বাঙলাদেশে গণহত্যা চালানাে সত্ত্বেও
পাক জঙ্গী চক্র মার্কিন আর্থিক সাহায্য পাবে
ওয়াশিংটন, ৩০ জুন (ইউ-এন-আই)- এক আনসা’ সংবাদে বলা হয়েছে, বাঙলাদেশে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর পাইকারী গণহত্যা চালানাে সত্ত্বেও নিক্সন সরকার ইয়াহিয়া চক্রকে সর্বাধিক অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়েই যাবে।
মার্কিন কংগ্রেসের কাছে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি শ্রী ক্রিস্টোফার ফল হােলেন এই স্পষ্ট ইঙ্গিতও দিয়েছেন, হালে মার্কিন প্রশাসন যেসব বাধানিষেধ আরােপ করেছে,“তার আগে পিন্ডির শাসকদের যেসব অস্ত্রশস্ত্র নেবার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেগুলির দৌলতে ইয়াহিয়া চক্র যেসব অস্ত্রশস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে সেগুলিকে বন্ধ করার জন্য নিক্সন সরকার কোন ব্যবস্থাই অবলম্বন করবে না।
পূর্ববঙ্গের জনগণের ওপর এখনও পাইকারীভাবে দমন পীড়ন চলছে এই প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নিকসন প্রশাসন এহেন সিদ্ধান্ত করায় এটাকে একটা নিষ্ঠুর নির্বুদ্ধিতা বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের নিক্সন সরকার বিরােধী সদস্যরা।
অগণিত সংখ্যক বাঙালীকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে এই ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা আবার বলেছেন, পিন্ডির শাসকদের সাহায্য দেবার নীতির চেয়েও ইয়াহিয়ার যুদ্ধের শিকার অগণিত শরণার্থীদের জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থাদি দেবার দাবিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
নিক্সন প্রশাসনের পলিসির রূপরেখা বিবৃতি করতে গিয়ে ফন হােলেন বলেছেন, ইয়াহিয়া প্রশাসনকে সাহায্য দেওয়া অব্যাহত রাখলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “পূর্ববঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝােতায় উপনীত হবার ব্যাপারে প্রভাব প্রয়ােগ করার ক্ষেত্রেও অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থানে থাকবে।” তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, সেদিকে যাবার সামান্যতম ইঙ্গিতও ইয়াহিয়া এ পর্যন্ত দেন নি।
হালে বিশ্বব্যাঙ্কের বৈঠকে কানাডা প্রমুখ কতিপয় সদস্য দেশ যে মনােভাব ব্যক্ত করেছে, মার্কিন সরকারের এই মনােভাব তার সম্পূর্ণ বিরােধী। সেখানে তারা বলেছিল, পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ববঙ্গের মধ্যে একটা রাজনৈতিক মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তারা পশ্চিম পাকিস্তানকে কোন সাহায্য দেবে না। তারা বলেছিল পূর্ববঙ্গে আরও বেশি দমন পীড়নের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলেই তারা ঐ সাহায্যদান স্থগিত রাখতে চায়।
অন্যদিকে আজই মনট্রিল থেকে এ-পি জানাচ্ছে, গতকাল সেখানে পাকিস্তানী জাহাজ ‘পদ্মায় কানাডা থেকে এফ-৮৬ জঙ্গী জেটবিমানের যন্ত্রাংশ বােঝাই ৪৬ টি ক্রেইট যাতে তােলা না হয় সেজন্য কানাডা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তার আগে কানাডার পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রীমচেল শার্প ঘােষণা করেন যে, মার্কিন অস্ত্রবাহী পাকিস্তানী জাহাজ ‘পদ্মায় কানাডায় তৈরি কোন অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১.৭.১৯৭১