বিশ্বের সকল কমিউনিস্ট পার্টি বাঙলা দেশের অনন্য সংগ্রামকে সমর্থন করছে
-রাজেশ্বর রাও
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২২ জুন-“বাঙলাদেশের সংগ্রাম ইতিহাসে বস্ততঃই অনন্য। গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয় মুক্তির এরূপ সংগ্রাম অভূতপূর্ব ব ণ পৃথিবীর অন্য কোন দেশে অনুরূপ সংগ্রাম এভাবে দেশের সমগ্র জনসাধারণের সমর্থন লাভ করতে পারেনি। বাঙলাদেশের এই মুক্তি সংগ্রামের পটভূমি বিশ্লেষণ করে সগ্রামকে সমর্থন করা জন্য বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টিগুলির কাছে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি যে আবেদন প্রেরণ করেছে তা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সকল কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। ঐ সকল পার্টিগুলি আজ বাঙলাদেশের সংগ্রামকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে। অবশ্য এর মধ্যে চীনের মহান বিপ্লবী পার্টিটিকে ধরতে পারব না।”
আজ কমিউনিস্ট পার্টির রাজা দপ্তরের ছাত্র পার্টি সভ্য ও দুরদীদের এক বৃহৎ সভায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সি, রাজেশ্বর রাও উপরােক্ত বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গতঃ তিনি বাঙলাদেশে পাকবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা বন্ধের জন্য ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত সােভিয়েত প্রেসিডেন্ট পদগাের্নির পত্রের উল্লেখ করে জানান, সােভিয়েত ইউনিয়ন একথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, বাঙলাদেশের বিরােধের রাজনৈতিক নিষ্পত্তি কেবল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি অর্থাৎ শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে চুক্তির মারফৎ করতে হবে।
“বাঙলাদেশের সংগ্রামের সমর্থন করে আমরা শুধু ওদেশের জনগণকেই নয় আমাদের নিজেদের আদর্শগত আন্দোলনকেও সহায়তা করছি। ওদেশের জনগণ আজ যে ধ্বজা তুলে ধরেছেন তাতে জাতীয় মুক্তি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়াও ভারতের সঙ্গে সৌহার্দের লক্ষ্য নিহিত আছে। এসব কিছু, বিশেষতঃ ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্য, শুধু ওদেশের মুসলিম লীগের দ্বি-জাতিতত্ত্বের শিকড় উৎপাটিত করছে, না এদেশের হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা বাদীদেরও কোণঠাসা করছে।”
এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রথম দিকে জনসঙ্ঘ বাঙলাদেশের সগ্রামকে সমর্থন জানালেও এখন তার মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মত পরিবর্তন হয়েছে। তাই আর এস এস-এর গুরু গােলওয়ালকর বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, জনসঙ্ নেতা বলরাজ মাখােব এখন এক স্লোগান তুলেছেন, “শরণার্থীদের পুনর্বাসনকল্পে পূর্ব পাকিস্তানের একাংশ নিয়ে নিতে হবে।” এর পরেই মাধােক বলবেন, “যেহেতু শরণার্থীরা আর ওদেশে ফিরে যাবে না, সে কারণে এবারে এদেশের মুসলমানদের ওপারে পাঠানাে যাক।” এই সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের কার্যকলাপের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য তিনি কমিউনিস্ট কর্মীদের বিশেষ আবেদন জানান।
বাঙলাদেশের সাহায্যার্থে এক ব্যাপক ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, এই প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম গ্রহণে দ্বিধা থাকতে পারে না। সি, পি, এম প্রসঙ্গে তিনি জানান, তিনি পঃ দিনাজপুরে স্বকর্ণে শুনে এসেছেন, সি পি এম কর্মীর শরণার্থীদের ডােলের প্রশ্নে তাঁদের সরকারের বিরুদ্ধে তাতাচ্ছে। ঠিক তেমনি জনসঙ্ঘ কর্মীরা তাদের স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে চাইছে।
বাঙলাদেশের সংগ্রামের স্বপক্ষে ছাত্রদের বিরাট প্রচার অভিযান শুরু করার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
এর আগে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জনৈক তরুণ নেতা বলেন, “কমিউনিস্ট হিসেবে আমরা বুঝি, “নির্যাতিত জনগণের মুক্তি সংগ্রামের ভিত্তিমূল সংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন। কাজেই আন্তজার্তিক প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক জনগণের সক্রিয় সাহায্য, সহযােগিতাই বাঙলাদেশের সংগ্রামের বিজয়ের একমাত্র শর্ত।”
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, “ভারত সরকারের কাছে বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া ও সহায়তা করার জন্য আপনাদের দাবি আমাদের বিপুলভাবে সহায়তা করবে।”
তিনি বাঙলাদেশে (পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তান) সংগ্রামের ইতিবৃত্তি বর্ণনা করে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ছাত্র সমাজের সংগ্রামী ভূমিকার বিশেষ উল্লেখ করেন।
সূত্র: কালান্তর, ২৪.৬.১৯৭১