বর্বরােচিত নরহত্যা চালানাের অপরাধে
ইয়াহিয়াকে আন্তর্জাতিক আদালতে হাজির করা হােক
বাঙলাদেশের সংখ্যালঘুদের জাতীয় সম্মেলনে ফণী মজুমদারের দাবি
লক্ষনৌ ৭ জুন (ইউ এন আই) বাঙলাদেশে বর্বরােচিত নরহত্যা চালানাের অপরাদে ইয়াহিয়া খানকে আন্তজার্তিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানাের জন্য বাঙলাদেশ সরকারের সংসদীয় দলের অন্যতম প্রতিনিধি শ্রী ফণী মজুমদার ভারত সরকারকে যথােচিত উদ্যোগ নিতে আবেদন করেন।
গতকাল এখানে বাঙলাদেশের সংখ্যালঘুদের জাতীয় কনভেনশনে এক ভাষণে শ্রী মজুমদার উপরােক্ত মর্মে মন্তব্য করেন।
বঙ্গবন্ধু মুজিবরের মুক্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নটিও হাতে নেবার জন্য শ্রী মজুমদার ভারত সরকারের কাছে আবেদন রাখেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সামরিক সরকার দাবি করেছে যে মুজিবর রহমানকে তারা তাদের জেলে আটক করে রেখেছেন।
বাঙলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেবার আবেদন জানিয়ে শ্রী মজুমদার বলেন, এই স্বীকৃতি দান মুক্তিফৌজকে নৈতিক বলে বলীয়ান করে তুলবে এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলির পক্ষে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের পথও সুগম করে তুলবে।
বাঙলাদেশে অবাঙালীদের হত্যা করার কল্পিত-কাহিনী প্রচারের প্রতিবাদ করে শ্রী মজুমদার বলেন এটা সর্বব মিথ্যা। পাকিস্তান সরকার গােড়া থেকেই তাদের সৈন্য বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে বাঙলাদেশের মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে। শ্রী মজুমদার জোরের সঙ্গে বলেন ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত যতদিন বাঙলাদেশের সরকারের হাতে প্রশাসনভার ছিল ততদিন একটিও লুঠ, অগ্নিকাণ্ড ও হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে নি।
বাঙলাদেশ সরকারের আর একজন সংসদীয় প্রতিনিধি শাহ মােয়াজ্জাম হােসেন তাঁর ভাষণে বলেনভারত সরকার যদি বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করে, তাহলে বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা স্থির করে নেবে।
বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের প্রচার চালিয়ে ভারত সরকার একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চাইছে বলে পাক সরকার যে প্রচার করছে তার প্রতিবাদ করে শ্রী হােসেন বলেন-এখনাে বাঙলাদেশের জনগণের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। সুতরাং বাঙলাদেশ সরকার কি করে অ-ঐশ্লামিক রাষ্ট্র বলে পরিগণিত হতে পারে, তা বােধগম্য নয় বলে শ্রী হােসেন মন্তব্য করেন।
কনভেনশনের বৈকালিক অধিবেশনের সভাপতিরূপে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কমলাপতি ত্রিপাঠি আশ্বাস দেন, বাঙলাদেশের শরণার্থীদের সব রকমের সাহায্য দেওয়া হবে।
স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে শ্রী ত্রিপাঠি বলেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে একটা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত শীঘ্রই এসম্পর্কে নেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
যে সব সাম্প্রদায়িকতাবাদী দল এই সুযোেগ নিজেদের স্বার্থে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করতে উৎসুক, তাদের সম্পর্কে শ্রী ত্রিপাঠি হুঁসিয়ার থাকার জন্য সকলকে সতর্ক করে দেন।
কনভেনশনে বাঙলাদেশের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী আরাে দৃঢ় ও দীর্ঘতর করার প্রস্তাব জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কৃষিমন্ত্রী ফকরুদ্দিন আলি আমেদ, ডেপুটি স্পীকার জি এম সােয়েল সহ অন্যান্য নেতারাও বক্তৃতা দেন।
সূত্র: কালান্তর, ৮.৬.১৯৭১