You dont have javascript enabled! Please enable it!

চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করবে না: একটি আশা
দিল্লীর বাঙলাদেশ মিশন প্রধানের স্বাধীন বাঙলাদেশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা

নয়াদিল্লী, ২ নভেম্বর- বাঙলাদেশ মিশনের প্রধান হুমায়ুন রসিদ চৌধুরীর আশা, ভারত-পাক সংঘর্ষ ঘটলে “চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করবে না।” এ খবর ইউ, এন, আই’- এর।
কেন এই আশা, এর জবাব হিসেবে তিনি বলেন, “ইসলামাবাদকে সাহায্য করে চীন বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনসাধারণের বিরূপতা অর্জন করবে না।” রসিদ চৌধুরী মনে করেন, চীনও মুক্তি সগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং সে জানে বাঙলাদেশের জনগণও ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার হাত থেকে মুক্তিলাভের জন্য সংগ্রাম করছে।
তাছাড়া, রসিদ চৌধুরীর মতে বাঙলাদেশের ভৌগােলিক অবস্থান এমনই যে চীন চাইবে এই দেশটি স্বাধীন হােক।
আজ বিদেশী সাংবাদিকদের আয়ােজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাঙলাদেশ মিশনের প্রধান ঐ মন্তব্যগুলি করেন। প্রসঙ্গটির অবতারণা হয় মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইকের কাছে ইয়াহিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়ে। ঐ সাক্ষাতকারে ইয়াহিয়া বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে চীন তাকে সমর্থন করবে।
রসিদ চৌধুরী তার নিজস্ব মূল্যায়ন থেকে চীন সম্পর্কে ঐ অভিমত প্রকাশ করেন।
বাঙলাদেশ প্রতিনিধি মার্কিন সরকারের আচরণেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মার্কিন সরকার যে সব সামরিক শেয়ার পার্টস্ পাকিস্তানকে দিচ্ছে তা বাঙলাদেশের নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রেও রসিদ চৌধুরী আশা করেন, মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য দেবে না। তিনি বলেন, সােভিয়েত চীন ও অন্যান্য দেশের মত মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বও আমরা কামনা করি।”
রসিদ চৌধুরী দাবি করেন বাঙলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর কার্যকরী নিয়ন্ত্রণে এবং বাঙলাদেশের জনসাধারণ পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যে কোন মীমাংসায় বিশ্বাস করে না।
দঃ পূর্ব এশিয়ার স্থায়ী শান্তির জন্য
সাংবাদিকদের কাছে স্বাধীন বাঙলাদেশের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে রসিদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাঙলাদেশ কেবল ভারত উপমহাদেশেই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় শান্তি ও সুস্থিরতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। অন্যথায় এই উপমহাদেশে এই গােলমাল এই অঞ্চলের শান্তি ও সু করবে।
এ ছাড়া স্বাধীন বাঙলাদেশের অর্থ হবে একটি দুর্বল পাকিস্তান। রসিদ চৌধুরী বলেন, এই দুর্বল পাকিস্তান আর কখনও এই উপ-মহাদেশে শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য তার কুৎসিত মুখটা দেখাতে পারবে না।
তিনি বলেন স্বাধীন বাঙলাদেশে পূর্ব ভারতেও সুস্থিরতা স্থাপনে সহায়ক হবে কারণ ভারতের পাশে তখন থাকবে বন্ধু বাঙলাদেশ শত্রু পাকিস্তান নয়। এই পরিস্থিতি ভারত ও বাঙলাদেশের মধ্যে সহযােগিতায় নতুন দিগন্ত উন্মােচিত করবে।
রসিদ চৌধুরী বলেন বাংলাদেশের জনগণ ভারতরে সঙ্গে শত্রুতার নীতিতে অতিষ্ঠ। তারা দীর্ঘকাল ধরে এই একই খেলায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁরা এখন শান্তিতে, মৈত্রীতে তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে বসবাস করতে চান। তিনি বলেন, “আমরা পাকিস্তানের মত ভারত-দ্বেষী অভিযান পছন্দ করি না।”
রসিদ চৌধুরী স্বাধীন বাঙলাদেশে আরও একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন এর ফলে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েরই সাময়িক খাতে ব্যয় কমবে এবং সেই অর্থ এই উপমাহাদেশের জনগণের সার্বিক উন্নতির কাজে ব্যয়িত হবে।
তিনি আরও বলেন, উভয় প্রতিবেশীর মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে উভয় দেশই একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।
হুমায়ুন রসিদ চৌধুরী দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন যে, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চান না তারা এই উপমহাদেশে শান্তি ও সুস্থিরতাও কামনা করেন না।

সূত্র: কালান্তর, ৩.১১.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!