You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.17 | ইয়াহিয়া-ভক্তদের বিচার হবে | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

ইয়াহিয়া-ভক্তদের বিচার হবে
[বাঙলাদেশ থেকে সপ্তাহ-র প্রতিনিধি]

বাঙলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ এখন সাফল্যের দুর্গ শীর্ষে। বাঙলাদেশের বীর মুক্তিযােদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর দুর্বার অগ্রযাত্রায় কাপুরুষ ভীরু লুটেরা পাকবাহিনী এখন পলায়ন করে প্রাণ রক্ষার তাগিদে অস্থির। যারা পেরেছে তারা পালিয়েছে। জেনারেল নিয়াজী রয়েছে বটে তবে জেনারেল আনসারী হােসেন পালিয়েছে, জেনারেল পীরজাদা পালিয়েছে। আজ পলায়নের পথ নাই, সব পথ রুদ্ধ। আকাশপথ রুদ্ধ, জলপথ রুদ্ধ। তাই হিড়িক পড়েছে আত্মসমর্পণের। কিন্তু আত্মসমর্পণেও রেহাই নেই। আত্মসমর্পণের পথে মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে পড়লে যমের মতাে মুক্তিযােদ্ধারা খানদের ছিড়ে টুকরাে টুকরাে করে ফেলবে। বাঙলাদেশ সরকার চাচ্ছেন যত বেশি সম্ভব খানবাহিনী, যথা, তিন ডিভিশন সৈন্য, খৈবার রেঞ্জার, তােচি স্কাউট, হাজার হাজার রাজাকারকে আটক করতে। এদের যদি আটক করে রাখা যায় তবে হয়তাে এদের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের মুক্তি বিনিময় করা যাবে। বাঙলাদেশ সরকার তাই সর্বত্র জানিয়ে দিয়েছেন নিজের। নিয়ে কেউ কাউকে খুন করবেন না, সকলকে আটক করুন।
এই আটকের পর্যায়ে সাধারণত ধরা পড়েছে অবাঙালি খানসেনা, রাজাকার কিন্তু স্বদেশও পাকিপ্রেমী ও ইয়াহিয়া-ভক্তের কোন কমতি নেই। গত নয় মাসে এই ইয়াহিয়া ভক্তরাও কোন কম অত্যাচার করেনি। জামতে ইসলাম, নিজামী ইসলাম, পি ডি পি ও মুসলিম লীগের খুনে ডাকাত অত্যাচারী চক্র গত নয় মাসে যে অত্যাচার করেছে আজ অত্যাচারীত মানুষের দল অত্যাচারীদের পরিণাম গ্রাস করতে জেগে উঠেছে। তাদেরও পালাবার পথ নেই। দিনের আলাে আর রাতের কালাে একই হিংস্র বিষবাষ্পে পাপীদের প্রাণ হরণে এগিয়ে আসছে। এইসব পাপীদের প্রাণ রক্ষা করাও বাঙলাদেশ সরকারের এক প্রধান দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাই যত তাড়াতাড়ি পারছেন এইসব রাজনৈতিক পাপীদের জেলে পুরছেন ও জেলের মধ্যে রক্ষা করছেন। কিন্তু জেলের মধ্যেও সকলের জায়গা হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, একটা অতি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচার কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশনের সামনে অভিযুক্তদের বিচার করা হবে। ইতিমধ্যে সরকার ধরে নিয়েছেন যে প্রায় আড়াই লক্ষ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ইয়াহিয়া খাঁর সৈন্যদের সঙ্গে সহযােগিতা করেছে, গণহত্যায় অংশ নিয়েছে ও গত আট মাসে লুঠ ধর্ষণ খুন প্রভৃতি অপরাধে নিজেদের যুক্ত করেছে। যে সকল ব্যক্তি অপরের সম্পত্তি লুঠ করেছে ও দখল করেছে তাদেরও এই বিচারের আওতায় ফেলা হবে।

সূত্র: সপ্তাহ, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১