বাঙলাদেশের ওপর নৃশংসা আক্রমণ বন্ধ করার দাবি
জাপান ও মালয়েশিয়ার সংবাদপত্রে উদ্বেগ প্রকাশ
নয়াদিল্লী, ২১ এপ্রিল (ইউ-এন-আই)- জাপান ও মালয়েশিয়ার দুটি সংবাদপত্র এবং অস্ট্রেলিয়ার ৮৫ জন একাডেমিশিয়ান বাংলাদেশের জনগণের ওপর ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর সমালােচনা করে অবিলম্বে আক্রমণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
টোকিও থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র আসাহি শিমবুন বাংলা দেশের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলা দেশে নগ্ন আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের হত্যা বন্ধ করার জন্য ঐ সংবাদপত্রে পাকিস্তানী জঙ্গী শাসকদের কাছে আহ্বান জানানাে হয়েছে।
সংবাদপত্রের এক সম্পাদকীয়তে বাংলা দেশের বিপজনক পরিস্থিতির উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয়েছে যে, সেখানকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রূপ পেতে চলেছে, অস্বস্তিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। এই প্রভাব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আভ্যন্তরীণ সঙ্কটকে আরাে ত্বরান্বিত করবে বলে ঐ সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়।
মানবিকতা ও ভারত উপমহাদেশের স্থিতিশীলতা-এই দুটো দিক বিবেচনা করে পাক সরকারের কাছে ঐ সংবাদপত্রে বিচক্ষণতার আশা করা হয়েছে।
সংবাদপত্রটি মানবিক দিক থেকে বাঙলা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমাধান চেয়েছে।
পূর্ব মালয়েশিয়ার নামকরা সংবাদপত্রে ডেইলী এক্সপ্রেস ও পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্রের তীব্র এবং তিক্ত সমালােচনা করেছে এবং পূর্ববঙ্গের প্রতি বিপদজ্জনক অদূরদর্শী নীতি অবলম্বনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট বৃটেনকে অভিযুক্ত করেছে।
সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, পূর্ব বাঙলায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা যে বর্বর ও নৃশংস তাণ্ডব করেছে মানব সভ্যতায় ইতিহাসে তার তুলনা নেই।
ভারতে আগত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীদের মােকাবিলায় মানবিক কর্তব্যের দিক থেকে ভারতকে সহায়তার জন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলির এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণের জরুরী প্রয়ােজন বলে সংবাদপত্রে মন্তব্য করা হয়েছে।
যখন পূর্ব বাঙলার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত নেতা ও বেশীর ভাগ মানুষকে পাক জঙ্গীশাহী হত্যা করেছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট বৃটেন ঐ ঘটনাকে কেবলমাত্র পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে বিবেচনা করে এক বিপজ্জনক অদূরদর্শী নীতি নিয়েছে বলে সংবাদপত্রটিতে অভিযােগ করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ৮৫ জন আকাদেমিসিয়ানের নিন্দা
বাঙলাদেশে পাকসৈন্যদের নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে গণহত্যার নিন্দা করে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৮৫ জন আকাদেমিসিয়ান ক্যানবেরাস্থিত পাকিস্তান হাই কমিশনারের কাছে এক চিঠি দিয়েছেন। ঐ চিঠিতে হত্যার দ্বারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উচ্ছেদ করার যে পদ্ধতি জঙ্গীশাহী অবলম্বন করেছে তার বিরুদ্ধে ও ধিক্কার দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ৩০.৪. ১৯৭১