You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.08 | বাঙলাদেশের সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে হবে- প্রধানমন্ত্রীর কাছে কমিউনিস্ট পার্টির স্মারকপত্র | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে হবে
প্রধানমন্ত্রীর কাছে কমিউনিস্ট পার্টির স্মারকপত্র

(নিজস্ব প্রতিনিধি)

নয়াদিল্লী, ৭ মে-প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এক স্মারকপত্র পেশ করেছে। লােকসভার সদস্য শ্রীইন্দ্রজিৎ গুপ্তের স্বাক্ষরিত এই স্মারকপত্রে বাংলাদেশের সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান হয়েছে। স্মারকপত্রের সংক্ষিপ্ত বয়ান :
প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু,
ভারত
মহােদয়া,
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে শ্রীতাজুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত “বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা আপনার কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সর্বপ্রকার ব্যাপক সাহায্যের সংগে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়া হলেই সেখানকার মুক্তিসংগ্রাম দ্রুত সাফল্য লাভ করবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, নতুন শক্তি সঞ্চয় করে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে পাকিস্তান সেনা বাহিনী কতকগুলি জেলা এবং মহকুমা শহর পুনর্দখল করেছে যেগুলি আগে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তি ফৌজ মুক্ত করেছিল। কিন্তু তাদের অবস্থা আদৌ সুদৃঢ় নয় এবং সেনাবাহিনীকে অ-সামরিক লােকদের বিরােধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং অনেক স্থানেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তারা এখনও প্রতিহত করছে। অবিলম্বে স্বীকৃতির রপ্রেক্ষিতে যদি এই মুহুর্তে মুক্তিযােদ্ধারা প্রয়ােজনীয় নৈতিক এবং সামরিক সাহায্য পায় তবে বর্তমান ও রিস্থিতি দ্রুততার সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে।
অন্যদিকে ব্যাপক সামরিক সাহায্য এবং স্বীকৃতি দিতে দেরি করা হলে ন্যায় সংগ্রামরত বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদেরই শুধু যে বিপদগ্রস্ত করা হবে তাই নয় আমাদের দেশেরও মারাত্মক ক্ষতি করা হবে। যুদ্ধের দরুণ ইতিমধ্যেই ২০ লক্ষ শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন এবং এই সংখ্যা দ্রুত হারে প্রতিদিনই বেড়ে যাচ্ছে, পরিণামে আমাদের বিশেষ করে পূর্ব ভারতের অর্থনীতির গুরুতর সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণভাবে অন্যান্য সমাজ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। বাঙলাদেশের ন্যায় সগ্রামরত মুক্তিযােদ্ধাদের দ্রুত চূড়ান্ত জয়লাভ অত্যন্ত জরুরী।
অন্যথায় ভারতে আমরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ব, সঙ্গে সঙ্গে কোষাগার থেকে অজস্র অর্থও ব্যয় হবে এবং পরিণামে গুরুতর ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা পশ্চিমবঙ্গে এবং পূর্ব ভারতের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়বে।
২। দ্বিতীয় বিষয় যার উপর আমরা গুরুত্ব দিতে চাই তাহল ইতিমধ্যেই ভারত সরকার মুক্তিসংগ্রামীদের এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন—এখন উচিত মুক্তি সংগ্রামীদের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার জন্য সর্ব প্রকারে ব্যবস্থা নেওয়া। এটি হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে শক্তিগুলি বাংলাদেশের সংগ্রাম এবং সরকারকে সমর্থন করতে চায় তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এই মুহূর্তে এটাই হল ইতিবাচক প্রয়ােজন এবং বাঙলা দেশের জনগণ মুক্তিফৌজের যুদ্ধের সামগ্রিক শক্তি তথা মনােবলকে এই ভাবেই বাড়াতে হবে।
৩। পরবর্তী বিষয়েও যার ওপর আমরা গুরুত্ব আরােপ করতে চাই তা হ’ল সীমান্তের ওপার থেকে আগত লক্ষ লক্ষ হিন্দু-মুসলমান শরণার্থী যারা পশ্চিমবংগ, আসাম এবং পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য স্থানে আসছেন তাদের ত্রাণের জন্য অত্যন্ত জরুরীভাবে ত্রাণ শিবির খুলেছেন, কিন্তু শতকরা দশজন শরণার্থী এই সব শিবিরে স্থান পেয়েছেন। শরণার্থীদের বিরাট এক সংখ্যা খাদ্য ও আচ্ছাদানহীন অবস্থায় রয়েছেন। চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
এছাড়া আরও কতকগুলি গুরুতর সমস্যা রয়েছে। বিবেক বর্জিত চোরাকারবারীরা এইসব অসহায় লােকদের জিনিসপত্র হয় লুঠ করে নিচ্ছে নয়ত নামমাত্র দামে সেগুলি কিনে নিচ্ছে। এর মধ্যে গবাদি পশুও রয়েছে।
আমাদের পরামর্শ হল, ত্রাণকার্য তদারক করার জন্য মন্ত্রিমণ্ডলী একটি বিশেষ সাব-কমিটি গঠন করুন এবং একই সংগে পশ্চিম বংগ, আসাম ও পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হক।
৪। আমাদের সর্বশেষ বক্তব্য বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘােষণা করা পাকিস্তান রেডিও যেভাবে অ-বাঙালী বিরােধী এবং ভারত এই বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনে ইন্ধন যােগাচ্ছে বলে যে অবিরাম প্রচার চালাচ্ছে সে সম্পর্কে আকাশবাণীর পক্ষ থেকে বাংলা হিন্দি এবং উর্দুতে তার যথাযােগ্য প্রত্যুত্তর দেওয়া প্রয়ােজন।

সূত্র: কালান্তর, ৮.৫.১৯৭১