You dont have javascript enabled! Please enable it!

আসল খবর বলা হয়নি

আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যে দশ লাখ ভয়ার্ত মানুষ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে, আসামে ও ত্রিপুরায় এসে পৌঁছেছে, তারা নাকি আসলে বাংলাদেশেরই লােক নয়। তারা হচ্ছে আসলে ভারতেরই বাসিন্দা, তারা ইয়াহিয়া খাঁর জমিদারী বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছিল। এখন ইয়াহিয়া খাঁর জবরদস্ত তাড়া খেয়ে ভারতের সীমান্তে পালিয়ে আসছে। পাকিস্তানের রেডিও থেকে রবিবার মােহগ্রস্ত বিশ্বজনের উদ্দেশে এই খাটি সত্য কথাটি ঘােষণা করা হয়েছে। সত্যিই তাে বিশ্বজনের মাথা কি কম ঘুলিয়ে গেছে। সেই যে মার্চ মাসের ২৫ তারিখটা যেদিন সন্ধ্যা থেকে পূর্ব বাংলায় ইয়াহিয়া খাঁর হানাদারদের আগুন খুন অত্যাচারের অফুরন্ত বীভৎসতা চলছে, তাতে সারা দুনিয়ার অন্তরাত্মা কি কম কেঁপে উঠছে। বিদেশের বাঘা বাঘা সাংবাদিকরাও সে-সব স্বচক্ষে দেখে ভয়ে শিউরে উঠেছেন। সেইসব ব্যাপারের ফটোই হােক কিংবা লিখিত সংক্ষিপ্ত নােটই হােক, সেগুলাে যাতে বাইরে তারা না নিয়ে যেতে পারেন, তার জন্যে ঢাকায় করাচিতে তাদের উলঙ্গ করে পরীক্ষা করতেও ইয়াহিয়া খা কাম কোসিস করেন নি। ঐসব বিদেশী সাংবাদিকদের কড়া নজরবন্দীতে রেখে তাদের ওখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ইয়াহিয়া খা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। পূর্ববঙ্গের সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর স্বাধীনতা পিপাসাকে ইয়াইয়া খাঁ এইভাবে তেড়ে মেরে ডান্ডা করে দেব ঠাণ্ডার খােয়বে মশগুল হয়ে হিংস্র হানাদারদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্ববাংলা তাে ইয়াহিয়া খার চৌদ্দ পুরুষের বাপ-নানার জমিদারি নয়। ইয়াহিয়া খার বীভৎস নারকীয় অত্যাচারের মধ্যেও পূর্ব বাংলা স্বাধীন বাংলাদেশের নাম নিয়ে উদিত হয়েছে, সেখানে মুজিব-বাহিনী পাক-হানাদারদের সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেছে। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি ফৌজের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের লড়াই বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসে এক বিষ্ময়কর নতুন জিনিস। সারা দুনিয়ার সেই লড়াই আর পাকিস্তানি ফৌজ জানােয়ারদের হিংস্রতা ও নারকীয় অত্যাচারের কাহিনী কিন্তু ইয়াহিয়া খাঁর জানকবুল কোসিস সত্ত্বেও অপ্রকাশিত থাকে নি। খবরের কাগজে সেই সব সবিত্র বিবরণ পেয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সভ্য মানুষ জঙ্গী পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণায়, ধিক্কারে, ক্রোধে ফেটে পড়ছে। সে-সব বড় বড় শক্তির কোলে আদুরে দুলালের মত জঙ্গী পাকিস্তান সরকার দোল খাচ্ছিল, আর দুশমন ভারতকে দেখিয়ে অস্ত্রশস্ত্র আদায় করছিল সে-সব দেশেও পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত জেগে ওঠায় তাদের বা কেউ কেউ কোল থেকে আদুরে দুলালকে না নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। এই ভাবনায় জবরদস্ত ইয়াহিয়া খার চোখের ঘুম পালিয়ে গেছে। তাই এখন পাল্টা বিশ্বজনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তিনি। হাজার গন্ডা ঝুটবাত বলতে তাে পাকিস্তান সরকারের কখনও বাধে নি, এখন নিজেদের নারকীয় অত্যাচারকেও ঢাকতে সেই ঝুটবাত ছাড়া আর গতি কী?

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৪ মে ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!