You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.19 | স্বাধীন বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে- শান্তি সংসদ আয়ােজিত জনসভার প্রস্তাব | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

স্বাধীন বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে শান্তি সংসদ আয়ােজিত জনসভার প্রস্তাব
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ১৮ এপ্রিল—আজ রাজা সুবােধ মল্লিক স্কোয়ারের এক জনসভা থেকে বাঙলাদেশের নবজাতক প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেবার জন্য ভারত সহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানান হয়েছে।
বিশ্বশান্তি সংসদের আহ্বানে পশ্চিমবঙ্গ শান্তিসংসদ আয়ােজিত বাঙলাদেশ সংহতি জনসভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীবিবেকানন্দ মুখার্জী।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এই বিশ্বাস ঘােষণা করা হয়েছে যে, বিশ্বের জনগণের কার্যকরী সমর্থন ও সাহায্য বাঙলাদেশের জয়কে ত্বরান্বিত করে তুলবে এবং বাঙলাদেশের সরকার বিশ্বের দরবারে তার যথাযােগ্য স্থান গ্রহণ করতে পারবে।
সভার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে অধ্যাপক বাসব সরকার বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামে জাতিধর্ম ও দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ সামিল হয়েছেন। বিশ্ব শান্তি সংসদ সারা বিশ্বের মানুষের সামনে এই সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে ও সকলকে সমবেত করতে ১৮ এপ্রিল দিবস উদযাপন করছে। তিনি বলেন, শান্তি সংসদ ভারত-পাক উপ-মহাদেশে এখন তিনটি স্বাধীনরাষ্ট্র (ভারতবর্ষ, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশ) শান্তিপূর্ণ ভাবে সহ-অবস্থান করবে বলে বিশ্বাস করে।
সদ্য ভিয়েতনাম প্রত্যাগত কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় বলেন, ভিয়েতনামের চার গুণ লােক বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছেন। ভিয়েতনামের লেখক লড়াই করে, লেখে এমনকি চাষও করে। এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ বাঙলার লেখকদের পক্ষ থেকে শ্রীমুখার্জী বাঙলা দেশের মুক্তিযুদ্ধের কাজ দিয়ে সাহায্য করার কথা ঘােষণা করেন।
লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেন- সহানুভূতি ও বক্তৃতা অনেক হয়েছে এখন চাই প্রকৃত সাহায্য।
বি, পি, ডি, ইউ, সির পক্ষ থেকে মহম্মদ ইলিয়াস বলেন, বাঙলাদেশের মানুষের প্রতি নির্মম অত্যাচার ইসলাম ধর্মের বিরােধী।
তিনি বাঙলাদেশের মানুষের সংগ্রামের সমর্থনে ঐক্যের প্রয়ােজনীয়তার কথা পুনর্ঘোষণা করে বলেন, ‘বিপ্লবের নামে ভ্রাতৃহত্যাকারীরা ঐ মুক্তিযুদ্ধেরও ক্ষতি করছে। এদের একদল “ইন্দিরা-ইয়াহিয়া এক হ্যায়” বলে ভারতে সংহতি আন্দোলনকে বিভক্ত করছে। আর একদল পরােক্ষ চীনের পথ অনুসরণ করছে।
অধ্যাপক নির্মল বসু বিশ্ব শান্তি সংসদের উদ্যোগকে অভিনন্দিত করে বলেন, মানুষ চাঁদা দেবে কিন্তু তা দিয়ে অস্ত্র হয় না। অস্ত্র দিতে হবে সরকরকে। তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বের প্রগতিশীল শক্তিগুলির কাছে আবেদন জানান।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক অমিয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক দক্ষিণারঞ্জন বসু ও সভাপতি শ্রীমুখার্জি, সভায় উপাচার্য ডঃ সত্যেন সেনের বক্তব্য পড়েন অধ্যাপক শান্তি সিংহ রায়।
কলকাতায় যুব মিছিল বাঙলাদেশ প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ কয়েকশ’ যুবকের একটি মিছিল কলকাতার রাজপথ পরিক্রমা করে। রাজভবনের পূর্ব দ্বারে পুলিস মিছিলের গতিরােধ করলে যুবকরা সেখানে ভারত সরকারের কর্তৃক বাঙলাদেশ সরকারকে অবিলম্বেস্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ জানান।
পূর্বাহ্নে রাজা সুবােধ মল্লিক স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত এক সংক্ষিপ্ত যুব সমাবেশ যুব নেতৃবৃন্দ বাঙলাদেশ বাসীদের উপর পাক-সৈন্যের এবং অত্যাচারের নিন্দা করেন।

সূত্র: কালান্তর, ১৯.৪.১৯৭১