ভুরুঙ্গামারীর নারী বন্দী শিবির
(স্টাফ রিপাের্টার)
এক সংবাদে জানা গেছে যে গত ১৪ ও ১৫ তারিখে তীব্র লড়াইয়ের পর বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনী রংপুরের ভুরুঙ্গামারী শহর দখল করার পর এমনি একটি বন্দী শিবির আবিষ্কার করেন। এটি সেখানকার পাক ফৌজের কম্যান্ডিং অফিসারের বাসভবনে অবস্থিত ছিল। একটি বন্ধ ঘর থেকে আর্ত চীৎকার শুনে মুক্তি সেনারা সেই ঘরের দরজা ভেঙে ২৫ জন অর্ধনগ্ন, অর্ধাহার ক্লিষ্ট বিভিন্ন বয়সের মেয়েকে উদ্ধার করেন। এর মধ্যে ১০,১১ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সের মেয়েরা পর্যন্ত ছিলেন। ঐ বাড়ি থেকে প্রায় হাজার গজ দূরে একটি স্কুলে শিশু ও বৃদ্ধদের পুরুষদের বন্দীদশা থেকে মুক্তি সেনারা উদ্ধার করেন। সম্প্রতি মুক্ত ভুরুঙ্গামারীতে গিয়ে এই সব হতভাগ্য বন্দিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার করে এপার বাঙলার জনৈক ব্যক্তি ফিরে এসে যে তথ্য জানিয়েছেন, তা মর্মান্তিক। এখানে একজন বন্দিনী হলেন, আবদুল লতিফের স্ত্রী, ধর্মপ্রাণ লতিফ তার স্ত্রীকে সেনাবাহিনীর লালসা চরিতার্থ করার জন্য ছেড়ে দিতে রাজী না হওয়ায় পাকিস্তানীরা তাকে হত্যা করে এবং তাঁর স্ত্রীকে জোর করে পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন আতাউল্লার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। মায়ের সামনেই একটি সন্তানকে বেয়নেট, দিয়ে হত্যা করা হয় ও অপর দুই সন্তানকে জোর করে মায়ের কাছে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর পাঁচ মাস ঐ মহিলাকে নারীর চরম লাঞ্ছনা ভােগ করতে হয়েছে। ভুরুঙ্গামারী মুক্ত হবার পর মা তার সব কনিষ্ঠ সন্তানটির সঙ্গে পুনমিলিত হয়েছেন, কিন্তু অপর সন্তানের এখনাে কোনও খোঁজ পাওয়া যায় নি। ভুরুঙ্গামারী মুক্ত হবার কয়েকদিন আগে পাকিস্তানীরা পরাশর গ্রাম থেকে ১১ বছরের অপাপবিদ্ধ মেয়ে জামিনা খাতুন আর তার মাকে ধরে নিয়ে আসে। মুক্তি বাহিনী এসে পড়ার ফলে দু’দিনের বেশি তাদের চরম লাঞ্ছনা ভােগ করতে হয়নি, এটাই বােধহয় একমাত্র সান্তনা।
৪০ বছরের অন্তসত্ত্বা আমিনা খাতুন পাকসৈন্যের লালসা চরিতার্থ করতে বাধা দিলে বর্বর সৈন্যটি তার পেটে লাথি মারে। ফলে আমিনা একটি মৃত সন্তানের জন্ম দিল। কিন্তু তার পরদিনই তিনি একাধিক সৈন্য দ্বারা ধর্ষিতা হন।
স্কুল বাড়িতে বন্দী অন্যতম পুরুষ এবারুদ্দীন মণ্ডল তার স্ত্রীকে সৈন্যদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করলে বেয়নেই দিয়ে তার পা এফেঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া হয়। সৌভাগ্য বশতঃ শ্ৰী মন্ডলের স্ত্রী পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন।
সূত্র: কালান্তর, ২২.১১.১৯৭১