You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাজে ডেকে এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
৪ জন অধ্যাপককে গুলি করে হত্যা
পাক বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের আরও একটি নমুনা

কলকাতা, ২২ জুন-রাজসাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদকে সম্প্রতি পাক-সেনারা গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. মাজারুল ইসলাম আজ কলকাতায় ইউ-এন-আই প্রতিনিধিকে ঐ সংবাদ দিয়েছেন। ড. ইসলাম গত দু’মাস বাঙলাদেশের বিভিন্ন উদ্রুত এলাকা পরিভ্রমণ করে সম্প্রতি ভারতে এসেছেন।
সংবাদে প্রকাশ, গত মার্চ মাসের শেষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। মে মাসের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাজে যােগ দিতে বলেন। কর্তৃপক্ষ যােগদানেচ্ছ শিক্ষকদের জীবনের নিরাপত্তা নেবেন এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিশ্রুতিও দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী কাজে যােগ দিতে এলে রাত্রে পাক সেনারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঘিরে ফেলে এবং ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করে।
নিহতদের নাম সর্বশ্রী ড. এ, রকিউব (ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান); ড. আমেদ (পরিসংখ্যান বিভাগের রিডার), অধ্যাপক হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগের রিডার) এবং ড. আব্দুল হক (আইন বিভাগের রিডার)।
ড. ইসলাম আরাে জানিয়েছেন, গত দু’মাসে বাঙলাদেশের বিভিন্ন সরকারী কলেজের বহু অধ্যাপককে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে রংপুরের প্রখ্যাত কবি অধ্যাপক নিজামুল হক খােন্দকারও আছেন। কম পক্ষে প্রায় চার হাজার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পাক-সেনাদের অত্যাচারে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশের সহস্র সহস্র আশ্রয়হীন শিশুকে হয় পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নতুবা সামরিক জেলে আটক করা হয়েছে।
ডা, ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযােগী ছিলেন। তিনি বলেন, শিক্ষাবিদদের নির্বিচারে হত্যা করা পাক-সামরিক শাসকদের অন্যতম অংশ।
তিনি বলেন যে বাঙলাদেশের ছেলেদের জোর করে উর্দু সংস্কৃতিকে মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং তাদের পাকিস্তানের প্রতি বলপূর্বক আনুগত্য প্রদর্শনেও বাধ্য করা হচ্ছে।
রাজসাহীর নিকটবর্তী আমেদ গ্রামের যুবতীদের জোর করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে পাক সেনারা তাঁদের উপর বলাৎকার করছে। নির্যাতিত যুবতীদের বাবা-মার কাছে ফেরত দিয়ে পাক-সেনারা উপভােগের জন্য আবার নতুন মেয়ে সংগ্রহ করছে।
ড. ইসলাম বলেন যে, পাকসামরিক শাসকরা বাঙলাদেশের নাগরিকদের তিনটি তালিকায় বিভক্ত করেছে। প্রথম তালিকাভুক্তদের তারা সাহায্য দিচ্ছে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালিকাভূক্তদের বন্দী ও হত্যা করছে।
যুবকদের ধরে গায়ের রক্ত বের করে নিয়ে নদীতে বা পুকুরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ড. ইসলাম রাজসাহী জেলার নাটোরের একটি পুকুরে ঐরকম বহুমৃত যুবকের মৃতদেহ ভাসতে দেখে এসেছেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৩.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!