You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.11 | কুমিল্লার কসবা অঞ্চলে বােমাবর্ষণ করে এক হাজার মানুষ হত্যা | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিফৌজের দুর্বার অভিযানে
মরিয়া পাক বাহিনীর বর্বরতা
কুমিল্লার কসবা অঞ্চলে বােমাবর্ষণ করে এক হাজার মানুষ হত্যা
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ১০ সেপ্টেম্বর-বাঙলাদেশে মুক্তিফৌজের অভিযান যতই দুর্বার হয়ে উঠছে, ইয়াহিয়া খার জঙ্গীবাহিনী ভীতগ্রস্ত হয়ে ততই মরিয়া হয়ে উঠছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পুষ্ট ইয়াহিয়ার বর্বর পাকবাহিনী আবার অবাধ গণ হত্যায় মেতে উঠেছে।
এখানে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, কুমিল্লার কসবার গ্রামাঞ্চলে পাকবাহিনী বােমাবর্ষণ করে প্রায় এক হাজার নরনারীকে হত্যা করেছে। একটানা বােমাবর্ষণের ফলে শত শত মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসছেন।
অন্যদিকে মুক্তিফৌজ ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও বিভিন্ন সেক্টরে দুর্ধর্ষ গেরিলা অভিযান চালিয়ে পাকবাহিনীকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
মুজিব নগর থেকে প্রাপ্ত সংবাদে বলা হয়েছে, বাঙলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিফৌজ ব্যাপকভাবে গেরিলা অভিযান পরিচালনা করে চলেছে।
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিফৌজ ২১০ জন পাকসেনা সহ ৪৫৬ জন শত্রু খতম করেছে। গেরিলাদের সঙ্গে ইতস্তত; সংঘর্ষে ১৩০ জন পাকসেনা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মুক্তি ফৌজ ৫০টির ও উপর রাইফেল দখল করেছে।
গত বুধবার ময়মনসিংহ জেলার কামালপুরে মুক্তিফৌজ পাকসেনাদের ঘেরাও করে ফেলে এবং চরম আঘাত হানে। ফলে বহু পাকসেনা নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিফৌজ এই জেলারই নালিতাবাড়ি থানা অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং পাক সামরিক পুলিসদের ঘাটি বিধ্বস্ত করে দেয়।
৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের একটি বিশেষ এলাকা জুড়ে মুক্তিফৌজের ব্যাপক তৎপরতা চলতে থাকে। এই আক্রমণের ফলে ইয়াহিয়ার বাহিনী ছুটে পালায় এবং তাদের কাছ থেকে গেরিলার ১টি চীনা তৈরি রাইফেল সহ ২০ টি রাইফেল হস্তগত করে। এদিকে পাক সেনাবাহিনীর সহজ চলাচল। পথ বন্ধ করার জন্য হালুয়াঘাট আলাইলির একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু জড়িয়ে দেওয়া হয়।
সিলেট জিলায় দিলখুসের কাছে মুক্তিফৌজ পাকসেনাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং ১২ জন সৈন্যকে খতম করে।
এই সময়েই বিখ্যাত ছাতক-সিলেটের রেলপথ মুক্তিযােদ্ধারা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেয় ফলে এই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ যােগাযােগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর সিলেট-ময়মনসিংহ সেক্টরে ও নয়াগ্রামে গেরিলারা গােপনঘাটি থেকে পাকসেনাদের উপর গুলি চালাতে থাকে। এই অতর্কিত আক্রমণের ফলে ১৩ জন পাকসেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
কুষ্টিয়া-যশাের-খুলনা সেক্টরে গােয়াল গ্রাম ও গােয়ালহাটিতে মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাকসেনাদের প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের ফলে ৫ জন পাক সেনা নিহত হয়। ভােমরা ও কাকডাঙ্গাতে মুক্তিফৌজ মর্টারের গুলিতে পাকসেনাদের ব্রিত করে তােলে এবং ইতস্ততঃ গুলি চালিয়ে ১০ জন পাকসেনা খতম করে।
গত সপ্তাহে রংপুর-দিনাজপুর সেক্টরে মুক্তিফৌজের ব্যাপক তৎপরতা চলে। এখানে ডিমাপাড়ায় ৪জন পাকসেনা নিহত হয়।
মুক্তিফৌজ ঠাকুরগাঁও পিরগঞ্জে পাকঅধিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়।
গেরিলারা পার্বতীপুরের রেল পথও উড়িয়ে দেয় ফলে যােগাযােগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। এই সেক্টরেই রানী শংকাইল হরিপুর রােডে মুক্তিফৌজের একটি মাইন বিস্ফোরণে ৫ জন পাকসেনা সহ সামরিক বাহনিীর একটি গাড়ী নিশ্চিহ্ন হয়। ঢাকা-কুমিল্লা সেক্টরে পাক অধিকৃত-লতিফপুর, গাজিপুর, বাগরেড কোটেস্বর, নােয়াপুর বাজার প্রভৃতি এলাকাগুলিতে মুক্তিফৌজের ব্যাপক আক্রমণ চলতে থাকে। এই আক্রমণের ফলে ইয়াহিয়ার ঘৃণ্য দালালদের ৫০ জন নিহত ও বহু আহত হয়।

সূত্র: কালান্তর, ১১.৯.১৯৭১