You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশ মন্ত্রিসভায় উপদেষ্টা কমিটি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সংগ্রামী জনতার সার্বিক ঐক্যের মূর্ত প্রতীক
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৯ সেপ্টেম্বর-মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনা করার ব্যাপারে বাঙলাদেশ মন্ত্রিসভার পরামর্শদাতা কমিটির প্রথম বৈঠক শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে। মুজিবনগর থেকে বাঙলাদেশ সরকারের সূত্রে এই খবর জানা যায়। বাঙলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ যারা ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শশাষণের বিরুদ্ধে সক্রিয় সংগ্রাম করছেন, এই কমিটি গঠনের দ্বারা মুি সংগ্রামে তাদের অংশীদারিত্বের মনােভাব সুনিশ্চিত করবে। পরামর্শদাতা কমিটিতে আটজন সদস্য রয়েছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যে মুক্তিকামী জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল এবং যারা আওয়ামী লীগ ও একমাত্র বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আস্থাভাজন এই কমিটি সেই জনসাধারণের সামগ্রিক ঐক্যের অভিব্যক্তি।
এখানে উল্লেখ্য, কমিটি গঠনের সংবাদ কালান্তরেই একমাত্র গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন গঠিত এই কমিটিতে রয়েছেন, গণ-প্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খােন্দাকর মােস্তাক আহমেদ, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট পাটির মণি সিং, ন্যাপের অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ, মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বাঙলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেসের মনােরঞ্জন ধর। আওয়ামী লীগ থেকে আরও দুইজন সদস্য নেওয়া হবে। মুজিনগরে বাঙলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে বিভিন্ন নেতার গতকাল সকাল ও রাতে দুই দফায় দীর্ঘ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে যােগদান করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন, মােস্তাক খােন্দকার, ক্যাপ্টেন মনসুর আলি, কামরুজ্জামান, আবদুস সামাদ (সকলেই আওয়ামী লীগ), মৌলানা ভাসানী, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিং, ন্যাপের অধ্যাপক মােজাফফর আমেদ, পাকিস্তান কংগ্রেসের মনােরঞ্জন ধর। বৈঠক থেকে সাতটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবগুলি হচ্ছে নিম্নরূপ।
১। পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক চক্র কর্তৃক বাঙলাদেশের স্বীকৃত জাতীয় নেতা শেখ মুজিবর রহমানের অবৈধ আটকের বিরুদ্ধে এই সভা গভীর ক্রোধমিশ্রিত ঘৃণা এবং বেদনা প্রকাশ করছে। এই সভা শ্রীরহমানের লজ্জাকর প্রহসন মূলক বিচারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই সভা বিশ্বের সকল শক্তি এবং রাষ্ট্রসংঘকে অবিলম্বে এই ভণ্ডামীপূর্ণ বিচার বন্ধ করা এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম বাঙলাদেশের প্রধানকে মুক্ত করে দেবার জন্য আহব্বান জানাচ্ছে।
২। এই সভা বাঙলাদেশ সরকারের প্রতি আন্তরিক আস্থা ও বিশ্বস্ততা প্রকাশ করছে এবং এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘােষণা করছে।
৩। এই সভা ভারত এবং বিশ্বের দেশগুলির কাছে অবিলম্বে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে বাঙলাদেশের সাড়ে সাতকোটি শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক নাগরিকের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতাকে স্বীকার করতে আহ্বান জানাচ্ছে। এই সভা বাঙলাদেশ সরকারকে অস্ত্রশস্ত্র সহ সর্বপ্রকার সাহায্য দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র গুলির কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
৪। পশ্চিম পাকিস্তানে সৈন্য বাহিনীর কায়েমী স্বার্থের দখলদারি থাবা থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনী শত বাধা বিপত্তির যে দুর্জয় সংগ্রাম চালাচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে তাকে এই সভা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য যে সব বীর সন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন এই সভা তাদের প্রতি উত্তপ্ত অভিনন্দন জানাচ্ছে।
৫। বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের প্রতি ভারতের জনগণ এবং সরকার যে উদার সাহায্য করছেন তার জন্য এই সভা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। বাঙলাদেশের সংগ্রামী জনগণের প্রতি ভারত সরকারের সমর্থনকে এই সভা অভিনন্দন জানাচ্ছে।
৬। শােষণের শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে জনগণ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এই সভা তাদের প্রতিও সংহতি জ্ঞাপন করছে। বাঙলাদেশের ভাইদের মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণ সমর্থন করার জন্য এই সভা পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের কাছে ঐকান্তিক আগ্রহপূর্ণ আহ্বান জানাচ্ছে।
৭। রাজনৈতিক সমাধান বলতে বাঙলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কোনাে মীমাংসাই জনগণের কাছে গ্রহণযােগ্য হবে না। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙলাদেশ চূড়ান্ত ত্যাগ করছে এবং স্বাধীনতার মূল্য যদি রক্ত দিয়ে দিতে হয় তাহলে বাঙলাদেশের জনগণ প্রতি ঘন্টায় ত দিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র: কালান্তর, ১৪.৯.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!