You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত ও সােভিয়েতের সমর্থন বিশেষভাবে গণ্য করি
-বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ১ সেপ্টেম্বর- বাঙলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আমেদ বলেছেন, ভারত এবং রাশিয়া আমাদের মূল্যবান বন্ধু। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের সমর্থন আমরা বিশেষভাবে গণ্য করি।
সম্প্রতি মুজিবনগরে বিশ্ব শান্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রমেশ চন্দ্রের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান মন্ত্রী উপরােক্ত মন্তব্য করেন। শ্ৰী আমেদ ভারত- সােভিয়েত মৈত্রী, শান্তি সহযােগিতার চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দুটি মহান দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সকল ধরনের শােষণ বন্ধ করার সংগ্রামে ভারত সােভিয়েত চুক্তি আমাদের ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ভারত আমাদের সংগ্রামে আরও বেশী সহায়তা করবে বলে আশা রাখি, নিপীড়িত নির্যাতিত জনগণের জাগরণে সােভিয়েত দেশ সহায়তা করছে। স্বভাবতই আমরা আমাদের ন্যায়ের সংগ্রামে সােভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সর্ববিধ সাহায্যের প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, আমাদের সংগ্রামে বাঙলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক দল এবং সংগঠন সহায়তা করছে। শ্রীআমেদ বলেন, তারা আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সরকারের সঙ্গে একযােগে কাজ করছে। প্রধান মন্ত্রী বলেন, “আমরা অধ্যাপক মােজাফফর আমেদের নেতৃত্বে ন্যাপ এবং মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপের ব্যাপক সক্রিয় সাড়া পেয়েছি।” প্রধানমন্ত্রী আমেদ বলেছেন ভিয়েতনামে আমেরিকা যে অন্যায় যুদ্ধে জড়িয়েছে আমেরিকান নাগরিকরা তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কার্যকরী প্রতিবাদ করেছে। অনুরূপভাবে বাঙলাদেশের ক্ষেত্রে বর্তমান মার্কিন নীতির পরিবর্তনে আমেরিকান নাগরিকরা সফল হবেন।
শ্ৰী আমেদ বলেন, আমরা সবসময়ই স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতির কথা বলেছি। আমরা সকল ধরণের সামরিক চুক্তির বিরুদ্ধে। এই কারণেই মনে হয় যারা পাকিস্তানকে তাদের সামরিক চুক্তির মধ্যে বেধে রাখতে চায় তারা বাঙলাদেশের জনগণের প্রতি বিরূপ। তিনি আওয়ামী লীগের নীতিসমূহ ব্যাখ্যা করছিলেন।
শ্রীচন্দ্রকে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, গত মে মাসে বুদাপেস্ট সম্মেলনে বাঙলাদেশের জনগণের জন্য ল্যামবারিকিস মেডেল অর্পণ এবং আমাদের সম্রামের প্রতি বিশ্ব শান্তি সংসদের একটানা সহযােগিতা ও সাহায্য আমাদের কাছে বিশেষ মূল্যবান। বাঙলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বশান্তি সংসদের সমর্থন এবং অভূতপূর্ব কাজের জন্য সংসদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শ্রীচন্দ্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য শান্তি সংসদ বিশ্ব জুড়ে যে প্রচারাভিযান চালাচ্ছে তা আমাদের পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে শ্রীআমেদ জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের নীতি হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব। বিশেষ করে মতামত নির্বিশেষ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে আমাদের ইচ্ছায় ভারতের স্থান সর্বাগ্রগণ্য। ভৌগােলিক কারণেই এটা স্বাভাবিক।” তিনি বলেন, উপরােক্ত নীতিতে আওয়ামী লীগ, পূর্বেও কাজ করেছে। তিনি জানান, ভারত পাক সংঘর্ষের পটভূমিতে তাসখন্দ ঘােষণাকে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলাম।
শ্রীচন্দ্রের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরবের ঘটনার প্রতি আওয়ামী লীগের সংহতি এখনও বজায় রয়েছে। তিনি বলেন, মিশরের বিরুদ্ধে ১৯৫৬ সালে অ্যাংলাে-ফ্রান্স ইস্রায়েলের আক্রমণের প্রতিবাদে আমরা সক্রিয় বিক্ষোভ জানিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক গঠন করে রাষ্ট্রপতি নাসেরের কাছে স্বেচ্ছাসেবকদের নেবার জন্য বলেছিল। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আরব রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার সাম্রাজ্যবাদী ঘৃণ্য চক্রান্ত পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষরা যৌথভাবে প্রতিহত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পার্টি সবসময়েই প্যালেস্টাইন-এর স্বাধীনতা সগ্রাম সমর্থন করে আসছে। লক্ষ লক্ষ নাগরিক প্যালেস্টাইন থেকে বিতড়িত হওয়ার ঘটনা আরব রাষ্ট্রে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের জাজ্বল্য নজির।” ভিয়েতনাম সম্পর্কে বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৪ সালের জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামী জনগণকেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে। ভিয়েতনামে বিদেশী সৈন্যদলের প্রবেশের মাধ্যমে জেনেভা চুক্তি অমান্য করা হয়েছে। নীতিগতভাবে এবং আইনত এই সৈন্যদলের ভিয়েতনামের মাটিতে থাকার কোনাে অধিকার নেই। ভিয়েতনাম থেকে ভিনদেশী সৈন্যদলের প্রত্যাহারই হচ্ছে শান্তির পথ।” ঔপনিবেশিক যাতাকলের বিরুদ্ধে আফ্রিকার জনগণের সংগ্রাম সম্পর্কে শ্রীচন্দ্রের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আফ্রিকা এবং অন্যত্র যেখানেই জনগণ সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং শােষণের থাবা থেকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে তারা আমাদের সমর্থন পেয়েছেন এবং পাবেন।

সূত্র: কালান্তর, ২.৯.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!