবিতা আবৃত্তি করে শােনান। শ্রীনীলাদ্রি শেখর বসুও আবৃত্তি করেন।
সভাপতির ভাষণে শ্ৰীনীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ওপারের জন্য আমরা গৌরবে স্ফীত হচ্ছি। লাখাে প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। তা কিছুতেই বৃথা যাবে না। ওপারের সাহিত্যে যে জাগরণ হয়েছে, তিনি তারও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের এ লড়াই মধ্যযুগের বিরুদ্ধে বিশ শতকের লড়াই।
একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবে মুক্তিযােদ্ধাদের যাবতীয় সাহায্যের ওপর চাপ সৃষ্টি ও সরকারী স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছে।
এই সভা থেকে সর্বশ্রী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিবেকানন্দ মুখােপাধ্যায়, নীরেন্দ্র চক্রবর্তী, মনােজ বােস, দক্ষিণারঞ্জন বসু, দীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, অমিয় দাশগুপ্ত, অমিয় মুখােপাধ্যায় ও ড. সমর চৌধুরীকে নিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের বিভিন্ন সাহায্যের ব্যবস্থাকল্পে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ১২.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!