You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.18 | | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশ সরকার গড়তে চায়
ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র
-তাজউদ্দীন

মুজিবনগর, ১৭ অক্টোবর (ইউ এন আই)-গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গত বুধবার মুক্তিযােদ্ধা গেরিলাদের সামনে এক ভাষণে বলেছেন, “আমাদের সরকার এমন এক রাষ্ট্র গঠনে ইচ্ছুক যে রাষ্ট্র হবে সার্বিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক এবং যার বৈদেশিক নীতি হবে গােষ্ঠী নিরপেক্ষ।”
ঐদিন দিনাজপুর রণাঙ্গনের একটি যুব শিবিরে প্রায় ৩,০০০ ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলাদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ভাষনটি এখানকার মুক্তিবাহিনীর প্রধান কার্যালয় থেকে আজ প্রচারিত হয়েছে।
সকল মতপার্থক্য পরিহার করুন
পবিত্র মাতৃভূমি থেকে বর্বর হানাদারদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য গেরিলাদের সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হবার আহ্বান জানিয়ে জনাব তাজউদ্দিন তাঁদের কাছে একটি অনুরােধ রাখেন- তাঁদের মুক্তিসংগ্রামে কেবলমাত্র মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে নিজেদের পরিচিত করে সকল মতপার্থক্য পরিহার করুন।
“এই সঙ্কটকালে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মুখে রাজনৈতিক মতপার্থক্যও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।”
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রচারিত বাঙালী জাতীয়তাবাদকে সংরক্ষিত করা এবং হানাদারদের হাত থেকে মাতৃভূমি মুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়েই বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।
যে কোন অবস্থাতেই জয় অবশ্যম্ভাবী
যে কোন অবস্থাতেই শেষ পর্যন্ত জয় অবশ্যম্ভাবী-একথা ঘােষণা করে তিনি বলেন, “এটা হল অস্তিত্ব, মৌলিক ও মানবিক অধিকার এবং পূর্ণ স্বাধীনতার লড়াই।”
তিনি আরও জানান, ২৫ মার্চ নিরীহ নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর সামরিক বাহিনীর বর্বরােচিত আক্রমণের ফলে মৌলিক অধিকার অর্জন তাদের সকল গণতান্ত্রিক ও সংবিধানসম্মত আন্দোলন ব্যর্থ হবার পরই বাঙলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও জনসাধারণ সশস্ত্র সংগ্রামের পন্থা অবলম্বনে বাধ্য হন।
ঐদিন দুপুরে আহত মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার জন্য একটি হাসপাতালে উপনীত হলে তাঁকে ‘জয় বাঙলা’ ধ্বনিতে স্বাগত জানানাে হয়। ঐ হাসপাতালে জনাব তাজউদ্দীন মােট ৪০ জন আহত মুক্তিযােদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে পুনরায় যুদ্ধে নামার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.১০.১৯৭১