মার্কিন অস্ত্র বাঙলাদেশের গণহত্যার শক্তি জুগিয়েছে
আমেরিকায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি সিদ্দিকির মন্তব্য
ডেনভার কলােরেডাে, ১ সেপ্টেম্বর (এ পি ) – গত ২৫ মার্চ পাক সেনা বাহিনী বাঙলাদেশের উপর এক বর্বর অভিযান চালায় এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে। এই ব্যাপক গণহত্যার ব্যাপারে আমেরিকার বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। কারণ যে অস্ত্র ও গােলাগুলি বাংলাদেশের অগণিত মানুষের বুক বিদ্ধ হয়েছে সেই অস্ত্রশস্ত্রের অধিকাংশই যােগান দিয়েছে আমেরিকা।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি শ্রীএম আর সিদ্দিকি আজ এখানে এসে পৌঁছেছেন এবং উপরােক্ত মর্মে তার বক্তব্য উপস্থিত করেছেন।
শ্রী সিদ্দিকি পাক জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। বাঙলাদেশে আজ কী ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে শ্রী সিদ্দিকি মার্কিনবাসীদের অবহিত করবেন।
শ্রী সিদ্দিকি আমেরিকাবাসীদের প্রতি এক আহ্বান জানিয়ে বলেন যে তারা যদি পাকিস্তান সরকারকে সর্বপ্রকার সামরিক ও আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তাদের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন তবেই তারা বাঙলাদেশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করার কাজে সাহায্য করতে পারেন।
বাঙলাদেশ সম্পর্কে সােভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা উল্লেখ করে শ্রী সিদ্দিক বলেন যে, সােভিয়েত ইউনিয়ন প্রকাশ্যভাবে বাঙলাদেশে গণহত্যার নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন এবং এ সম্পর্কে কঠোর ভাষায় পাকসরকারের নিকট প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
অপরপক্ষে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ভারতে আগত বাঙালী শরণার্থীদের কিঞ্চিৎ সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই করেননি। শ্রী সিদ্দিকি আরও বলেন যে, এই শরণার্থীদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য এক বছরে ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং ভারতই এ পর্যন্ত এই ব্যয়ভার বহন করে আসছে।
শ্রী সিদ্দিকি আমেরিকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন যে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উপর তাদের যে শ্রদ্ধা রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি আস্থাবান, কিন্তু বাঙলাদেশে গণহত্যা সম্পর্কে মার্কিন সরকারের নীরবতার কারণ তিনি উপলব্ধি করতে পারেন না।
সূত্র: কালান্তর, ২.৯.১৯৭১