You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.27 | স্বাধীন বাঙলার প্রথম ডাক টিকিট ২৯ জুলাই থেকে চালু হবে বিক্রয়স্থল বাঙলাদেশ মিশন | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

স্বাধীন বাঙলার প্রথম ডাক টিকিট ২৯ জুলাই থেকে চালু হবে বিক্রয়স্থল বাঙলাদেশ মিশন
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২৬ জুলাই-আজ বিকেলে বাঙলাদেশ মিশনে মিশনের প্রধান বাঙলাদেশ সরকার প্রকাশিত স্বাধীন বাঙলার ডাকটিকিটসমূহ সাংবাদিকদের কাছে উপস্থিত করেন।
এই ডাকটিকিটগুলি ২৯ জুলাই থেকে চালু করা হবে। ঐ দিন টিকিগুলির “ফার্স্ট ডে কভার’ -ও আত্মপ্রকাশ করবে এবং মিশনের এক কাউন্টারে লিখিত মূল্য অনুসারে ডাকটিকিট বিক্রি করাও শুরু হবে। এগুলির মূল্য যথাক্রমে ১০,২০,৫০ পয়সা এবং ১,২,৩,৫ ও ১০ টাকা (বৃটেনের পাউণ্ডের সঙ্গে বাঙলাদেশ টাকার বিনিময় হার হল এক পাউণ্ডের সমমূল্য ২০ বাঙলাদেশ টাকা)।
বাঙলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব এম হােসেন আলী সাংবাদিকদের জানান, “একই দিনে একই ডাকটিকিট চালু হবে। সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রথম আন্তর্জাতিক পরিচয় তার ডাকটিকিট।
এর পরে অন্যান্য পরিচয়গুলােও একে এক প্রকাশ লাভ করবে, তার মধ্যে স্বাধীন দেশের নতুন মুদ্রা অন্যতম।”
তিনি বলেন, ডাক টিকিটগুলাে বিদেশী মুদ্রা অর্জনেও যথেষ্ট সহায়ক হবে। বাঙলাদেশ থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অভ্যন্তরে প্রেরিত পত্রে স্বাধীন বাঙলার ডাকটিকিট ব্যবহারের বিষয় নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলােচনা চলছে বলে তিনি জানান। এখনও পর্যন্ত সার্বজনীন ডাক ইউনিয়নের (আন্তর্জাতিক ডাক সংস্থার সঙ্গে স্বাধীন বাঙলার ডাকটিকিটগুলাে স্বীকার করে নেওয়ার ব্যাপারে কোন কথাবার্তা হয়নি। জনাব হােসেন আলী জানান, যেহেতু বাঙলাদেশ রাষ্ট্র এখনও বিশ্ব স্বীকৃতির অপেক্ষায় সে-কারণে ঐ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্বীকৃত রাষ্ট্র না হয়েও যে স্বাধীন বাঙলার ডাকটিকিট বেরিয়েছে সেটা ডাকটিকিট সগ্রাহকদের কাছে বিশেষ ঔৎসুক্য সৃষ্টি করবে।
সময়ে লণ্ডনস্থিত বাঙলাদেশ হাইকমিশনার ডাকটিকিগুলি জনসমক্ষে পেশ করবেন এবং লিখিত মূল্য অনুসারে ওখানে ঐগুলি বিক্রী করা হবে ২৯ জুলাই থেকে। সকল মূল্যের ডাকটিকিটের একটি সেটের দাম হবে এক পাউণ্ড নয় পেন্স।
খ্যাতিকীর্তি বাঙালী চিত্রলেখা শিল্পী শ্রী বিমান মল্লিক ডাক টিকিটগুলির নকশা তৈরি করেছেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বৃটিশ ডাক ঘরের জন্য গান্ধী স্মারক ডাক টিকিটের নকশা তৈরি করেছিলেন।
জনাব হােসেন আলী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের যােগাযােগ দপ্তরের মন্ত্রী ডাকটিকিট বিদেশে কিভাবে সুষ্ঠু উপায়ে বিক্রয় করা যায় সে ব্যাপার একটি প্রকল্প নির্ধারণ করেছেন।
“আমরা এখন পর্যন্ত পুরনাে পাকিস্তানী ডাকটিকিটের উপরে বাঙলাদেশ’ শব্দটি ছাপিয়ে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করছি। ২৯ জুলাই থেকে এই ১০ পয়সার ডাকটিকিটে বেগুনী, নীল রঙের সীমান্তের মাঝখানে কমলালেবু রঙে বাঙলাদেশের মানচিত্র; ২০ পয়সার টিকিটে সবুজ পটভূমিতে হলুদ অক্ষরে লিখিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার উপর রক্তের দাগ-২৫-২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণহত্যার নিদর্শন; ৫০ পয়সার টিকিট মেটে রঙে লিখিত ৭৫ মিলিয়ন জনগণের এক জাতি; ১ টাকার টিকিটে বাঙলা দেশের পতাকার প্রতীক; ২ টাকার টিকিটে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পত্র এবং নীল রঙে লিখিত ১৯৭০ নির্বাচনঃ ফলাফল- বাঙলাদেশের পক্ষে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন; বিরাটাকৃতিতে লেখা ৯৮% -অর্থাৎ সমগ্র আসনের শতকরা ৯৮ ভাগ পেয়েছিল বাঙলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ; ৩ টাকার টিকিটে সবুজ পটভূমিতে ‘ঘন সবুজে শৃঙ্খল ছেদনের চিত্র। ১০ এপ্রিল, ১৯৭১- এ স্বাধীন সরকার ঘােষণা; ৫ টাকার টিকিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি; ১০ টাকার টিকিটে ‘বাঙলাদেশকে সমর্থন করুন’ লিপির মধ্যভাগে বাঙলাদেশের মানচিত্র।

সূত্র: কালান্তর, ২৭.৭.১৯৭১