বাঙলাদেশে গণহত্যার বিরুদ্ধে পশ্চিমী সংবাদপত্রগুলির তীব্র প্রতিবাদ
নয়াদিল্লী, ২৭ এপ্রিল (আই এন পি) – বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে পশ্চিমী দেশগুলির সংবাদপত্র ক্রমশঃ আরও সােচ্চার হচ্ছে। এখানে লন্ডনের “ডেলী মিরর” এবং ওয়াশিংটনের “ডেলী নিউজ” পত্রিকা দুটির বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
“আমি লজ্জিত। পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপক গণহত্যার প্রতিবাদে আমি একটি কথা লিখিনি বা বলিনি। এবং আমাদের সবায়ের এই নীরবতা কি উদ্দেশ্য সাধন করছে?”
লন্ডনের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক “ডেলী মিররের সংবাদ ভাষ্যকার উড্র উইয়াট এই কটি কথা বলে বৃটিশ সরকার ও জনগণের প্রতি তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন।
“জাতি, ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে ৫ কোটি পঃ পাকিস্তানীর সঙ্গে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর রয়েছে দুস্তর ব্যবধান।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের সময় থেকে শত শত ছাত্র এবং রাজনৈতিক কর্মীর পাশবিক হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার আনুপূর্বক বিবরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, “হাজার হাজার সাধারণ নিঝঞ্জাট বাঙালীকে বােমা, শেল এবং ফায়ারিং স্কোয়াড দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে দল নির্বাচনে জয়লাভ করল তাকে নিশ্চিহ্ন করা হল এবং হত্যা করা হল দলের নেতাদেরও”।
আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন, “এ সম্পর্কে আমরা কি করছি? আমরা এখনও জেনারেল ইয়াহিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করে চলেছি।” ভাষ্যকার প্রশ্ন তুলেছেন “দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি নৌযান দেওয়ার ব্যাপারে কমনওয়েলথ বাধা দিতে পারে তবে এ ব্যাপারেও কেন তা করা হবে না। কেন আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে যাচ্ছি না।”
আমেরিকার “ওয়াশিংটন ডেলী নিউজ” তাঁদের সম্পাদকীয় নিবন্ধে মার্কিন সরকারের ওপর তীব্র কশাঘাত করে বলেছেন, “১৯৬৫ সালে অস্ত্র বােঝাই জাহাজে পাকিস্তানে পাঠান বন্ধ হয়েছিল কিন্তু পরে তা আবার পাঠান হয়েছে। খবর পাওয়া গেছে, সেইসব অস্ত্র বাংলাদেশে নির্দয়ভাবে গণহত্যা চালনাের কাজে লাগান হচ্ছে।
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধু রাষ্ট্রকে অস্ত্র দেয় নিজস্ব প্রতিরক্ষার কাজে কিন্তু পরে দেখা যায় সেই অস্ত্র ব্যবহার হয় সে দেশের আভ্যন্তরীণ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে শাসকবর্গকে ক্ষমতায় আসন রাখার জন্য এবং এটাই হল পুরাণ গল্পের পুনরাবৃত্তি।”
সূত্র: কালান্তর, ২৮.৪.১৯৭১