You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে ভারত সরকারের দ্বিধা কাটেনি
লােকসভায় শ্রীমতী গান্ধীর বক্তব্যের মর্মার্থ

নয়াদিল্লী, ২৬ মে-বাংলাদেশ সম্পর্কে আট ঘণ্টার লােকসভা বিতর্কের জবাবদানকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আজও স্বীকৃতিদান সম্পর্কে সদস্যদের সম্মিলিত আকাঙ্খ পূরণ করতে পারেন নি। আজও তিনি বলেছেন, আমরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাই না। দরকার হলেই ঝুঁকি নেব।” অথচ তাঁর দলের বিশিষ্ট সদস্য শ্রীদীনেশ সিং বলেছেন, ইতােমধ্যেই ভারত অনেকটা দেরী করে ফেলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে একটা জিনিস খুব সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি কি করে সেদিকে ভারত তাকিয়ে আছে।
ইউ এন আই-এর সংবাদে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা লােকসভায় বলেছেন, বাঙলাদেশে যে সঙ্কটজনক অধ্যায় সূচিত হয়েছে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা যাতে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয় ও বজায় থাকে তা দেখা বিদেশী দেশগুলির কর্তব্য। আর তা করতে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি খুব বিপজ্জনক।
শ্রীমতী গান্ধী বলেন, বাঙলাদেশে যা ঘটছে তা রাজনৈতিক বা অর্থনীতিক সমস্যা নয়। এ হচ্ছে সমগ্র অঞ্চলের মানুষের জীবনমরণ লড়াই। তিনি বলেন, একটি গােটা জাতিকে ধ্বংস করার সুপরিকল্পিত প্রয়াস থেকে আজকে বাঙলাদেশে এই পরিস্থিতির সম্ভব হচ্ছে। আর সেই গণহত্যার কার্যকারণ পরিণতিস্বরূপ হাজার পুরুষ নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে বা লাখাে লাখাে মানুষকে শরণার্থী করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শ্রীমতী আজ পুনর্বার বলেন, আমরা বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নটি প্রতিনিয়ত ভেবে দেখছি। এ ব্যাপারে বা অন্য ব্যাপারে আমরা যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করি না কেন তা স্বাধীনভাবেই বিচার বিবেচনা করে গ্রহণ করব। আমাদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত করব।
প্রধানমন্ত্রী সদস্যদের প্রতিশ্রুতি দেন, বাঙলাদেশের প্রশ্নে তিনি সব বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংযােগ রক্ষা করে চলবেন।
তিনি সদস্যদের বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচনে যে রায় প্রকাশিত হয়েছে গণতন্ত্রের এর চেয়ে কোন সুস্পষ্ট প্রকাশ হওয়া কি সম্ভব? তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অনেক গালিভরা বুলি শুনেছি। মিত্র দেশগুলি দাবি করেন, গণতন্ত্র বাঁচাবার জন্য নাকি তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নেমেছিলেন কিন্তু এখন তারা কোথায়?
তিনি বলেন, কোন কোন দেশ বাঙলাদেশের মানুষকে বিচ্ছিন্নতাকামী আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ পূর্বাঞ্চলে বাস করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যাধিক্যের কতকগুলি অধিকার আছে। আর পূর্বাঞ্চলের মানুষ যদি সেই অধিকারগুলাে বুঝে নিতে বিচ্ছিন্নতাকামী আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শুধু এ কারণেই ভারতে কঠোর মনােভাব প্রকাশিত হয় নি, বাঙলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনার ছাপ ভারতের অর্থনীতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এসে পড়েছে। এই হচ্ছে অবস্থার বাস্তব রূপায়ণ। এ কোন প্রচার নয়।
পূর্বাহ্নে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীদীনেশ সিং বলেন ভারত কোন ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করলে তবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলি বাঙলাদেশের ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত করবে। তিনি বলেন, অনেক দেরী হয়েছে। আর কালবিলম্ব না করে ভারত সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।
তিনি বলেন বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার পিছনে অনেকগুলি সাংবিধানিক ও বৈধ যুক্তি আছে।
পি এস পি শ্ৰীসমর গুহ বলেন বাঙলাদেশের ব্যাপারে ভারত সরকার ইতােমধ্যেই অনেক খানি জড়িয়ে পড়েছে। এখন সে দেশকে স্বীকৃতি দিলে অবস্থার গুণগত পরিবর্তন হবে।
নির্দল সদস্য শ্রীকৃষ্ণমেনন বলেন, একদিন করে স্বীকৃতি দিতে দেরী হচ্ছে বাঙলাদেশের পরিস্থিতিও জটিলতর হচ্ছে। শ্রীমেনন মনে করেন বাঙলাদেশের উপদ্রুত অবস্থার পিছনে যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি লুকিয়ে আছে তাদের রুখবার জন্যেও বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়ােজন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানে পুরােপুরি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার বৃটেন ও আমেরিকার ওপর চাপ সৃষ্টি করুন।
তিনি মনে করেন, সক্ষম শরণার্থীদের বাঙলাদেশে ফিরে গিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের নৈতিক সাহায্যদান করা উচিত।

সূত্র: কালান্তর, ২৭.৫.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!