মানবসভ্যতার অগ্রগতির পক্ষে ভারতের আদর্শ পুনঃঘােষিত
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী
কলকাতা, ৬ ডিসেম্বর বাঙলাদেশ হাইকমিশনের মারফৎ প্রচারিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বলেছেন, “ইতিহাসের এই যুগান্তকারী মুহূর্তে আমরা, বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণ, গভীর কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ আনন্দ-উদ্বেল হৃদয়ে আরেকবার ভারতের সরকার ও জনগণকে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে আজ ভারত মানব সভ্যতার অগ্রগতির পক্ষে তার আদর্শ, অঙ্গীকার ও দায়-দায়িত্বের পুনর্ঘোষণা করেছে।”
“এই ঐতিহাসিক দিনে আসুন আমরা বাঙলাদেশ জাতির কাছে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক অঙ্গীকৃত নতুন অর্থনীতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা কায়েমের শপথ নিই। আমরা এটাও আশা-করি যে ভারত ও বাঙলাদেশের মধ্যে মৈত্রীবন্ধন ক্রমবর্ধমান উপলব্ধির চিরস্থায়ী চিরন্তর গৌরব অর্জন করবে। ভারতের মহান জাতি ও বাঙলাদেশের সদ্যউখিত জাতি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পারস্পরিক বােঝাপড়ার মাধ্যমে পঞ্চশীল নীতির ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্তম্ভসদৃশ স্থাপন করতে পারে।
“আমরা মুক্তিবাহিনীর এবং ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সেই সকল দুঃসাহসী সৈনিক ও অফিসারদের প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই যারা ইতিহাসের এই নতুন পৃষ্ঠা স্বর্ণাক্ষরে নয়, রক্তস্নাত শব্দে রচনা করেছেন। তাদেরই গৌরব।
“আমাদের মহান নেতা বাঙলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ইসলামাবাদের বর্বর জুন্টার কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। যদি রক্ত মুক্তি আনতে পারে, রক্ত তাঁকে তাঁর স্বপ্নের দেশে, বাঙলাদেশে, ফিরিয়ে আনতে পারে।
“বিশ্বের সকল মুক্তি ও শান্তিকামী সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ধ্বজা ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন। জানা উচিত। বৃহৎ শক্তিবর্গের জনস্বার্থ বিরােধী উদ্দেশ্য বা কাজকর্ম যাই হােক না কেন তাতে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা তার চূড়ান্ত লক্ষ্যকে ব্যহত করা সম্ভব নয় বলে শ্রীখন্দকার বিবৃতিতে জানান।
তিনি আরও জানান যে, বাঙলাদেশে পাক সামরিক চক্র যেদিন থেকে সাড়ে সাত কোটি লােকের উপর আঘাত শুরু করেছে সেদিন থেকেই সােভিয়েত ইউনিয়নের জনস্বার্থের গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা দেখা গেছে। এই দেশের স্বার্থে মস্কোতে যে গভীর সহানুভূতি বিরাজমান তাকে আমরা সকৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি।
জনগণের স্বার্থে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও তার জনসাধারণের অতুলনীয় ভূমিকা ভােলা সম্ভব নয়।
মস্কো থেকে এই ধরনের গভীর সহানুভূতি চিরকাল বাঙলাদেশের মানুষ আশা করবে। ধর্ম-নিরপেক্ষ ও গণতন্ত্রের শত্ৰু-দানবের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি লােকের সঙ্গে ভারতের ৫৫ কোটি লােক ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে লড়াই চালাচ্ছে তাতে ঐ শত্রু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে বিবৃতিতে শ্রীখন্দকার জানিয়েছেন।
সূত্র: কালান্তর, ৭.১২.১৯৭১