গেরিলাদের আক্রমণে
ঢাকার পােস্তগােলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র বিধ্বস্ত
মুজিব নগর, ৩০ সেপ্টেম্বর (ইউ এন আই) সামরিক কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি নিরাপত্তাব্যবস্থা সত্ত্বেও মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকা শহরে পােস্তগােলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রটি উড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ হেড কোয়ার্টার থেকে প্রচারিত বুলেটিনে উপরােক্ত সংবাদ জানা গেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্টেট ব্যাঙ্ক, ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, বেতার-কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলির চারপাশে ৮ মিটার উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করা সত্ত্বেও গেরিলা যােদ্ধাদের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে যে, ঢাকা শহরে সরকারী কর্মচারীদেরকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে না।
গত ২৭ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর শ্রীহট্ট সেক্টরে নলকুঠীতে মুক্তি বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের ফলে প্রায় ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। শ্রীহট্ট সেক্টরের রাধানগর এলাকাতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাকসেনাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। ফলে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
বিভিন্ন সেক্টরে গত তিনদিনে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা যেরূপ ব্যাপক আক্রমণ পরিচালনা করেছে তাতে বহু অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। রংপুর সেক্টরে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তিস্তা রেলসেতু বিধ্বস্ত হয়। এই সময় গেরিলারা মহেন্দ্রনগর স্টেশনটি ঘিরে ফেলে টেলিগ্রাফের তার কেটে দেয়। ফলে রেল যােগাযােগ অচল হয়ে পড়ে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দেউলিয়া চরের অধিবাসীরা টহলরত দুজন পাকসেনাকে আক্রমণ করেও তাদের অস্ত্র কেড়ে নেয়।
পাক বাহিনীর হাত থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার
কলকাতা থেকে আমাদের স্টাফ রিপাের্টার জানাচ্ছেন, মুজিব নগর থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে দেখা যায় যে, মুক্তি বাহিনী বাঙলাদেশের সর্বত্র গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুসৈন্যের প্রভুত ক্ষতি করা ছাড়াও মুক্তিবাহিনী দখলদারী পাকবাহিনীর হাত থেকে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছে।
দিনাজপুর রংপুর রাজশাহী সেক্টর
গত ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী চকরমবাড়ি অঞ্চলে পাকসেনার ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে ৭ জন পাকসৈন্যকে খতম করেন। ঐ একই দিনে খানপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর আচমকা আক্রমণে ১৫ জন পাকসৈন্য প্রাণ হারায়। ২৭ সেপ্টেম্বর আরও ৬ জন পাকসেনা প্রাণ হারিয়েছে ইসলামপুর হাটে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতায়।
২৭ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর দীর্ঘস্থায়ী লড়াই চলে বােয়ালির অঞ্চলে। এখানেও পাকিস্তানী বাহিনীর ১৭ জন নিহত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী জবারহাটে সাফল্যের সঙ্গে পাকিস্তানী আক্রমণ প্রতিহত করেন। ৯ জন পাকসেনাই এখানে নিহত হয়। রংপুর অঞ্চলে গাইবান্ধাতে ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর পাতা মাইনে একটি পাকিস্তানী জীপ উড়ে যায়। একজন অফিসারসহ ৪ জন পাকিস্তানী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ৪টি চীনা রাইফেল হস্তগত করে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রাগপুরে, মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মুখােমুখি সংঘর্ষে পাকিস্তানী পক্ষে একজন অফিসার সহ ৫০ জন সৈন্য নিহত হয়। ১৩ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দিনে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী রঘুনাথপুর এবং সার্সাতে ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য খতম করে। একটি ২ ইঞ্চি মর্টার এবং ১২ টি বােমা মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর চুড়ামন কাঠিতে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণে নিহত হয়েছেন ৫ জন পাক সৈন্য এবং একজন অফিসার। গুলি গােলাসহ ৭টি রাইফেলও মুক্তি বাহিনীর হাতে আছে।
শ্রীহট্ট জেলা
গত ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীহট্ট জেলার নাগরনলে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী সৈন্যের আস্তানায় হানা দেয় এবং ৬ জনকে খতম করে। ঐ একই দিনে কামারাইলে নিহত হয় ৯ জন হানাদার সৈন্য। বাওতালিতেও মুক্তি বাহিনী ৩ জন হানাদার সেনা খতম করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর রাধানগরে ট্রেঞ্চখুঁড়ে একদল হানাদার সৈন্যকে আটক করেন। ৪ জন পাক সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণনগরে চা বাগান এলাকায় পাকিস্তানী ঘাঁটিতে হানা দেয়। ৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর টিক্রিয়াতে মুক্তিবাহিনী আরও ৩ জন পাক সৈন্য খতম করে।
সূত্র: কালান্তর, ১.১০.১৯৭১